Skip to main content

রসগোল্লার রক্তে সিঁদুরের লজ্জা

(ছবিট দেখি ফেসবুকে শ্রী শুভদীপ সরকারের প্রোফাইলে, সেরা শিরোনামটির ব্যাকগ্রাউন্ড আন্দাজ করতে চাওয়ার এক ব্যর্থ চেষ্টা এইটা)  


- এ কেসে আর বিশেষ কিছু বোঝার নেই বটুবাবু! প্লেন কেস অফ হার্ট ফেলিওর।

- তাই নাকি ইন্সপেক্টর?

- আপনার সন্দেহ আছে?

- পোস্ট মর্টেম পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

- সেটা করাতেই হবে। বাট আই সি নো পয়েন্ট। 

- একবার লাশের বৌয়ের সাথে কথা বলা যায়?

- মিসেস্‌ সেন? ডেকে দিচ্ছি। তবে এ'সময়...বেশি চাপ যেন না হয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন। 

- অফ কোর্স।

**

- মিসেস্‌ সেন। আই অ্যাম রিয়েলি সরি। 

- বড় ভালো মানুষ ছিলেন। আমার সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল...আমার এবার কী হবে বটুবাবু? 

- একটা প্রশ্ন ছিল মিসেস্‌ সেন।

- বড় ভালো মানুষ ছিলেন।

- মিস্টার সেন রসগোল্লার রস চিপে খেতেন?

- না। কেন বলুন তো?

- তেমনই ভেবে ছিলাম। সেন বাবুর লাশের মুখে যে অমায়িক হাসি লেগে আছে; রসগোল্লার রস চিপে খাওয়া লোকের মুখের সেই প্রশান্তির হাসি থাকতেই পারে না।  যাক গে, আপনি বুঝি ডায়াবেটিক? 

- না না, আমার সে'সব নেই।

- রসগোল্লা ভালো লাগে না বুঝি?

- সত্যি কথা বলতে কী রসগোল্লা আমার খুব প্রিয়। খুব। আমাদের দু;জনেরই খুব প্রিয় ছিল। 

- কাল খেয়েছিলেন? 

- ইয়ে...না...মানে কাল ঠিক...।

- খুন করে কী পেলেন?

- হোয়াট নন-সেন্স!

- অকাট্য প্রমাণ ছাড়া আমি কথা বলি না মিসেস্‌ সেন। আপনি খুলে বললে ব্যাপারটা সুবিধে হয়। 

- বটুবাবু...।

- খুলে বলুন মিসেস্‌ সেন। উই মাইট হেল্প।

- বটুবাবু আমায় বাঁচান। 

- বলুন।

- অনিল এটা আমায় বলেনি। এতটা নিচ প্ল্যান ও করবে আমি ভাবিনি।

- অনিল?

- মিস্টার সেনের বিজনেস পার্টনার। 

- আর আপনার...ইয়ে...তাই তো?

- বিশ্বাস করুন। মিস্টার সেন খুব একটা সহজ মানুষ ছিলেন না। বিশ্বাস করুন, তাই বলে এমনটা...এমনটা আমি ভাবিনি।

- রসগোল্লাগুলো কি অনিলবাবুর পাঠানো?

- পাঠিয়ে আমায় বলেছিল আমি যেন না খাই। ভুলেও যেন না খাই। 

**

- কী খেল দেখালেন বটুবাবু? মিসেস্‌ সেন এমন তরতর করে সব উগরে দিলেন...। 

- ওই। কিছুটা মেপে আর কিছুটা ঝড়ে বক খেললাম। লেগে গেল। 

- কীরকম?

- লাশের পকেটে রুমালটা দেখেছেন?

- না মানে, খেয়াল করিনি। 

- খেয়াল করলে দেখতেন রুমালটা শ্লেষ্মার মাখামাখি। অর্থাৎ বেশ ব্যবহার হয়েছে, ভদ্রলোক সর্দিগর্মিতে জেরবার হচ্ছিলেন। অথচ এত ব্যবহারেও রুমালের ভাঁজ এক্কেবারে নিখুঁত। কী বুঝলেন?

