Skip to main content

দ্যাবা দেবী

দেবী ডিমের ঠিক তালুতে টকাস করে চামচের এক টোকা দিলেন। টুপ করে খোলা আলগা হয়ে বেড়িয়ে এল কুসুম-অন্তর, গড়িয়ে পড়ল স্টিলের গেলাসে।

দ্যাবা দারোগা-দেবীর পিছনে হাবিলদারের মত ফ্যালফ্যাল করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ডিম গেলাস বন্দী হতেই দ্যাবা ড্যাবড্যাব চোখে থুঁতনি রাখলেন দেবীর কাঁধে, দু হাতে জড়ালেন দেবীর কোমর। বুকে চাপা উত্তজেনা, রোজরোজ একই প্রসেস; তবু জলো ডিমের ওমলেটত্ব লাভের স্পাইন চিলিং প্রসেস দ্যাবাকে বেবাক অবাক করে ছাড়ে।

এরপর দেবী ছুপুত করে দেড় চামচে পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি, হাফ চামচ নুন আর একচামচ দুধ ডিম ফাটানো গেলাসে ফেলে দেন। দ্যাবার যে কী অপূর্ব লাগে সে দৃশ্য, যেন সৃষ্টিকর্তা মহাকাশের ফোঁদলে একমুঠো তারা ছড়িয়ে দিলেন। 
তারপরে দেবী সমেজাজে ঘটঘট শব্দে গেলাসে চামচ নাড়িয়ে ডিম পেঁয়াজ লঙ্কা নুন দুধের সলিউশন ফেটাতে থাকেন। গোলার তালেতালে দেবীর কাঁধে রাখা দ্যাবার থুঁতনি ভাইব্রেট করতে শুরু করে, ঐশ্বরিক আমেজে চোখ বুজে আসে দ্যাবার।


ওদিকে ওভেনের ওপর নন-স্টিক চাটুতে তখন চিড়বিড় করছে গরম হওয়া সর্ষের তেল দু'চামচ। শিল্পী যেভাবে অতর্কিতে ক্যানভাসে আঁচর হানেন, সেভাবেই গেলাসটাকে এক মনোরম এঙ্গেলে রেখে চাটুময় সার্কুলার প্যাটার্নে ডিম গোলা ছড়িয়ে দেবেন দেবী। চাটুতে ডিমে ভাজার ফটফট শব্দে দ্যাবার প্রাণ ফুর্তির স্প্রীংয়ে পড়ে লাফিয়ে উঠবে; কিন্তু হাত দু'টো দেবীর কোমরে জড়ানো বলে হাততালিটা এক্সেকিউট করা যাবে না।

আধ নরম আধ ভাজা অবস্থায় যখন অমলেটের ফিটাসকে অক্ষত রেখে দেবী একদিক উল্টে অমলেট ভাজ করবেন তখন "আরি শালা কী স্কিল" বলে দেবীর কোমর খামচে ধরবেন দ্যাবা। দেবী আগুন চোখে ঘুরে থাকবেন, দ্যাবা লেতকে গিয়ে "হ্যা হ্যা" হেসে দেবীর কাঁধ ঠোঁট পালিশ করবেন; দেবী ওয়াপিস আসবেন ওমলেটে।

ওমলেট তখন লালচে; ভালোবাসা মেদুর যৌবনা। চাটু থেকে থালায় নামিয়ে দেবী সপাটে হুকুম দেবেন "এবারে ফ্যান গেলে গিলতে আস, জলদি"।

মিইয়ে দ্যাবা বলবেন "তুমি মামলেট বানানোর সময় আমি যেমন কোমর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম; আমি ভাতগালার সময় একটু থাকো না প্লীজ। বুকে বল পাব"।

দেবীর ডিসমিস করার ভাষা অতি সহজ ; " ন্যাকা ভূত"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু