Skip to main content

স্মাইল জেনারেটর

মামুলি সব জিনিসকে নামের তুকতাকে দুরন্ত করে উপহার দেওয়াটা বুবাইয়ের ছোটমামার একটা পুরনো অভ্যাস। মামার ভাষায় ‘একটু ক্লাস মিশিয়ে দিতে পারলেই, কিপটেমোতেও ঝলক আনা সম্ভব’।
ব্যালকনিতে ছোট্ট দু’টো সাদা টব রাখা আছে। দু’টোতেই নয়নতারা। মামা গত জন্মদিনে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন “এই নে, এক জোড়া স্মাইল জেনারেটর দিলাম, যখনই মেজাজে কিছু গড়বড় মনে হবে, এ’দের কাছে এসে সাবমিট করবি”। পয়লা বৈশাখে দিয়েছিলেন কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথ থেকে পঞ্চাশ টাকায় কেনা পুজোবার্ষিকী আনন্দমেলা; “এই নে। তখনও পুজো সংখ্যা জ্যান্ত ছিল। কই মাছের মত বঁটির নীচেও ল্যাটরপ্যাটর করার দম ছিল। অন্ধ্রের চালানি কেরোসিন মাখানো চীজ তো রইলই। আগে এ’টা পড়ে দ্যাখ”। গত পুজোর সময় দিয়েছিলেন ডাংগুলি যে’টা বাবা কোনও দিন বুবাইকে ব্যবহার করতে দেয়নি চোট লাগার ভয়ে। বাবা বলেন “মন্টুটা একটা ওয়ার্থলেস, অন্তত একটা চাকরী যদি মন দিয়ে করতে পারত”। মন্টু ছোটমামার ডাকনাম, বুবাইয়ের ডাকনাম যেমন বুবাই। ছোটমামা বাবাকে আড়ালে ট্রিগোনোমেট্রি বলে ডাকেন।
ছোটমামা অনেক চাকরী ধরেছেন ছেড়েছেন। বাবার জোগাড় করে দেওয়া দু’টো চাকরী সহ। একটা বাবার উকিল সমাদ্দারবাবুর অফিসে হিসেব দেখার। অন্যটা বাবার এক ক্লায়েন্টের ফ্যাক্টরিতে লেজারবাবুর কাজ। প্রথমটায় মামা তিন মাস টিকে ছিল, পরেরটায় তিন দিন। দ্বিতীয় চাকরীটা ছাড়ার পর মামা যখন বাড়িতে এসেছিলেন তখন বাবা মামাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন “রাস্কেল ছোকরা, ব্যাড ইনফ্লুয়েন্স অন বুবাই” বলে। দিন চারেক পর অবশ্য নিজে গিয়ে ডেকে এনেছিলেন ছোটমামাকে, কারণ মামা বাবার তাসের আড্ডার পার্টনার।
“তোর বাবা মানুষটা মন্দ না, নেহাত নিয়ম মেনে মেনে লোকটা নুন তেল ঝাল ছাড়া মাখা আলুসেদ্ধর মত হয়ে গেছে, তাই বলে তো কাউকে ডিসমিস করে দেওয়া যায় না”, মন্টুমামা এ কথাও বলেছেন কতবার।
ছোটমামার দেওয়া নয়নতারার গাছ দু’টো সত্যি বেশ মন ভালো করা, রোজ ফুলে ঢাকা থাকে। রোজ বিকেলে বুবাই এসে ওদের গায়ে অল্প জল ছিটিয়ে যায়।


ছোটমামা শহর ছেড়েছেন চার মাস মত হয়েছে, দুম করে শেষে সুরাটের একটা মিলে চাকরী নিলেন। “প্রেম করাটা ট্যাক্সিং হয়ে গেল রে বুবাই”।
বাবা ব্রীজ ছেড়েছেন তিন মাস। ব্যালকনিতে বেতের চেয়ার আর টেবিল পেতেছেন, নয়নতারা ঘেঁষে; ঝাড়ে দেড় ঘণ্টা পেশেন্স খেলেন রোজ বিকেলে।
ছোটমামার বিয়েতে অবশ্য খুব মজা হয়েছিল। বিয়ে হয়েছিল মামাদের দেশের বাড়ি বাঁকুড়ায়। বাবা আর বুবাই গিয়ে দিন দশেক ছিল। এত লম্বা ছুটি বাবা কতদিন যে নেয়নি। কলকাতা থেকে বাবা ব্যালকনিত থেকে নয়নতারার একটা টব বয়ে নিয়ে গেছিল। টবের গায়ে একটা চিরকুট।
চিরকুটে বাবা যত্ন করে লিখেছিল;
“ভায়া ওয়ার্থলেস,
ভালো থেকো, বৌটিকে ভালো রেখো। মেয়েটা বড় ভালো, তোমায় মানুষ করার চেষ্টা করেছে। তোমার দিদি যাওয়ার আগে বলে গেছিল ওর হাতের বালাজোড়া তোমার বৌকে দিতে। সে সুদিন যে আদৌ আসবে সে’টা ভাবিনি। যা হোক, আমার আর বুবাইয়ের তরফ থেকেও কিছু দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি।
বাপ ব্যাটার জন্য একটা স্মাইল জেনারেটরেই যথেষ্ট। এ’টা রইলো তোমার জন্য। 
ইতি
ট্রিগোনোমেট্রি চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়”।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু