Sunday, July 2, 2017

স্পেসশিপ


স্পেসশিপের এক কোণে নিজের বাঙ্কারে শুয়ে নোটবুকে তেলাপিয়া মাছের মোমোর রেসীপি লিখে রাখছিলেন ধনঞ্জয় সমাদ্দার। বিপদসংকুল পথ, কখন কী ঘটে যায় কোনও ঠিক নেই। তিনি না থাকলেও, এ নোটবুক যোগ্য কারুর হাতে একদিন না একদিন পড়বেই।


- মানিব্যাগটা আপনার?
- না।
- আই সী। তাহলে বোধ হয় যে ভদ্রলোক আগের স্টপেজে হুড়মুড়িয়ে নামলেন তাঁর। এই সীটেই পেলাম। গড়িয়াহাট থেকে তেলাপিয়া নিয়ে উঠেছিলাম, সাউথসিটি পেরিয়ে তবে জায়গা পেলাম। বসতে গিয়ে দেখি এই...।
- অ। আপনার হাতের প্যাকেটে মাছ! তাই ভোঁটকা একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম। তা যেমন করে হুড়মুড়িয়ে নামলেন সে ভদ্রলোক, মানিব্যাগের আর দোষ কী! সেই হাওড়ায় উঠে থেকে ঘুমোচ্ছিলেন, কন্ডাক্টরের হাঁকে ঘুম ভাঙতেই ছুট। এমন ভাবে ছুট দিলেন যে আমার হাতের মোমোর বাক্সটাকে চেপ্টে দিয়ে গেলেন। ছোটমেয়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছিলাম। যত্তসব।
- মোমো? সুবাস পাচ্ছিলাম বটে। তা এই মানিব্যাগ খুলে দেখব? ঠিকানা ফোননম্বর কিছু পাওয়া যায় কিনা?
- সে'টাই তো স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্র‍্যাক্টিস।
- এইত্যো। ভিজিটিং কার্ড। ভদ্রলোক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এজেন্ট। ধনঞ্জয় সমাদ্দার।
- তা'হলে আর কী। কল করুন।


নিকষ কালো আকশের গায়ে অসংখ্য হীরের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে যেন, পৃথিবী থেকে এমন ঝকঝকে আকাশ দেখতে পাওয়া যায় না। নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে ছিলেন ধনঞ্জয়বাবু। স্পেসস্যুটের পিঠে রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডারের অ্যালার্ম বেজেছে কিছুক্ষণ আগেই; "টেন পার্সেন্ট অক্সিজেন লেফট"। কিছুক্ষণের মধ্যে স্পেসক্রাফটে ফেরত যেতে হবে। তবু এ আকাশের দিকে থেকে চোখ ফেরাতে মন চায় না। এই অচেনা গ্রহের চারদিকে জমাট হয়ে থাকা নারকীয় নিস্তব্ধতা ভুলিয়ে দেয় ওই আকাশের মন ভোলানো ঝিকমিক।

এমন সময় ওয়্যারলেস সক্রিয় হয় উঠল;

"হিউসটন কলিং মার্স রোভার্স, হিউসটন কলিং মার্স রোভার্স। স্যাম্যাড্ডার, ডু ইউ কপি?"

"কপিং", সমাদ্দার বুঝলেন; এমার্জেন্সি।

"সমাদ্দারবাবু, আপনার কি মানিব্যাগ হারিয়েছে"?

1 comment:

Anonymous said...

Just awesome...
Fresh...