Skip to main content

কনেক্টিং দ্য ডট্‌স

- অমল খাসনবিশ। নস্যি রঙের হাফ শার্ট। কালো প্যান্ট। পায়ে খাদিমের চটি। গোঁফ অযত্নে কাটা; ডাঁয়ে সামান্য বেশি লম্বা। মাথা ভর্তি কোঁকড়া সাদা কালো চুল। বাইফোকাল। বুক পকেটে লাল পকেট ডায়েরি। ডায়েরির ভাঁজে ট্রেনের মান্থলি; ভদ্রেশ্বর টু হাওড়া। বুকপকেটেই রাখা সিগারেটের প্যাকেট - গোল্ডফ্লেক; তিনটে পড়ে। প্যান্টের পকেটে নীল আধ ময়লা রুমাল আর শিপ মার্কা দেশলাই।
- ভেরি গুড। ছুরিটা?
- বুকের বাঁ'দিকের পাঁজর পেনিট্রেট করেছে। আন্দাজ এই ঘণ্টা দুয়েক আগে।
- বডিটা সেন্ট্রাল আভেনিউতে পেয়েছ তো?
- বত্রিশ বাই এ। তা ইয়ে, আপনি কি একবার এদিকে ঢুঁ মারবেন ইন্সপেক্টর সাহেব?
- অবভিয়াস ব্যাপারে মাথা গলানো ছেড়ে দিয়েছে বিজয় দারোগা।
- অবভিয়াস ব্যাপার স্যার?
- তুমি ব্রাইট অফিসার চন্দন। প্যাটার্ন চিনতে শেখ।
- মানে?
- গত সাতদিনে এই নিয়ে পাঁচ নম্বর খুন। ডট্‌স কনেক্ট কর।
- ড...ডট্‌স? নিলয় সমাজপতি, বরুণ সাহা...।
- হিন্ট দিচ্ছি। খুনের ভেন্যুগুলো কনেক্ট কর।
- ভবানীপুর, চেতলা...।
- বি মোর স্পেসিফিক।
- কীরকম স্যার?
- কী করে চলবে গুরু? এই বুদ্ধি নিয়ে পুলিশগিরি করবে কী করে চন্দন?
- সব ক'টা খুনই হয়েছে এলাকার সেরা মিষ্টির দোকানের আশেপাশে। টু বি মোর স্পেসিফিক; খুন হয়েছে এলাকার সেরা নলেন রসগোল্লা মেকারের আশেপাশে।
- কিন্তু খুন যারা হয়েছেন তাদের কারুর হাতেই মিষ্টির বাক্স ছিল না স্যার।
- গুড। তার মানে? মিষ্টির দোকানের পাশে সবাইকে পাওয়া গেল অথচ কারুর হাতে মিষ্টির বাক্স নেই।
- সবাই দোকানে দাঁড়িয়ে মিষ্টি খেয়েছিল?
- এগজ্যাক্টলি। এই তো মাথা খেলাচ্ছ বাবা চন্দন।
- তবু স্যার ডটগুলো...কনেক্ট করতে পারছি না...।
- আগের চারটে খুনের ব্যাপারে আমি তোমার আগেই খবর টবর নিয়ে রেখেছি। যারা খুন হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই রসগোল্লা খেয়েছে দোকানে দাঁড়িয়ে। গুড়ের। এই অমলবাবুর ব্যাপারে খবর নাও কাছের দোকানে। বত্রিশ বাই এ তো ? আধুনিক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার রয়েছে ওখানে। আড়াই কিলোমিটার রেডিয়াসে সেরা গুড়ের রসগোল্লা। আমি নিশ্চিত সেম প্যাটার্নে মার্ডার।
- আইব্বাস। রসগোল্লা খেয়েছে বলে খুন?
- খুন হওয়া প্রত্যেকের হাতের আঙুলের ডগা ল্যাবে টেস্ট করিয়েছি। সে খবর রাখ?
- রেজাল্ট পেয়েছেন কিছু স্যার?
- হাত ধোয়া সত্ত্বেও ডান হাতের তিন আঙ্গুলে রসগোল্লার রসের ট্রেস পাওয়া গেছে। বুড়ো, তর্জনী ও মধ্যমার ডগায়।
- তো?
- তো? ইট ইজ এভ্রিথিং।
- রসগোল্লার রসের ট্রেস তো আঙুলে থাকবেই।
- কোশ্চেন ইজ। দু'আঙ্গুলে রস লাগছে না তিন আঙুলে। সব খুন হওয়া বান্দারই তিন আঙুলের ডগায় রস। দু'আঙ্গুল হলে চিন্তার ব্যাপার হত; হিসেব গুলিয়ে এত। কিন্তু তিন আঙ্গুলে রস।
- মানে?
- মানে সক্কলে রসগোল্লার রস চিপে খেয়েছে। দু'আঙ্গুলে খেলে কনফিউসন হত; চিপেও খেতে পারে; উইথ রসও খেতে পারে। কিন্তু তিন আঙুল মানে শিওর কেস্‌।
- রসোগোল্লার রস চিপে খাওয়ায় মার্ডার স্যার?
- ভাব। ভাব। কনেক্ট দ্য ডট্‌স।

***

- কিছু বলবেন?
- না।
- না মানে? তখন থেকে পিছুপিছু আসছেন কেন?
- আপনার নামটা জানার ইচ্ছে ছিল।
- জেনে কী করবেন শুনি? আমি অমল। অমল খাসনবিশ। এখন ফলো করা বন্ধ করুন।
- আসলে এমন সুন্দর ভাবে আপনি রসগোল্লা খাচ্ছিলেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত তাই দেখছিলাম।
- কী মুশকিল।
- সে জন্যেই ফলো করছিলাম আর কী।
- আপনি কে বলুন তো?
- আমি। সম্পর্কে আপনার বাপ। শাহেনশা বলে ডাকতে পারেন।

**

অমলবাবুর দিকে হালকা একপেশে হাসিটি ভাসিয়ে দিয়েছি বিজয় দারোগা।

Comments

Unknown said…
শেষ লাইনে ওটা "দিয়েছিল" হবে না ?? ২২ শে শ্রাবণ এর গন্ধ পাওয়া যাইতেছে। লালমোহনের ভাষায় "বলেন কি মশাই ...একেবারে খু খু খুন"?? খুব ভাল লাগল ।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু