- এতক্ষণে আসার সময় হল হে
রাখহরি?
- বৃষ্টি দেখেছেন চক্কোত্তিদা? ক্যাটস অ্যান্ড ডগস। আপনার অ্যাসিস্ট্যান্টটিকে
একটু বলুন দেখি এক কাপ দার্জিলিং সাপ্লাই দিতে। আমার আবার শুগারলেস।
- কলিংবেল শুনেই সে
ইন্সট্রাকশন চলে গিয়েছে শিবুর কাছে।
- আগের দিন পেঁয়াজিগুলো বড্ড
কড়া করে ফেলেছিল। আজকে একটু কেয়ারফুলি ভাজতে বলবেন প্লীজ।
- আজ করলা স্পেশাল ফ্রাই।
- করলা?
- অবহেলা কোরো না ভাই। করলার
যে এমন ট্রান্সফর্মেশন হতে পারে সে'টা
কামড় না বসিয়ে টের পাবে না। তিল, চালবাটা আর দু'চারটে সিক্রেট ইনগ্রেডিয়েন্ট মিলিয়ে...আমার স্পেশাল
রেসিপি।
- যা হোক। শিবুকে বেগুনীর কথা
বলে দিতে হয়। করলা যদি বাই চান্স মুখ থুবড়ে পড়ে?
- চান্স নেই। তবে বেগুনীতে
কারুর কোনওদিন ক্ষতি হয়েছে বলে শুনিনি । সে ব্যবস্থা করা যাবে। যাক গে, এ'বার
আসল মালটা বের করো দেখি বাবা রাখহরি।
- এত ইম্পেশেন্স নিয়ে আপনি যে
কী করে রেসের মাঠে নার্ভ ধরে রাখেন চক্কোত্তিদা।
- আরে ফটোফিনিশে পঞ্চাশ হাজার
ফসকে গেছিল এইটিট্যুতে। তা'তেও টেন্স হইনি। পঞ্চাশ
হাজারের আজকের দিনে ভ্যালু ভেবেছ? ক্যালিফোর্নিয়া ক্রোম শেষ
মুহূর্তে চোক না করলে আজ আমায় লুঙ্গি ফতুয়া পরে সোদপুরের ফ্ল্যাটে বসে থাকতে হত
না। যাক গে, আমায় ইমপেশেন্ট ভেবো না
রাখহরি। এ'বারে জিনিসটা বের করো।
- এই যে।
- এ'টা?
- ব্যাগটা খুলেই দেখুন না।
- খুললাম। এই...এই...ডিবেতে
আছে?
- আজ্ঞে।
- এই?
- স্ট্রেট ফ্রম তিব্বত।
- দেখতে তো হোমিওপাতির দানা
মনে হচ্ছে। অবশ্য হলদেটে রঙ।
- খান পঞ্চাশেক বড়ি আছে। ও'তেই আপনার চলে যাবে।
- এই বড়িই স্বয়ং দালাই লামা
হন্যে হয়ে খুঁজেছেন? কিন্তু পাননি?
- আলবাত।
- অথচ তুমি পেলে?
- আপনি এত অবিশ্বাসী কেন বলুন
তো চক্কোত্তিদা?
- টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড নিচ্ছ
ভাই রাখহরি। টাকাটা কম নয়।
- অ্যাডভান্স তো মাত্র পাঁচ
হাজার দিয়েছেন। পনেরোর পোস্ট ডেটেড চেক। কাজ না হলে চেক আটকে দেবেন। মিটে গেল।
- পাঁচটা তাহলে ভোগে? এ বড়ি কাজে না লাগলে?
- আপনি একটা নেগেটিভিটির ডিপো। আমি কি মাদুলির
সেলসম্যান? যে আজ আছি আর কাল নেই?
- একটা কথা বলো, এ বড়ি টেস্ট করে দেখেছে তুমি?
- না। আমার হাইটের ভয় আছে, জানেন তো। আমি যখন কলেজে তখন মেজজ্যাঠা
নিকোবারে একটা কন্ট্রাক্টরির কাজ করত। আন্দামান ঘুরে যাওয়ার জন্য আমায় প্লেনের
টিকিট কেটে দেবে বলে ঝুলোঝুলি; আন্দামান দেখার লোভ থাকলেও
প্লেনে উঠতে রিফিউজ করেছিলাম। শেষে গিয়েছিলাম জাহাজে। দার্জিলিং পর্যন্ত এড়িয়ে চলি, অলটিচিউডের বাড়াবাড়ি আমার ধাতে সয় না। কাজেই এই
বড়ি খেতে যাওয়ার কোনও মানেই হয় না।
- তাহলে কাজ যে দেবেই সে'টা এত নিশ্চিত হলে কী করে?
- কারণ আমি মহান জামইয়াংকে
দেখেছি। যার আবিষ্কার এই বড়ি। তিনি নিজে এ বড়ি খেয়ে ডেমনস্ট্রেশন দিয়েছিলেন। সেই
জামইয়াং যার টিকির দেখা স্বয়ং দালাই লামাও পাননি।
- তুমি কোনও দিন তিব্বত গেছ
বলে তো...।
- জামইয়াং কি শশীবাবু? শ্যামবাজারের বাইরে যার খোঁজ পাওয়া যাবে না? আরে জামইয়াংকে বেঁধে রাখবেন তিব্বতের মধ্যে? শুনে রাখুন, জামইয়াংয়ের
সঙ্গে আমার প্রথম দেখা মৌলালির কাছে। সে এক লম্বা গল্প। যাক গে। এই রইল বড়ির ডিবে।
শিবুকে ডাকুন দেখি। চা না পেলে চলছে না আর।
***
তিন দিন হয়ে গেল সিলিং থেকে নামা হয়নি চক্রবর্তীবাবুর। একটা
মাত্র বড়িতেই এই। তাও ভালো বড়িটা বাড়ির বাইরে গিয়ে খাননি, নয়তো এতক্ষণে ভাসতে ভাসতে বঙ্গোপসাগরের ওপর
গিয়ে পড়তে হত। বে অফ বেঙ্গল
পুরীতে বাদাম চিবুতে চিবুতে ভালো লাগে, ফর্ম্যাট
পালটে কেমন লাগবে বলা মুশকিল।
সিলিং ফ্যানের ব্লেডগুলোকে সেন্টার টেবিলের মত ব্যবহার করতে
হচ্ছে, শিবু মই বেয়ে উঠে সে'খানে চা খাবারদাবার রাখছে আর নামিয়ে আনছে।
রাখহরি এর মধ্যে একদিন দেখা করে বাকি টাকার জন্য তাগাদা দিয়ে গেছে। সেই জানালে যে
জামিয়াংয়ের হিসেব বলছে যে বড়ির প্রভাব কাটতে আরও দিন দুই লাগবে।
মনটা বেশ চনমনে লাগছিল চক্রবর্তীবাবুর। সিলিংয়ে বসে বসেই নেমন্তন্নের
লিস্টটা ফাইনাল করে ফেললেন তিনি।
প্রমোশনের নামে প্রহসনওলা বস।
অকারণ হেনস্থা করা সহকর্মীগুলো, বিশেষ করে সমাদ্দারের ব্যাটা।
দেশের বাড়ির বিধুবাবু, অকারণে
মামলা করে দু’বিঘে হাতিয়ে নিলেন ভদ্রলোক।
মধু মাছওলা এন্তার ঠকিয়েছে গত কুড়ি বছর ধরে। হেস্তনেস্ত
হওয়া দরকার।
প্রতিবেশী কমল শিকদার, রোজ খবরের কাগজ নিয়ে আর ফেরত দেওয়ার
নাম নেই।
কালনার মেজপিসি, সেই দশ বছর ধরে বলছেন পুকুরের মাছ পাঠিয়ে
দেবেন। কিন্তু আদতে লবডঙ্কা।
এমন আরও জনা পঞ্চাশেক। পাড়ার ক্লাবের মাঠ ভাড়া করে বিশাল
আয়োজন হবে। শামিয়ানা থাকবে না। সমস্ত আপদের দলকে ভুঁড়িভোজ খাওয়ানোর অছিলায় উড়িয়ে
দেবেন। স্রেফ উড়িয়ে দেবেন। সাত দিন ধরে এঁরা উড়বে। কেউ পৌঁছবে ভ্ল্যাডিভস্টক তো
কেউ জাফনা। কেউ হয়ত প্রশান্ত মহাসাগরে তলিয়ে যাবে।
যাক গে।
একটা বদলার মত বদলা হবে।
***
-
চক্কোত্তিদা! আপনি...আপনি পাগল হলেন নাকি? কলার
ছাড়ুন আমার!
-
রাখহরি! আমার সঙ্গে চালাকি নয় বাছাধন। আমার
সঙ্গে চালাকি নয়। বারো ক্লাস পর্যন্ত নরেনবাবুর কাছে কুস্তি শিখেছি। আমার সঙ্গে
চুক্কি চলবে না।
-
আরে হয়েছেটা কী?
-
ওই ডিবের বড়িগুলো। সব ফাঁকি। অকাজের। ইউসলেস।
-
মানে? দিব্যি তো আপনি সাত দিন ভেসে রইলেন। আমি
নিজে গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করে এলাম। কলার ছাড়ুন!
-
শাট আপ! ওই একটা বড়িই কাজের ছিল। বাকি সব
ফাঁপা! অকাজের। কেউ উড়ল না। প্রত্যেকটা করলা ফ্রাইতে একটা করে বড়ি দেওয়া ছিল। সবাই
খেলে, কিন্তু কেউ ভেসে গেল না।
-
কী? কেউ ভেসে গেল না মানে? ও বড়ি আপনি অন্যদের
খাওয়াতে গেছেন?
-
আমার বড়ি আমি যাকে খুশি খাওয়াব! কিন্তু বড়ি কাজ
করবে না কেন?
-
আরে! বড়ি অর্ডার নেওয়ার সময় আমি আপনার থেকে
আধার কার্ডের জেরক্স নিয়েছিলাম ভুলে গেলেন?
-
তা’তে কী?
-
ওই বড়িগুলো আপনার আধার নম্বরের সঙ্গে লিঙ্ক করা
যে চক্কোত্তিবাবু! অন্য কেউ খেলে কাজ করবে কেন?।
-
যাহ্, সাপও মরল না। এ’দিকে বিস্বাদ বড়ি মিশিয়ে
আমার করলা ফ্রাইয়ের স্পেশাল রেসিপিও জনতার কাছে তিরস্কৃত হল। ছিঃ ছিঃ ছিঃ! এ আমি
কী করলাম হে রাখহরি। এ আমি কী করলাম!
Comments