- গুছিয়ে চলা মানুষ।

- করেক্ট। এবার ওর পাঞ্জাবিটা ভালো করে খেয়াল করেছেন?

- সেখানেও কিছু...? ধস্তাধস্তির ছাপ?

- মোর দ্যান দ্যাট। পাঞ্জাবির হাতায় বুকে রসগোল্লার রসের দাগ। রস চিপে উনি খান না প্লাস সাঙ্ঘাতিক গুছিয়ে চলা মানুষ। পাঞ্জাবিতে রস আসার কথাই নয়। যদি না তিনি রসগোল্লা মুখে দিয়ে বেসামাল হয়ে পড়তেন।

- পয়েন্ট। কিন্তু ইয়ে বটুবাবু। রসগোল্লা মুখে দিয়ে হার্ট অ্যাটাকও তো হতে পারত?

- চান্স খুবই মিনিমাল। অমৃত মুখে মানুষ মারা যায়? অবিশ্যি রসগোল্লার রস চিপে খেলে অবিশ্যি হাই রিস্ক থাকেই; সে শুকনো মাল ইজ পয়জন ইন স্পিরিট। তবে সে চিন্তাও দূর হয়ে গেল লাশ যে ঘরে পড়েছিল , সে ঘরে রাখা লোকনাথ বাবার ফটোটা দেখে।
- লোকনাথ বাবার ফটো? সেখানেও ক্লু? 

- ওই, ক্লু বলতে লোকনাথ বাবার সামনে ছোট প্লেটে দেওয়া নকুলদানা। 

- তো?

- সেই নকুলদানাগুলো ঘিরে পিঁপড়েদের বিশ্বযুদ্ধটি নজরে এসেছে? দেড় হাজার পিঁপড়ের বেশি হলে আশ্চর্য হব না। অত পিঁপড়ে যেখানে, সেখানে মিস্টার সেনের লাশের রস মাখা পাঞ্জাবির ধারে কাছে একটি পিঁপড়েও ঘুরঘুর করছে না। এই থেকেই কি স্পষ্ট নয়?

- আইব্বাস! রসগোল্লার রসে বিষ!

- ইয়েস। রসগোল্লার রসেই নিশ্চুপে মিশে আছে সেনবাবুর রক্ত আর তাতেই মিসেস্‌ সেনের সিঁথির সিঁদুর লজ্জায় ধুয়ে গেল।  স্যাড। এবার ওই অনিলবাবুকে গ্রিপে আনলেই আপনাদের কাজ শেষ। 

- বটুবাবু, আপনার ইয়ের কোন ইয়ে হয় না মশাই।

Comments

Sarthak said…
আপনারও ইয়ের কোন ইয়ে হয় না। দারুণ।
Unknown said…
আপনারও ইয়ের কোন ইয়ে হয় না মশাই।
Unknown said…
আপনারও ইয়ের কোন ইয়ে হয় না মশাই।
Unknown said…
botu baba apnake.._/\_
malabika said…
যাত্রার মালিক নাটকের নামের এইরকম ব্যাখ্যা দেখলে কিরকম মুখ করতো, তার প্রতিক্রিয়াই বা কেমন হত, জানতে ইচ্ছা করছে।

Mahasweta Ray said…
খিক খিক :) একেবারে সাদা-কালো যুগের গোয়েন্দা গপ্পো মনে পড়ে গেল :)
Unknown said…
Ore pocha...tui lekh tui lekh...porer bochor botu goyendar golpo anadomelate lekh....kakababu nei, fwluda nei, mitinmasi nei...nidenpokkhe botu thakuk.
Unknown said…
ফেবু তে রিপ্লাগ করুন মশাই। বাকিরা এ রসে বঞ্চিত থাকেন কেনো?

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু