Skip to main content

আমেরিকায় টিনটিন


সাধারণত টিনটিনের সে বইগুলোই বারবার পড়া হয় যে'গুলোতে ক্যাপ্টেন হ্যাডক আর প্রফেসর ক্যালকুলাসের জমজমাট উপস্থিতি রয়েছে৷ কাজেই বাদ পড়ে যায় শুরুর দিকের বইগুলো।
এ'বারে বেশ ডিসিপ্লিন নিয়েই শুরু করলাম 'টিনটিন ইন আমেরিকা' থেকে (ইন দ্য ল্যান্ড অফ সোভিয়েতসটাকে কিছুতেই যেন এই সিরিজের অংশ বলে মনে হয়না)। যেমনটা হয় আর কী; বরাতজোর আর দুঃসাহস মিশিয়ে জবরদস্ত টনিক। প্রতি দু'মাস অন্তর একবার করে পড়লেও 'আরিব্বাস' গোছের ব্যাপার মনে হবেই।
ভাবছি প্রতিটা বই পড়ে সেগুলোর নন-টিনটিন হাইলাইটগুলো (যা আমার মনে ধরেছে তা নোট করে রাখব)৷ এই বইতে যেমনঃ
১। তেলের খোঁজ আমেরিকান ব্যবসায়ীদের মাথা যে কী খতরনাক ভাবে ঘুরিয়ে দেয়, তার একটা absurd অথচ ট্র‍্যাজিক ছবি আঁকা আছে বইতে। তেলের খোঁজ পাওয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে তেল কোম্পানির লোকজন ছুটে এলো, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাঁদের অফিস বসে গেল, বিদেয় হল ওখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা আর পরের দিন দেখা গেল সেখানেই রয়েছে এক মস্ত শশব্যস্ত শহর। হাইক্লাস ডিলাগ্র‍্যান্ডি, ডীপ পুঁদিচ্চচেরি।
২। শার্লক হোমসের 'ডিডাকশন'-ক্ষমতা অনুকরণ করে কম গোয়েন্দাকাহিনী লেখা হয়নি৷ হয়ত সে সমস্ত গোয়েন্দাদের নিয়ে মস্করা করেই হার্জ সাহেব এক দুর্দান্ত হোটেল-গোয়েন্দার ছবি এঁকেছেন৷ ভদ্রলোকের ডিডাকশনগুলো যেমন ভুলভাল, তাঁর কনফিডেন্স-লেভেল ততটাই আকাশ ছোঁয়া। সে গোয়েন্দার গপ্প পড়ে দমফাটানো হাসির খপ্পরে পড়তে হল বটে, কিন্তু নিজেদের ফেসবুক কমেন্ট্রির সঙ্গে ভদ্রলোকের ডিডাকশন প্রসেসের খানিকটা মিল আছে দেখে কিছুটা লজ্জাও পেলাম।
৩। বইয়ে এসেছে মব-লিঞ্চিং প্রসঙ্গ৷ তৌবা। আর ইয়ে, রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা এবং অটোমোবাইল সেক্টরের ফাঁপরে পড়ার গল্প। তৌবা তৌবা। না না, অ্যার্জে মোটেও কাউকে খোঁটা দিয়ে কিছু লিখতে চাননি, আমাদের মনই কুচুটে হয়ে গেছে। কিন্তু এ'সব পড়ে ফিকফিকিয়ে হাসা যায়, ফিচফিচিয়ে সামান্য কাঁদলেও কারুর কিছু বলার নেই।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু