Skip to main content

পুনর্জন্ম

- ঘুম ভাঙল পাবলো?

- আমি...আমি...কোথায়?

- ভারতবর্ষের কলকাতা শহরে।

- ভারতবর্ষ। আগেও যেন কখনও একবার...।

- সাঁয়ত্রিশ জন্ম আগে। বেনারস শহরে।

- ওহ! জন্ম। অনেক জন্ম। এখনও মুক্তি পাওয়া যায় নি, না?

- সবে বেয়াল্লিশ জন্ম কাটিয়েছ পাবলো, এই নিয়ে তেতাল্লিশ। আরও দুশো সাতান্ন জন্ম পেরলে তবে মুক্তি।

- আরও দু'শো...।

- সাতান্ন।

- আমায় বাঁচান ঈশ্বর। এ সুদীর্ঘ পথ পেরোনো আমার পক্ষে অসম্ভব।

- থামো। অসম্ভব আবার কী। প্রতিটি মানুষ এ পথ পেরিয়েই মুক্তি লাভ করে। আর তোমার তো কিস্‌মত রীতিমত ভালো যে শৈশব থেকে বার্ধক্যের জোয়াল তোমায় জন্মে জন্মে বইতে হয় না। আমার কল্যাণে তুমি প্রতিটি জন্মে সোজাসুজি যৌবনেই পদার্পণ করে চলেছ। আমি তোমায় রেখে চলেছি সংসার শৃঙ্খলের বাইরে। জনমের উদ্দেশ্য সাধন হলেই তোমার উত্তরণ সাধিত হচ্ছে পরজন্মে। এই ভাবে দুরন্ত গতিতে তোমার মানব পথ পেরিয়ে যাচ্ছে; তুমি বয়ে চলেছ মুক্তির দিকে। ক্লান্তি তোমায় মানায় না পাবলো...।

- পাবলো...।

- হুঁ, পাবলো। এ জন্মে তোমার নাম। তোমার ভাষা বাঙলা। আর পেশায় তুমি খুনি।

- খু...খুনি?

- টাকার বিনিময়ে কোতল করাই হচ্ছে তোমার পেশা।

- আহ:। ঈশ্বর, এ কেমন জন্মে বাঁধলে আমায়? খুন করব? মুক্তির পথ আরও অন্ধকারে ঢেকে যাবে না?

- নিজের কাজে মন দাও পাবলো। ভবিতব্য আমায় ভাবতে দাও। একটা খুন শুধু। এ জন্মে তোমার মোক্ষ সে'টুকুই। একটা খুনেই তোমার মুক্তি-সাধন।  পারলে আজকেই সে কাজ সেরে ফেল; এ জন্মের হিসেব এক দিনেই শেষ। মুক্তির একটা সিঁড়ি সহজেই পেরিয়ে যেতে পারবে।

- ও।

- ভাবছ কী? ওঠ, জাগো! আলস্যের সময় এটা নয় পাবলো।

- কাকে খুন করতে হবে?

- যাকে খুন করতে হবে তার নাম, ঠিকানা, ছবি আর অন্য বিশদ বিবরণ এই এনভেলপে পাবে। এইটা রিভলভার। চিন্তা করো না। রিভলভার চালাতে তোমার অসুবিধে হবে না; এ জন্মে তুমি সেভাবেই প্রস্তুত। এই একটা খুনই তোমার জীবনের মোক্ষ। এগিয়ে যাও। এই একটা খুনেই তোমার মুক্তি।

- বেশ।

- আর দেরী নয়। আজই কাজ হাসিল করে এসো।

**

- ঈশ্বর, কাজ মিটেছে।

- লাশ?

- ভাসিয়ে দিয়ে এসেছি। বাড়তি পাপে জড়িয়ে পড়লাম না তো? আমার মুক্তির কী হবে?

- আমি অভয় দিয়েছি তোমায়, তবুও চিন্তা কীসের?

- আগামী জন্মের দিকে আমার যাত্রাপথ কী ত্বরান্বিত করা যায় না ঈশ্বর?

- নিশ্চই যায় পাবলো, এই যে দু'টো বড়ি দেখছ- জলে গুলে খেয়ে নাও।

- খেয়ে নিলে?

- ইহজন্মের যন্ত্রণা ত্যাগ করে তুমি জেগে উঠবে আগামী জন্মের উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত হয়ে।

- আপনি? আপনি পাশে থাকবেন তো ঈশ্বর?

- অবশ্যই, আগামী জন্মে তোমার চক্ষু মেলার সঙ্গে সঙ্গেই আমি তোমার পাশে এসে দাঁড়াব। মোক্ষের পথ দেখিয়ে তোমায় আমিই এগিয়ে নিয়ে যাব।

- মুক্তির পথে নিয়ে যান ঈশ্বর। নিয়ে যান।

- ভক্তির পথে থাক পাবলো, বিশ্বাসের পথে থাক; বিচলিত হয়ো না। তোমার মুক্তি আসবেই। বড়িগুলো খেয়ে ফেল।

**

- হ্যালো।

-  ঈশ্বরপ্রসাদ সিং?

- বলছি।

- আমি চ্যাটার্জি অ্যান্ড কোম্পানির বড় চ্যাটার্জি বলছি। ঝুনঝুনওলার অ্যাসাইনমেন্টের ব্যাপারে গ্রীন সিগন্যাল রইল। কাজ যেন আগামীকালের মধ্যে হয়ে যায়।

- লাশ চাই?

- লাশ নিয়ে আমি কী করব?  কুচিকুচি করে কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিন, পুড়িয়ে দিন। নান অফ মাই বিজনেস। ঝুনঝুনওলা শুড বি আউট অফ ইকুয়েশন বাই টুমরো ইভনিং। ক্লিয়ার?

- ক্লিয়ার? ফীজ্‌টা?

- অ্যাজ এগ্রীড্‌। কাজ যেন ঝুলে না যায়; সেন্ড দ্য রাইট ম্যান।

- আমার সেরা লোকই যাবে মিস্টার চ্যাটার্জি।

- গুড।

**

- ডাক্তার...।

- বলুন ঈশ্বরপ্রসাদ।

- কাল সকালের মধ্যে পাবলোর ঘুম ভাঙ্গা চাই। নতুন কাজ এসেছে।

- পাবলোর শরীর এত ড্রাগ নাও নিতে পারে আর ঈশ্বরজী।

- ডু অ্যাজ ইউ আর আস্ক্‌ড টু ডু ডাক্তার। বেশি কথা আজও আমার ভালো লাগে না।

**

- ঘুম ভাঙল পাবলো?

- আমি...আমি...কোথায়?

- ভারতবর্ষের কলকাতা শহরে।

- ভারতবর্ষ। আগেও যেন কখনও একবার...।

- আটত্রিশ জন্ম আগে। বেনারস শহরে।

- ওহ! জন্ম। অনেক জন্ম। এখনও মুক্তি পাওয়া যায় নি, না?

- সবে তেতাল্লিশ জন্ম কাটিয়েছ পাবলো, এই নিয়ে চুয়াল্লিশ। আরও দুইশো ছাপ্পান্ন জন্ম পেরলে তবে মুক্তি।

Comments

somdeb said…
...
- ঘুম ভাঙলো পাবলো?

- অামি, অামি কোথায়?

- চিলির পারাল শহরে।

- চিলি? অাগে যেন কখনও একবার...।

- না, এই প্রথম।

- স্পেন, অামি কি স্পেনে ছিলাম?

- ছিলে। এখন তুমি চিলিতে। অ্যাদ্দিন রঙ-তুলি-ক্যানভাসে যে খেল দেখিয়েছো, সেইটে এইবার দেখাবে কলম-কাগজে, কবিতা লিখে। অার ভাল কথা, নাম নিয়ে চিন্তা করো না, ইয়ান নামক এক চেক কবি ছিলেন, তাঁর নামটাই নিয়ে নাও, মানাবে বেশ।
Ingenious! Ekdom , ekdom ingenious! :D

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু