পুজো ইজ আ হিউজ কড়াই। তাতে কেউ ইলিশ ভাপা রাঁধছে কেউ আবার তাতে জল গরম করে সময় নষ্ট করছে। আবার কষা মাংস রাঁধব বললেই তো আর লেগে পড়া যায় না। ডুবো তেল চাই, কচি পাঁঠার মাংস চাই। পুজো জুড়ে হাফ অফিসের অলিভ অয়েল লেগে থাকলে এই পুজোর কড়াইয়ে সায়েবি গোছের দেখনাই মাশরুম ফ্রাই ছাড়া আর কিছু করা সম্ভব নয়।
কিন্তু। এ পুজোর কড়াই জুড়ে এককালে মনমোহিনী বিরিয়ানি রান্না হয়েছে। ফি বছর। হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষা শেষ হত এই পুজোর দিন কয়েক আগে। শেষ হওয়া মাত্র মা আলমারির আড়াল থেকে মুক্তি দিতেন মানিকজোড়কে; শুকতারা ও আনন্দমেলা পুজোসংখ্যা। ঝাড়া তিন দিনে আনন্দমেলা শেষ হত; শুকতারা নামত দু'দিনে। ওসব শিউলি ফুটল গো, কাশ মাথা দোলালো গো গোছের সেন্টিমেন্ট শহরে বেমানান ছিল। আমার শিউলি-কাশফুল কম্বো ছিলেন দাদু। দাদু ওয়াজ দ্য মটন ইন মাই পুজো বিরিয়ানি। অনেক কারণে। যেমন;
১। দাদু কার্তুজ সাপ্লাই করতেন। ইয়ে, ক্যাপ বন্দুকের ক্যাপ। আনলিমিটেড। বাড়ি মাথায় উঠত। যখন দুপুরে দাদু নিজে কয়েক রিল বন্দুকে ভরে মেজাজ খুশ করতেন।
২। দাদু রিয়ালিটিটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। প্যান্ডেল হপিং ইজ আ সাবজেক্ট অফ হুজুগ। আসলি পুজো মেজাজ রয়েছে পাড়ার বারোয়ারি তলার প্যান্ডেলে। খাটনি কম, ফুর্তির রিটার্ন বেশি।
৩। দাদু ভোগ-মুখী করে গড়ে তুলেছিলেন আমায়। ইন আদার ওয়ার্ডস;প্রসাদের ফলমূল, চালকলা মাখা থেকে খিচুড়ি লাবড়া; একটা স্পেলও বাদ দেওয়া চলবে না। দরকারে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান বাদ যেত ভোগ মিস্ না করার জন্য।
৪। পুজো মণ্ডপের প্রেমাইসেসে দাদু শিখিয়েছিলেন অলিম্পিকিও মেজাজ; মেডেল জেতার চেয়েও জরুরী হচ্ছে অংশগ্রহণ। হাঁড়িভাঙ্গা থেকে মোমবাতি জ্বালানো থেকে রূপায়ন (গো অ্যাজ ইউ লাইক); বাদ যেতনা কোনটাই। ট্যালেন্ট কম ছিল, কনসোলেশনও জুটতো না। তবে স্টেজ ফ্রাইট মেরে দেওয়া গেছিল। একটানা না জিতেও হ্যা-হ্যা করে পার্টিসিপেট করতে পারা; দাদু সেই স্পিরিট ইঞ্জেক্ট করে দিয়েছিলেন।
৫। দাদু ভালো দর্শক হওয়ার এটিকেট শেখাতেন এই পাড়ার পুজোর ইভেন্টগুলোয়। থিয়েটার, জলসা, ধুনুচি নাচ; দাদুর সহজ পলিসি ছিল - যাবে সবার আগে ফর দ্য বেস্ট সিট, ফিরবে সবার শেষে ফর মিনিমাল রাশ। হাততালিতে কিপটেমো করলে দাদু দুঃখ পেতেন; "ভালো যখন লেগেছে, তখন মন খুলে তালি দাও, গলা ফাটাও - প্রশংসায় আবার হিসেব কেন"।
৬। শুধু জলের ব্যাপারে সাবধানী হয়ে সব খাবে পুজোর ক'দিন - দাদুর ম্যাজিক উপদেশ। অনেককিছু খাবে, বারে বারে খাবে, যেখানে সেখানে খাবে- শুধু পেট আইঢাই করবে এমন পরিমাণে খেও না- দাদুর সেকন্ড ম্যাজিক টিপ। ফুচকা, ঘুগনি বা কাটলেট; কিছুই কাত করতে পারত না ওই সিম্পল দু'জোড়া টিপ্সে।
৭। দাদু বলতেন ট্রাস্ট দোজ হু আস্ক ক'টা পুজোসংখ্যা পড়া হল; নট দোজ যারা জিজ্ঞেস করে এবার পুজোয় ক'ট নতুন জামা হল।
৮। দাদু গল্প বলতেন। ইন ফ্যাক্ট পুজোর ক'দিন দাদুকে গল্প পেয়ে বসত। পুরনো দিনের পুজোর গল্প। দাদুর মায়ের গল্প। দাদুর ঠাকুমার গল্প। দাদুর চোখ চিকচিক করত।
৯।পুজোর সকালগুলোয় দিদা বিশেষ এনার্জি নিয়ে ভক্তিগীতি গাইতেন। কত রকমের গান। "বাপরে নিমাই আমার, যাইও না যাইও না, বৈরাগী না হইও নিমাই...বিবাগী না হইও"। দাদু তাল ঠুকতেন। কথা শুধরে দিতেন। দিদার দিকে ভালোবেসে তাকাতেন। কী ভালো যে লাগতো। দিদা ভক্তিগীতি শেষ করে যেতেন লুচি ভাজতে; পুজোর চার দিনে চার দিনই।
১০। অষ্টমীর সন্ধি পুজো দেখতাম দাদুর সাথে। দাদু হাত ধরতেন খুব কম। কাঁধে হাত রাখতেন বেশি। সন্ধিপুজো কখনও সন্ধ্যেবেলা হয়েছে, কখনও বা মাঝ রাতে; পঞ্জিকা যখন যেমন বলত। আমরা মিস্ করতাম না। দাদু বলতেন "পুজোর সময় প্রতিমার মুখের গ্লো টা নোটিস করবি, গ্লোটা হল ভালোবাসা মাখা বিশ্বাসের"।
দাদু নেই; মান্থ এন্ড টার্গেট্স আছে, শপিং প্ল্যান্স আছে।
পুজোর বিরিয়ানি হ্যাজ গন ভেজ।
Comments