Skip to main content

স্পেসশিপ


স্পেসশিপের এক কোণে নিজের বাঙ্কারে শুয়ে নোটবুকে তেলাপিয়া মাছের মোমোর রেসীপি লিখে রাখছিলেন ধনঞ্জয় সমাদ্দার। বিপদসংকুল পথ, কখন কী ঘটে যায় কোনও ঠিক নেই। তিনি না থাকলেও, এ নোটবুক যোগ্য কারুর হাতে একদিন না একদিন পড়বেই।


- মানিব্যাগটা আপনার?
- না।
- আই সী। তাহলে বোধ হয় যে ভদ্রলোক আগের স্টপেজে হুড়মুড়িয়ে নামলেন তাঁর। এই সীটেই পেলাম। গড়িয়াহাট থেকে তেলাপিয়া নিয়ে উঠেছিলাম, সাউথসিটি পেরিয়ে তবে জায়গা পেলাম। বসতে গিয়ে দেখি এই...।
- অ। আপনার হাতের প্যাকেটে মাছ! তাই ভোঁটকা একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম। তা যেমন করে হুড়মুড়িয়ে নামলেন সে ভদ্রলোক, মানিব্যাগের আর দোষ কী! সেই হাওড়ায় উঠে থেকে ঘুমোচ্ছিলেন, কন্ডাক্টরের হাঁকে ঘুম ভাঙতেই ছুট। এমন ভাবে ছুট দিলেন যে আমার হাতের মোমোর বাক্সটাকে চেপ্টে দিয়ে গেলেন। ছোটমেয়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছিলাম। যত্তসব।
- মোমো? সুবাস পাচ্ছিলাম বটে। তা এই মানিব্যাগ খুলে দেখব? ঠিকানা ফোননম্বর কিছু পাওয়া যায় কিনা?
- সে'টাই তো স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্র‍্যাক্টিস।
- এইত্যো। ভিজিটিং কার্ড। ভদ্রলোক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এজেন্ট। ধনঞ্জয় সমাদ্দার।
- তা'হলে আর কী। কল করুন।


নিকষ কালো আকশের গায়ে অসংখ্য হীরের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে যেন, পৃথিবী থেকে এমন ঝকঝকে আকাশ দেখতে পাওয়া যায় না। নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে ছিলেন ধনঞ্জয়বাবু। স্পেসস্যুটের পিঠে রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডারের অ্যালার্ম বেজেছে কিছুক্ষণ আগেই; "টেন পার্সেন্ট অক্সিজেন লেফট"। কিছুক্ষণের মধ্যে স্পেসক্রাফটে ফেরত যেতে হবে। তবু এ আকাশের দিকে থেকে চোখ ফেরাতে মন চায় না। এই অচেনা গ্রহের চারদিকে জমাট হয়ে থাকা নারকীয় নিস্তব্ধতা ভুলিয়ে দেয় ওই আকাশের মন ভোলানো ঝিকমিক।

এমন সময় ওয়্যারলেস সক্রিয় হয় উঠল;

"হিউসটন কলিং মার্স রোভার্স, হিউসটন কলিং মার্স রোভার্স। স্যাম্যাড্ডার, ডু ইউ কপি?"

"কপিং", সমাদ্দার বুঝলেন; এমার্জেন্সি।

"সমাদ্দারবাবু, আপনার কি মানিব্যাগ হারিয়েছে"?

Comments

Anonymous said…
Just awesome...
Fresh...

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু