Skip to main content

ভাজাভুজি

- এতক্ষণে আসার সময় হল হে রাখহরি?

- বৃষ্টি দেখেছেন চক্কোত্তিদা? ক্যাটস অ্যান্ড ডগস। আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট শিবু বাবাজীবনকে একটু বলুন দেখি এক কাপ দার্জিলিং সাপ্লাই দিতে। আমারটায় আবার শুগারফ্রী।

- কলিংবেল শুনেই সে ইন্সট্রাকশন চলে গিয়েছে শিবুর কাছে।

- আগের দিন পেঁয়াজিগুলো বড্ড কড়া করে ফেলেছিল। আজকে একটু কেয়ারফুলি ভাজতে বলবেন প্লীজ।

- আজ করলা স্পেশ্যাল ফ্রাই।

- করলা?

- অবহেলা কোরো না ভাই। করলার যে এমন ট্রান্সফর্মেশন হতে পারে সে'টা কামড় না বসিয়ে টের পাবে না। তিল, চালবাটা আর দু'চারটে সিক্রেট ইনগ্রেডিয়েন্ট মিলিয়ে...আমার স্পেশ্যাল রেসিপী আর শিবুর রান্নার হাতের কামাল।

- যা হোক। শিবুকে বেগুনীর কথাও বলে দিতে হয়। করলা যদি বাই চান্স মুখ থুবড়ে পড়ে? 

- চান্স নেই। তবে বেগুনীতে কারুর কোনওদিন ক্ষতি হয়েছে বলে শুনিনি । সে ব্যবস্থা করা যাবে। যাক গে, এ'বারে গুছিয়ে বসো দেখি।

- চক্কোত্তিদা, আজ দিনটা বড় ভালো।

- শাঁসালো কাউকে জোটালে নাকি?

- বড়বাজারের ভুতোড়িয়া। ফ্যামিলির চার ভাইয়ের নামে চারটে পলিসি গছানো গেলো বেশ। মোটা প্রিমিয়াম। আমার এ কোয়ার্টারে আর চাপ রইল না।

- এত বড় একটা ব্যাপার, তাও খালি হাতে এলে হে রাখহরি?

- হরিহরের দোকান থেকে ডিমের ডেভিল আনার প্ল্যান ছিল চক্কোত্তিদা। কিন্তু অ্যাইসা বৃষ্টি...।

- বৃষ্টিকে অবহেলা করছ ভায়া?

- অবহেলা নয়। তবে কলকাতায় থেকে বৃষ্টি পোয়েটিক আবেগটাও টলারেট করা যায় না। আপনি জানেন পার্ক সার্কাসের কী অবস্থা আজ? আর দিন দশেক এমন বৃষ্টি চললে সে'খানে জাল ফেললে ইলিশ উঠবে। যা হোক, শিবুকে বলুন চা দিয়ে যেতে...।

- আর বাজে সময় নষ্ট নয়। টেবিলে এসো। একার কনসেন্ট্রেশনটা ব্যাপারটা মজবুত হচ্ছে না।

- ভিসিয়াস সাইকেল চক্কোত্তিদা। চা ছাড়া কনসেন্ট্রেট করতে পারছি না...আবার ও'দিকে...।

- কনসেন্ট্রেট করতে না পারলে  চা জুটবে না...হে হে হে হে...। এসো এসো ভায়া। চেয়ারটা টেনে নাও।

- বেশ। এ'বার শুরু করুন। ইয়ে, আপনার আগের রাঁধুনি বিপ্রদাসের চেয়ে এ ব্যাটা শিবু কিন্তু অনেক ভালো।

- ভালো হবে না কেন? বিপ্রদাসের মৃত্যু পাতি তিন দিনের জ্বরে, মিডিয়াম ছাড়া সে নামবে কেন? ওকে নামিয়ে নিজেরই হ্যাপা বাড়ত।

- শিবু বোধ হয় ট্রেনে কাটা, না?

- ডাউন কাটোয়া, উত্তরপাড়ার কাছে। এক্কেবারে ছটফটে স্টেট! মিডিয়াম টিডিয়ামের ধার ধারে না, একটু আদর করে ডাকলে নিজেই লাফিয়ে চলে আসে। হে হে হে। আর ওর রান্না হাতটাও জম্পেশ ভায়া। আজ করলা ফ্রাইটা চেখেই দেখ না।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু