Skip to main content

বালিশবাবুর অফিসে - ৫

- এ কী! আপনি?
- কেন? আপনার ডাক না এলে আপনার অফিসে আসা বারণ নাকি বালিশবাবু?
- মতলবটা কী বলে ফেলুন। 
- মতলব আবার কী ভাষা!
- ধান্দা! কী ধান্দায় এসেছেন শুনি? 
- ঈশ! মতলব। ধান্দা। প্রয়োজন বলতে পারেন না? 
- ঝেড়ে কাশুন। আমার অনেক কাজ।
- অনেক কাজ?
- আপনার মিসেসের...।
- ইউ মীন আপনার মায়ের...।
- বাহান্ন তিপ্পান্ন। দ্যাট ইজ ওকে। দিন দুই হয়ে গেল আপনার মিসেসের ড্রেসিংটেবিলটা তছনছ করা হয়নি। কুইক। বলে ফেলুন যা বলার।
- তা'তে মনে পড়ল, টিভির রিমোটটা কোথায় আছে আপনি জানেন?
- টিভি আমি চালাই?
- না তা নয়। এমনি র‍্যান্ডমলি জিজ্ঞেস করে নিলাম।
- এ'টা জিজ্ঞেস করতেই অফিস পর্যন্ত ছুটে এসেছেন?
- নাহ্। একটা জরুরী কথা ছিল।
- টিভির চেয়েও বেশি জরুরী? ব্যাপার কী ?
- বলছিলাম যে...। এই যে আপনার ভাষা...।
- ভুলে যাচ্ছেন যে অফিসের বাইরে আমি কথা বলতে পারি না। তত থথ বব ভভ করে শর্টহহ্যান্ডে কথা বলতে হয়। অবিশ্যি আপনার মিসেসের কমিউনিকেট করতে কোনও অসুবিধে হয় না।
- আই মীন...আপনি মূলত যে ভাষাতে কথা বলতে শিখবেন বা লিখবেন; সে'টা হল বাংলা।
- পর্তুগীজ হলেও তো কিছু এসে যেত না। সেরিল্যাকটুকু চেয়ে নিতে পারলেই তো ল্যাঠা চুকে যাওয়ার কথা।
- ইয়ে, সেরিল্যাক চাওয়ার বাইরেও ভাষার দরকার আছে...।
- পটির পর ইয়ে সাফ করার জন্য কাউকে ডাকতে, তাই তো? হ্যাঁ। নোটেড। এর বাইরে ভাষাফাষা দিয়ে কী হবে। ও চিন্তা করবেন না। বাংলা, জুলু; যা কিছু দিয়ে চালিয়ে নেব।
- হোয়াট ননসেন্স। বাংলা না শিখে যাবেন কোথায়?
- আপনি বাংলা শিখেই বা কোথায় গেছেন স্যার? সেই তো 'এ'টা তুই ভালো নিভিয়েছিস' বা "তোমার কথার আন্দাজটা খুব সুন্দর' ঝেড়ে দিন গুজরান করছেন।
- ইয়ে, সেজন্যেই এ'বারে আপনার কাছে আসা আপনি এ'বার আবোলতাবোল জিবেরিশ বন্ধ করে নিজের মনের কথা বাংলায় বলতে শুরু করবেন। সে বয়স আপনার হয়ে গেছে। এক বছর দু'মাস! অলমোস্ট দেয়ার। কাজেই কী কোয়ালিটির বাংলা পিক করছেন সে’টা খুব জরুরী।
- মনের কথা বাংলায়?
- ঠিক। মনের মধ্যে হয়ত আপনি বলে চলেছেন 'হুসবাএ ফস্ক্রহ থথত্থথ'। সে'টাই বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় "আমার খুব হিসু পেয়েছে"।
- হলো না। অনুবাদ করলে দাঁড়াবে আমার বহুত জোরসে হিসু লেগেছে।
- বহুত জোরসে লেগেছে? শুনুন বালিশবাবু, ব্যাপারটা সিরিয়াস।  হিসু হয়ে গেলে বলতে হবে হিসু করে ফেলেছি।
- হিসু করে চুকেছি।
- চুকেছি?ধ্যাত্তোর। শুনুন। আপনাকে ওয়ার্ন করে দেওয়ার জন্য এই অসময়ে ছুটে আসা।
- কীসের ওয়ার্নিং?
- এই যে বাংলাটা আপনাকে মন দিয়ে শিখতে হবে।
- ঠিক আছে। মন লাগিয়ে শিখব। আর একবার আচ্ছা সে শিখে গেলে কোনও চিন্তা নেই...।
- আচ্ছা সে? মন লাগিয়ে?
- হুঁ।
- জল আছে বালিশবাবু?
- কেন? শরীর মস্ত্ নেই?
- মস্ত্? তা ঠিক নেই। মস্ত চিন্তা মাথায়।
- ইয়ে মিস্টার মুখর্জি...।
- কী? কিছু বলবেন?
-  বাজারের খবর আপনার বানানবোধে নাকি ফলিডল মেশানো আছে?
-  সে দুই একটা হয়ত...।
- সে দু'একটায় যে'দিন শুধার আনবেন, সে'দিন না হয় আমি বাংলা নিয়ে আমার দায়িত্ব নেভাব? জিনকে সম্মান করা মানুষের উন্নতির আধার।
- কানে বাংলার নামে কী সব ঢুকলো বালিশবাবু...।
- জ্ঞান কিছু টাইম বাদে দেবেন। এখন আসুন। স্টার প্লাসে মাসির সিরিয়ালে নতুন সীজনের শুরুয়াদ হবে। আমিও দেখি। এ’বার সোফাঘুম থেকে একটু উঠুন। উত্তরের জানালার কার্নিশে টিভির রিমোট পড়ে আছে। সে'টা চটপট নিয়ে আসুন দেখি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু