Thursday, November 14, 2019

চপশ্রেষ্ঠ

- এইয্যে চপ-দাদা, শুনছেন?
- কী চাই?
- চপের দোকান চালাচ্ছেন। আলপিনের বাক্স বা টুথপেস্ট চাই কী করে বলুন দেখি।
- কোন চপ চাই?
- কত রকমের চপ ভাজেন আপনি?
- অনলি আলু।
- তবে আর জিজ্ঞেস করা কেন।
- টু মেক দ্য কাস্টোমার ফীল ইম্পর্ট্যান্ট।
- আচ্ছা বেশ, আমায় আলুর চপই দিন।
- 'টা?
- এই..দু'টো।
- তার বেশি নয়?
- দুটোই ভালো। আপনি আমায় ওই দুটোই দিন।
- ভেবে দেখুন ভালো করে।
- ভেবে দেখব?
- দেখবেন না? দু'টো চপ আর বারোটা চপ কি এক? এক টিপ নুন আর এক বস্তা নুন কি এক?
- আমার দরকার ওই একটা টিপ নুন..থুড়ি...দু'টো চপ।
- দুটো আলুর চপের দাম কিন্তু আট টাকা।
- বারোটা হলে কত?
- ওই। বারো ইন্টু চার। আটচল্লিশ।
- পার চপ রেট তো একই রইল। বাল্ক ডিসকাউন্ট যখন কিছু নেই, তখন দুটোর বদলে বারোটা নেব কেন?
- দুটোর বদলে বারোটা নেওয়ার কোনো মানেই হয় না। তা, গরম চপ চাই না ঠাণ্ডা?
- ঠাণ্ডা চপ কেউ সেধে চায় নাকি?
- ইনএফিশিয়েন্ট এমএলএও তো চাইনি। তবু মালটাকে আমিই ভোট দিয়ে এনেছি। কিছুই বলা যায় না, বুঝলেন। সে যাকগে, চপের ডেজায়ারড টেম্পারেচারের ওপর নির্ভর করছে কত তাড়াতাড়ি আপনি আপনার অর্ডারের দু'টো চপ পাবেন।
- ওহ বুঝেছি। ঠাণ্ডা চপে আপত্তি না থাকলে আপনি এখুনি আমায় দিয়ে দেবেন, ইমিডিয়েট।ডেলিভারি। আবার গরমাগরম চপ চাইলে আপনি ভাজতে বসবেন এবং তা'তে বেশি সময় লাগবে।
- হল না। গরম চপ তাড়াতাড়ি পাবেন, ঠাণ্ডা চপ পেতে দেরী হবে।
- কী'রকম?
- বেসন গোলা আছে, আলু মাখা আছে। গরম চপ চাইলেই টুক করে ভেজে দেব। কিন্তু স্টকে কিস্যু নেই। তবে আপনি ঠাণ্ডা চপ চাইলে আপনাকে নিরাশ করব না। গীতা না আনন্দবাজার; কোথাও কোনো একটা কেউকেটা পইপই করে বলেছেন যে গ্রাহকই ভগবান। কাজেই আপনি ঠাণ্ডা চপ চাইলে আমি চপ ভেজে পনেরো মিনিট টেবিল ফ্যানের সামনে রেখে, ঠাণ্ডা করে; তবে আপনাকে দেব।
- ইয়ে। গরম দুটো চপই ভালো, বুঝলেন। স্বাদে ভালো প্লাস সময়ের সাশ্রয়।
- অ। তা, চপ ভাজার সময় আপনি কি দাঁড়িয়ে থাকবেন না বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করবেন?
- মা, আপনার দোকানে বেঞ্চি আছে বুঝি? ভিতরে রাখা আছে? তা'হলে না হয় ওই দু'মিনিট বসেই থাকব'খন। নামিয়ে দিন বেঞ্চিখানা।
- বেঞ্চি? আমার দোকানে তো বেঞ্চি নেই।
- মা। আপনিই তো জিজ্ঞেস করলেন যে চপ ভাজার সময় আমি দাঁড়িয়ে থাকব না বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করব।
- কাস্টোমার প্রেফারেন্স বুঝতে পারাটা খুব জরুরী। আপনি চাইলেন রুলটানা খাতা আর আমি গছালাম পেতলের ঘটি; তা'হলেই গণ্ডগোল।
- গণ্ডগোল?
- গণ্ডগোল নয়? আপনি চাইলেন ক্ষীরকদম দোকানি দিলো চাউমিন। আপনি চাইলেন বঙ্গলক্ষ্মী বিড়ি; পেলেন দুলালের তালমিছরি। আপনি চাইলেন বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করে পাওয়া গরমাগরম এক জোড়া আলুর চপ অথচ শেষে দেখা গেল আপনার কপালে জুটেছে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে পাওয়া গরমাগরম এক জোড়া আলুর চপ৷ দু'টো এক হল?
- এক নয়..না?
- পলিটিক্স আর মর্নিংওয়াক কি এক? ঋত্বিক ঘটক আর জন ওয়াটসনে কি কোনো ফারাক নেই?
- বটেই তো। কোথায় বেঞ্চিতে বসে থেকে গরম আলুরচপ পাওয়া আর কোথায় দাঁড়িয়ে হদ্দ হওয়া।
- তবে আর বলছি কী। জন্যেই কাস্টোমার দোরগোড়ায় এলেই পাপী প্রফিটমেকারদের মত হুঠ করে প্রডাকশনে ঝাঁপিয়ে না পড়ে আগে তাঁদের একটু বাজিয়ে দেখি। এই দেখুন না, কাগের ঠ্যাং চেয়ে বগের ঠ্যাং পেতেন; সেই স্ক্যান্ড্যালটা কাটানো গেল। আপনা কতগুলো টাকা বেঁচে গেল বলুন তো? আর 'দিকে আমার আবার আজকাল বিকেলের ঘুমের প্রতি মায়াটা বড্ড বেড়েছে, চৌকি ছেড়ে কড়াইমুখো হওয়ার গিলোটিন যন্ত্রণাটাও এড়ানো গেল। এই উইন-উইন স্ট্র‍্যাটেজিতেই তো সমাজের প্রগতি আর ব্যবসার উন্নতি। তাই না? 'বারে আসুন৷

No comments: