Skip to main content

ওঁদের কথা

এ বয়সে আর হুড়মুড় সহ্য হয় না। ধড়াচূড়া খুলে কোন রকমে শরীরটা চেয়ার পর্যন্ত হেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে বসতে হল তাকে। 

একে এই পশমের ভারী কোট, তাতে কাঁধে বস্তাভরা এই প্যাকেট, সেই প্যাকেটের বোঝা। শখের বসে কী কাজই যে নিয়ে বসে আছেন! আবার স্লেজে না গেলেও নয়, কেতায় বাঁধবে। কিন্তু এদিকে বয়স তো কম হচ্ছে না। 

আয়নায় নিজেকে দেখে রীতিমত ঘাবড়ে যেতে হল, একদিনের ধকলেই চোখ বসে গেছে। পৃথিবী জুড়ে টইটই করে বেরানো কি মামুলি ব্যাপার? তাও আবার একদিনের মধ্যে। উফ! 

এর চেয়ে হেডমাস্টারি করা অনেক সহজ! 

- কিন্তু সহজ বললেই বা ছাড়ান পাওয়া যাচ্ছে কোথায় ডাম্বলডোর?  
- এই তোমার এক বাতিক হয়েছে বিবেক। যখন তখন হুট করে উদয় হয়ে পিলে চমকে দেওয়া। 
- বলি থকে গেলে চলবে কেন? ফি বছরে একবারটি বেরোও আনন্দধারা বইয়ে আসতে, তা নিয়েও এত টালবাহানা? না না। এ চলে না। 
- বলি বয়স হচ্ছে তো। আর কদ্দিন? আর কয়েকশো বছর না হয়ে মুখে রক্ত তুলে টেনেও দেব। কিন্তু তারপর? তারপর কী হবে? ক'হাজার বছর ধরে তো জোয়াল টানলাম। আর দেহ দিচ্ছে না। 
- একটা কাজও তো করলে পার। 
- কী কাজ?
- এই যে আনন্দ বিলি করার কাজ, কয়েক হাজার বছরের আনন্দ সমস্তটাই একবারে বিলিয়ে দিয়ে এলে হয় না? তারপর থাক তুমি হগওয়ার্ট আলো করে বছরে তিনশো পঁয়ষট্টি দিন। কেউ কিচ্ছুটি আর বলবে না। আমিও জ্বালাব না, পঁচিশে ডিসেম্বর এলো গো...লাল কোটখানা পর গো...আনন্দ বস্তা কাঁধে ফেলো গো...। 
- সমস্ত আনন্দ একবারে বিলিয়ে আসা? হাজার হাজার বছরের আনন্দ এক দিনে?
- এক দিনে ঠিক নয়। তবে একবার গিয়ে যদি তুমি সত্তর আশি বছর কাটিয়ে আসতে পার মানুষের মধ্যে হে ডাম্ব্‌লডোর, তাহলে তুমি পারবে যথেষ্ট আনন্দ রেখে  আসতে সেখেনে। তখন আর ফি বছর এত হ্যাঙ্গাম করে যাওয়ার দরকার পড়বে না। 
- সত্তর আশি বছর মানুষের মধ্যে থেকে হাজার হাজার বছরের জন্য আনন্দ ছড়িয়ে আসা? কোন জাদুতে সে কাজ হবে  হে? 
- কেন? কবিতার জাদুতে! সঙ্গীতের জাদুতে। 
- আমি পারব?
- তুমি না পারলে কে পারবে বাবু? 
- আশি বছর কাটিয়ে সে জাদু ছড়িয়ে এই স্যান্টাবাজির থেকে যদি লাইফলং ছুটি পাওয়া যায় হে বিবেক, তার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?
- বাহ! এই না হলে কথা। তা কবে যাবে? ছদ্মবেশই বা কেমন নেবে?
- ছদ্মবেশ আর যাই নিই না কেন, এই দাড়িটাকে ছাড়তে বলো না বিবেক। হেডমাস্টারি হোক কি স্যান্টাগিরি, এ দাড়ি ছাড়তে আমি কোনদিন পারিনি, পারার দরকারও দেখছি না। 
- বেশ। একটা কিছু ভেবে নেব। তা রওনা হচ্ছ কবে? আগামী পঁচিশে ডিসেম্বর? 
- হগওয়ার্টে ব্যবস্থা-ট্যাবস্থা করে যেতে খানিক সময় তো লাগবে। তবে পরের বছরের পঁচিশে ডিসেম্বরের অপেক্ষা করারও মানে হয় না। শুভস্য শীঘ্রম। 
- এই না হলে কথা। তা মানুষের দেশে নামবে কবে হে?
- পঁচিশেই। তবে ডিসেম্বরে নয়। আসছে বৈশাখে। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু