Skip to main content

বালিশবাবুর অফিসে - ৪

- কী ব্যাপার বালিশেন্দ্রবাবু? এদ্দিন পর এ শর্মাকে হঠাৎ অফিসে ডাকার প্রয়োজন পড়ল কেন?

- বসুন।

- সময় কম। কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যালার্ম বাজবে, আমায় বেরোতে হবে।

- ব্যাপারটা সিরিয়াস।

- আপনার বয়স এক বছর। আপনার সিরিয়াসনেসের ম্যাক্সিমাম লেভেল হচ্ছে মেঝে না চেটে হামাগুড়ি দেওয়া। আমি, অন দ্যা আদারহ্যান্ড, একটা সংসার বয়ে বেড়াচ্ছি। সামনে পুজোর কেনাকাটি। কতটা প্রেশারে আছি জানেন?

- এই আপনি। আপনার প্রেশার বলতে মনে পড়ে পুজোর বাজার। গ্লোবাল ওয়ার্মিং নয়, ইকনমির ঝাড় খাওয়া নয়, পরমাণু বোমার স্টকপাইলিং নয়, আপনার চিন্তা আপনাকে পুজোর বাজার ম্যানেজ করতে হবে। পিতা কতটা অদূরদর্শী হলে পুজোর চাপ নিয়ে হন্যে হতে পারেন কিন্তু নিজের ছেলের জন্য একটা থার্ডক্লাস গ্রহ রেখে যেতে কোনও হেসিটেশন নেই।

- থামুন, কে বলেছে আমি সচেতন নই? পরিবেশ রক্ষা নিয়ে আমি ক্লাস নাইনে এস্যে লিখেছিলাম।

- কিন্তু ধেড়ে বয়সে এসে গুলিয়ে ফেলেছেন।

- কে বলেছে গুলিয়ে ফেলেছি?

- দেখুন, মাইরি বলছি।  মুখ খোলাবেন না।

- এ অফিসের বাইরে মুখ খুললে তো আবোলতাবোল ছাড়া কিছু বেরোয় না। যা বলার বলে ফেলুন।

- প্লাস্টিক ছড়ানোই ধরুন না। যে'ভাবে আপনি চারদিকে প্লাস্টিক ছড়িয়ে যাচ্ছেন তা'তে আর যাই হোক পরিবেশ নিয়ে জ্ঞান ঝাড়া আপনাকে মানায় না। বিশেষত এরপর যখন সরকার কোরাপ্ট বিরোধী নুইসেন্স বলে গালভরা গপ্প ঝাড়েন তখন আমার দুঃখ হয় এই ভেবে যে বাবার রেজিস্ট্রশন লাইফলং ভ্যালিড।

- আমি দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে প্লাস্টিক ছড়িয়েছি? যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা? একটা এগজ্যাম্পেল শুনলে নিজের নাম পালটে দেব।

- বেশ, গত শনিবার গড়িয়াহাট বাজারের সামনে চা খেয়ে প্লাস্টিকের কাপটা দিব্যি বেওয়ারিশ  ছড়িয়ে দিলেন। অথচ দু'পা এগোলেই ডাস্টবিন ছিল। তারপর গত সপ্তাহে হাওড়া স্টেশনে...।

- আমার তাড়া আছে। কী কাজ তাড়াতাড়ি বলুন।

- বেশ। তা যে কথা বলার জন্য আপনাকে ডাকা, বুঝলেন কুবলাইবাবু...।

- কুবলাইবাবু? কুবলাই কে?

- ওহ। নাম পালটে দেওয়ার কথাটা তাহলে সিরিয়াসলি বলেন নি।

- আমি আসি।

- আরে বসুন বসুন। মাইল্ড ঠাট্টা করছিলাম। উ সারকাজমে বিষ নাই।

- সারকাজম? মাইরি? তেরো মাস বয়সে।

- লেটস জাস্ট সে, আমার বাপের ভাগ্যি যে আমি সারকাজম বোধটা বাপের থেকে পাইনি। সে যাক গে, যা বলার জন্য ডাকা...।

- হ্যাঁ, বলে ফেলুন।

- বলছিলাম যে, ইয়ে, আপনারা কি উন্মাদ?

- আমরা?

- আপনি। আপনার মিসেস...। বুড়ো বুড়িগুলো।

- মা বলুন। আপনার মিসেস আবার কী। আর বুড়োবুড়ি? দাদান, দিম্মা...।

- ওই হলো। আপনার ডেটায় বড় অস্বস্তি কুবলাইবাবু। যাক গে। উত্তর দিন।

- আমরা উন্মাদ কেন হতে যাব? আপনি উন্মাদ। আপনার চোদ্দ গুষ্টি উন্মাদ।

- সে সন্দেহ আমারও হচ্ছে।

- এ প্রশ্নে করার মানে?

- আমার খেলনাগুলো নিয়ে আপনারা এমন পাগলামি করেন কেন?

- কী পাগলামি করা হয়েছে?

- নিত্যনতুন খেলনা আসছে, হরেক রকম সাইজের। হরেক রকম আকারের। কী আনন্দ হয়। কিন্তু সেগুলো আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই খেলনাগুলো ফেলে দেওয়ার কোনও মানে হয়?

- খেলনা ফেলে দেওয়া হয়?

- আনার সঙ্গে সঙ্গেই। অমন দুরন্ত সব কাগজের আর কার্ডবোর্ড বাক্সের খেলনাগুলো ফেলে দিয়ে খেলনাগুলোর ভিতরে রাখা বিপজ্জনক সব প্লাস্টিক টিন লোহালক্কড়ের জঞ্জালগুলো যত্ন করে সাজিয়ে রাখা হয়। সে বিশ্রী জঞ্জালগুলো আবার থেকে থেকে নড়েচড়ে ওঠে, ভয়ানক সব আওয়াজ করে। এ'রকম বদ্ধ পাগলামোর জন্য আপনাদের শোকজ করছি। আপনাদের উত্তর ট্রিপ্লিকেটে আমার অফিসে জমা দেবেন আগামী সাত দিনের মধ্যে আর আর সে উত্তরে সন্তুষ্ট না হলে  আমি কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব!

( সে যাত্রা অ্যালার্মের আচমকা ঝনঝনানিতে রক্ষা পেয়েছিলেন শ্রী শ্রী কুবলাই মুখোপাধ্যায়)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু