Skip to main content

বটু গোয়ন্দার দুই

জানালার ও পাশে তাকিয়ে মন উদাস হয়ে গেল বটু গোয়েন্দার।
ঘোলাটে স্ট্রীট লাইটের আলোয় মনোহর ফুচকাওলা ফুচকা খাওয়াচ্ছে কিন্তু সন্ধ্যার প্রাণ নেই।
থাকবে কী করে?
সন্ধ্যার টেম্পারেচার চব্বিশ। মিনিমাম এগারো ব্যাচ ফুচকা খেয়ে চলে গেলে ইতিমধ্যে অথচ ফুচকাম্যান মনোহরের কপালে ঘাম এক বিন্দুও নেই। অর্থাৎ আলু যথেষ্ট ভালো ভাবে মাখা হয়নি। হতে পারে না। 
বাতাসের ধোঁয়ার গন্ধে মনকেমন করা সুবাসটাও পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ আজ গন্ধরাজও বাদ।

শিল্পীদের ক্রিমিনাল হয়ে উঠতে দেখলে শিউরে ওঠেন বটু গোয়েন্দা। জাস্ট শিউরে ওঠেন।

"না ইন্সপেক্টর। আপনার সাসপেক্ট মিথ্যে কথা বলছে। গতকাল এখানে মেঘলা ভাব ছিল, বৃষ্টি না নামলেও মিহি ঠাণ্ডা হাওয়া চলেছে", একটা স্বদেশ বিড়ি ধরিয়ে জানান দিলেন বটু গোয়েন্দা, "কাজেই তিনি স্যান্ডো গেঞ্জি পড়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন সন্ধ্যেবেলা, সে থিওরি মানা যাচ্ছে না। ওনার গায়ে জামা বা ফতুয়া কিছু একটা ছিলই। সে'টা কোন এক কারণে তিনি রাস্তায় ফেলে এসেছেন। সম্ভবত রক্তের দাগ লেগেছিল বলে। এসে ফাঁপর বুঝে বাবু গরমের গল্প দিচ্ছেন"।
"কিন্তু বটূ বাবু", ইন্সপেক্টরের কপালে সন্দেহের বলিরেখা, "আপনি কী করে বলতে পারেন যে গতকাল মেঘলা ছিলই আর ঠাণ্ডা হাওয়াও চলেছে? উইটনেস্‌রা সবাই তো..."।
"উইটনেস্‌?", বটুর মিঠে হাসি, "হাসালেন দারোগাবাবু। গ্রামেগঞ্জে সামান্য ইনফ্লুয়েন্সে লোকে হাতির বিয়ের হয়ে সাক্ষী দিয়ে দেবে। শুনুন। মদন পাল, এ অঞ্চলের বেগুনী স্পেশ্যালিস্টের ডেইলি টার্নওভারের খবর রাখেন? আমি এসেই সে খবর নিয়েছি। আর বেগুনী ডাব্‌ল সেল হয়েছে গতকাল। এই মাত্র সেখান থেকে আসছি। বিটনুন চাইতে ব্যাটা বলে কী না শেষ। গতকাল এক্সপেক্টেশেনের তিনগুণ বেশি বেগুনী সেল হয়েছে। নুনের স্টক এখনও রিপ্লেনিশ করার সময় পায়নি ব্যাটা। এখনও বলবেন গতকাল মেঘ করেনি?"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু