Friday, August 14, 2015

সেক্সিস্ট

-মায়ের হাতে বেলা লুচিই ভালো খেতে হবে কেন? তোমার বাবা লুচি বেলেন না কেন? তুমি সেক্সিস্ট। তোমার বাবা সেক্সিস্ট।

- না মানে...ইয়ে...সে ভাবে বলিনি...।

-তুমি স্পষ্ট বলেছ। যে মায়ের হাতের বেলা লুচি না হলে তোমার মুখে রোচে না। এর মানে কী? তোমার বাবাকে তুমি লুচি না বেলতে উস্কানি দিচ্ছ! তাই তো? বিয়ের পর বলবে আমার হাতে কাচা জামা প্যান্ট ছাড়া তোমার পরতে ভালো লাগে না। ব্যাস! আমি তারপর তোমার ধোপানী হয়ে যাই আর কী! আমায় কিন্তু মীক আর ডসাইল অবলা ভেব না!

-না মানে...তা নয় কিন্তু। বাবা লুচি বেলতে পারে।

-তবু বেলেন না। তাই তো? সেক্সিস্ট। বাপ ব্যাটা দু'জনেই সেক্সিস্ট।

-বাবা বড় পলিটিক্যালি লুচি বেলে; মানে পারফেক্ট পলিটিক্যাল ম্যাপ সব - মহারাষ্ট্র টু ইন্দোনেশিয়া; তা কড়াইয়ে না দিয়ে তার ওপর সহজেই ম্যাপ পয়েন্টিং করা যেতে পারে। বিশ্বাস কর। বিশ্বাস কর আমি সেক্সিস্ট নই। আমি গোল-লুচি-ভালোবাসিস্ট। তাই; মা'র বেলা লুচির জন্য মুখিয়ে থাকি।

**

- জিমে তাহলে তুমি যাবেই না?

- না।

- এই ভুঁড়ি ম্যান হয়ে জীবন কাটাবে?

- হ্যাঁ।

- আমি এমন স্লিম ট্রিম। আর আমার বর এমন ধ্যাপস হয়ে থাকবে চিরকাল?

- বিলকুল। আর তুমি ভুলে যেও না এ ভুঁড়ি তোমার প্রতি ভালোবাসাতেই।

- আমার প্রতি ভালোবাসায় ভুঁড়ি রেখেছ!ইস! কবে বলেছি আমি?

-আলবাত তোমার প্রতি ভালোবাসায়। অন্তত নোশনাল জেন্ডার ইকুয়ালিটি বজায় রাখতে এই ভুঁড়ি।

-এক্সপ্লেইন।

-খোকাকে যখন ক্যারি করছিলে; মনে নেই তুমি বলেছিলে যে ভগবান নিজেই সেক্সিস্ট! বার্থ প্রসেস্‌টাই এমন ভাবে স্কিউ করে রেখেছে যে মেয়েদেরই যত কষ্ট আর ছেলেদের ফুর্তি? বলেছিলে কী না?

-বলেছিলাম। সো?

-আমি আজীবন এ ভুঁড়ি পুষে তোমার সে কষ্টের সহ-মর্মী হব। এ ভুঁড়ির ভার আমায় আজীবন মনে করাবে যে খোকাকে ক্যারি করার সময় তুমি কী কষ্টটাই না করেছ। কথা না বাড়িয়ে মাটনের বাটিটা এদিকে পাস কর দেখি।

**
- আমার দিকে অমন ল্যালল্যাল করে তাকিয়ে আছ কেন? আমি গামছা পরে আছি বলে? এটা কী অ্যাবজেক্ট সেক্সুয়াল অব্জেক্টিফিকেশন নয়? সেবার তোমার আঁচল আধ ইঞ্চি হেরফের হয়েছিল আর আমি সামান্য তাকিয়ে ফেলেছিলাম। বাপ রে বাপ! সে কী জ্ঞান দিলে। আর এই বেলা? এই...আমায় এমন অবজেক্টিফাই করতে...লজ্জা লাগে না?

- শাট আপ। তোমার তাকানো আর আমার তাকানো এক নয়। তোমার তাকানো ছিল বাঙালের সিজনের প্রথম ইলিশ দর্শনের মত।

- ইহঃ! আমার বাবা যশোর মা বরিশাল। আমায় জ্ঞান দিচ্ছেন- ব্যঙ্যালের ইলিশ দর্শন। আর তোমার এই গামছার দিকে তাকানো, সে'টা কীরকম শুনি?

