Wednesday, December 30, 2015

শাসমলবাবুর নিউ ইয়ার্স পার্টি

-   টু থাউজ্যান্ড ফিফটিন ইউসেন বোল্টের স্পীডে বেরিয়ে গেল।
-   গতবার ফোর্টিনকে সুপারসনিক জেটের সাথে তুলনা করেছিলেন।
-   করেছিলাম না কি?
-   আসুন।
-   সিগারেট?
-   কেন, গোল্ডফ্লেক চলে না?
-   না মানে। সামনের বছর থেকে একটু ইয়ের কথা ভাবছিলাম।
-   ছেড়ে দেওয়ার কথা?
-   না। রিস্ট্রেইন। মেয়ে বলছিল।
-   তা আজ তো তিরিশ। এখনও দেড় দিন আছে।
-   দিন একটা।
-   আসুন।
-   বছর শেষের বাজার। অফিসে আর কতক্ষণ?
-   বিকেলের রিপোর্টটা পাঠিয়েই ভাবছি বেরোব...আপনি?
-   বড়সাহেব যতক্ষণ আছেন, ততক্ষণ গতি নেই।
-   নিউ ইয়ারের প্ল্যান?
-   মা সাত দিন ধরে হসপিটালে। ছেলের জ্বর। মেয়ের বয়ফ্রেণ্ড। বৌয়ের মেজাজ সপ্তমে। মাই লিট্‌ল ক্লাউড নাইন। আমি প্ল্যান করি না। আমায় প্ল্যান অফার করা হয়, আমি এক্সেকিউশনে থাকে। হাফ ইঞ্চি হাঁটতে বললে হাফ ইঞ্চি হাঁটব, কাশতে বারণ করে কাশব না।  আপনার বুঝি একটু ইয়ে টিয়ের প্ল্যান আছে?
-   ইয়ে বলতে মদ্যপানের কথা বলছেন নাকি?
-   জানুয়ারির ওয়েদার। মাঝরাত, আপনি শাসমলবাবু ব্যাচেলর মানুষ। শৌখিন বলা চলে। অ্যান্টিক বা পেইন্টিং জমানোর শখ এ যুগে ক’জন ম্যানেজ করতে পারে মশাই? তার ওপর আপনার  ইয়ার দোস্তের অভাব নেই। আপনার তো নিউ উইক পার্টি হওয়া উচিৎ।
-   জমায়েত একটা আছে কাল রাত্রে। ড্রয়িং রুমে একটা গালিচা পেতে গোল হয়ে বসে আড্ডা। সামান্য মদও থাকছে। রাম। হোয়াইট নয়। তবে ফুর্তির মেজাজ হয়ত তেমন ভাবে নেই।
-   জুয়াটুয়া নাকি?
-   না।
-   ইয়ে, তবে?
-   ভূত।
-   ভূত?
-   প্ল্যানচেটের আসর। আমাদের একটা অকাল্ট গ্রুপ আছে। উত্তর কলকাতায় চোরাগোপ্তা পপুলারিটি আছে আমাদের। তো আমরাই সবাই মিলে একটু মেহফিল টেহ্‌ফিল বসাই আর কী।–
-   প্ল্যানচেট? আত্মা নামানো?
-   চলতি ভাষায় তেমনই একটা কিছু ধরে নিন। আসবেন নাকী সান্যালবাবু?
-   থ্রিলিং। কিন্তু আমার আবার ও’সবে একটু গা শিরশির আছে। কী হল। ও মশাই। অমন ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?ও শাসমলবাবু।
-   আমাদের ব্যাপারটা ঠিক প্ল্যানচেটের মত ইউনিডাইমেনশনাল নয় বুঝলেন। অকল্ট সায়েন্সে সময় নিয়ে খেলার কথাও লেখা আছে। অবশ্য প্ল্যানচেটটা ঠিকঠাক ম্যানেজ না করতে পারলে সে’জায়গায় যাওয়া যায় না।
-   গড়বড় হয়ে যাচ্ছে। আমি মশাই প্রিয়ায় সিনেমা দেখে ফুচকা খাওয়া মানুষ। বেণীমাধব কনসাল্ট না করে ক্যালক্যাটার বাইরে যাওয়া হয় না। এসব ভূত-টূত...অকল্ট, টাইম নিয়ে খেলা...আমার ধাতে সইবে না।
-   আপনি কী এখনও বুঝতে পারছেন না অনিমেষবাবু?
-   অমন...অমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন কেন! ও মশাই।
-   এখনও বুঝতে পারছেন না?
-   বোঝার আছেটা কী?
-   আপনার বসার জায়গাটা...নজরে আসছে?

অফিসঘরের দক্ষিণ কোণে অনিমেষবাবুর কাজের টেবিলটা। অনিমেষবাবু দাঁড়িয়ে ছিলেন অফিসের বারান্দার, সবাই সিগারেট খেতে বা খুচরো আড্ডা দিতে এখানেই এসে দাঁড়ায়। বারান্দা থেকে স্পষ্ট দেখা যায় অনিমেষবাবুর কাজের টেবিলটা। সেদিকে তাকাতেই অনিমেষবাবুর পেটের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে এলো। টেবিলের পাশে লোকের জটলা। বিশু পিওন থেকে বড়বাবু সবাই রয়েছে, এমন কী শাসমলবাবুও দাঁড়িয়ে; আর যাকে ঘিরে রয়েছে সকলে সে অনিমেষবাবু নিজে, টেবিলে উপুড় হয়ে শুয়ে – মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অনিমেষবাবু সে’টা স্পষ্ট দেখতে পেলেন। সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে একমাত্র শাসমলবাবু মুখ তুলে তার দিকে চাইলেন মনে হল। বাঁকা হাসিও ছুঁড়লেন নাকি শাসমলবাবু?  

অনিমেষবাবুর মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করেছিল ততক্ষণে, বহু কষ্টেও গলা দিয়ে আওয়াজ বের করা গেল না। সমস্ত কিছু চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে যাওয়ার আগে অনিমেষবাবু দেখতে পারছিলেন কী ভাবে অফিসঘরটা পালটে যাচ্ছে।
মোজায়েক মেঝে সরে যাচ্ছিল; তার বদলে ঠাণ্ডা মার্বেলের মেঝে চলে আসছিল যেন কী ভাবে। অফিসের আসবাব পালটে গিয়ে সমস্ত অ্যান্টিক মেজাজওলা মান্ধাতা আমলের জিনিসপত্র উদয় হচ্ছে তার চারিদিকে। অফিসের সব লোক, আওয়াজ গায়েব হয়ে যাচ্ছিল। আলো কমে আসছিল। ঘরের এক কোণে গালিচা পাতা, তাতে জনা পাঁচেক লোক বসে; তাদের সামনে মদের বোতল আর গেলাস। সম্ভবত রাম।
সমস্ত কালো আর নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ার আগে হাহাকারের মত বারবার অনিমেষবাবুর কানে একটাই বিকট প্রশ্ন গোঁত্তা খাচ্ছিল;
“এখনও কী বুঝতে পারছেন না অনিমেষবাবু?এখনও কী বুঝতে পারছেন না?”

4 comments:

Unknown said...

খুব ভালো লাগলো

Anonymous said...

awesome

Budhaditya said...

Bhai Tanmay ki Kore erokom ideas asey apnar? Khub bhalo lagchhe apnar lekha.

Atanu Dey said...

চমৎকার। সত্যজিৎ রায়ের ঘরানা বলা যেতে পারে। ভাষাটি মখমল, ক্লাইমাক্সটিও প্রথম শ্রেণীর। চালিয়ে যান।