- মালপো যদি ভানুকে দেখতে পেত; তবে যেমনটা হত- ঠিক সে'রকম!

সী অফ ট্রাঙ্কুইলিটি

-প্যাসিফিক দেখেছেন?

-প্রশান্ত? মহাসাগর?

-নয়তো আর কী! মুখ গুঁজে ফাইলই ঘেঁটে গেলেন মশাই। বছরে একবার পুরী ছাড়া তো আর সমুদ্র চিনলেন না। কুণ্ডু স্পেশালে না পচে একবার থমাস কুকের লেজুড় হয়ে ঘুরে আসুন না। প্যাসিফিকের নীলের সামনে দাঁড়ালে টের পাবেন ওশেন কী জিনিষ। গায়ে কাঁটা দেওয়া ব্যাপার।

-তার চেয়ে বড় সমুদ্র দেখা আছে মশাই।

-বিগার দ্যান প্যাসিফক? জিওগ্রাফিতে নোবেল থাকলে আপনি পেতেন।

-সী অফ ট্র‍্যাঙ্কুইলিটির নাম শুনেছেন?

-চাঁদের সমুদ্র? আপনার দেখা নাকি?

-রকেটে না চড়তে পারি, তবে নিজের পকেট কেটে একবার প্লেনে চড়েছিলাম। দমদম টু বাগডোগরা। রিটার্ন অবিশ্যি দার্জিলিং মেলে ছিল; টু অ্যান্ড ফ্রো ফ্লাইট বাড়াবাড়ি হয়ে যেত। প্লেনে উইন্ডো সিট বাগিয়েছিলাম। তো দমদম থেকে যেই টেক অফ করলে আমি হাভাতের মত নীচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ক্যালক্যাটা ক্রমশ মিনিমাইজ হতে থাকল। দু'মিনিটের মাথায় চোখের সামনে থেকে শহর ভ্যানিশ হয়ে উদয় হল সমুদ্র।

-বে অফ বেঙ্গল?

-সী অফ ট্রাঙ্কুইলিটি। কলকাতার হইহই রইরই নেই। ফোঁটা ফোঁটা জলের মত হাই রাইজগুলো। নরম মাফলারের মত পেঁচানো হুগলী। মন দিয়ে দেখলাম তরঙ্গ আছে, উচ্ছাস নেই। ভেরি আনলাইক দ্য সিটি দ্যাট উই নো। অন্তরে বাস করার একটাই প্রবলেম; ঘিঞ্জি জিন্দেগী চোখে পড়ে, শান্ত সমাহিত টোটালিটিটা গোচর হয় না। খটমট শহুরে ক্লীশে গদ্য কান ভরে দেয় কিন্তু পোয়েট্রিটা ইন্টারসেপ্ট করা হয় না। সেই প্রথম কলকাতার নয়েস নয়, স্নেহ ঢেউ ফিল করি। মাই ওউন সী অফ ট্রাঙ্কুইলিটি। দেখুন মশাই, ই-ওয়ান বাস আমার থমাস কুক আর ওই হাজরার অটো স্ট্যান্ড আমার কুণ্ডু। প্যাসিফিকে আমার আর কাজ নেই। হে হে।


ঘুম

-রাত আড়াইটে বাজতে চলল, এখনও ঘুম আসছে না গো?

-না।

-ঘুমের হলটা কী?

-জানি না। ঘুমের কথা বেশি ভাবলে ঘুম আসবে না। বাদ দাও!

-এত রাত হয়ে গেল, ঘুমের কথা ভাবব না গো?

-তখনই বলেছিলাম। মেয়ের অমন বিটকেল নাম দিও না। ঘুম ব্যানার্জি। ধুর!! নাও ঠ্যালা। আমাদের চোখের ঘুম এখন ডিস্কো নাচছে।

এক ও অন্য

একঃ 

শার্টের বুক পকেট হাতড়াচ্ছিলাম দেশলাই খুঁজতে না পেয়ে যেই পকেট থেকে হাত বের করতে যাব অমনি খপ করে হাত কামড়ে ধরলে পকেট আর ঠিক তখনই একটা রিনরিনে সুরে ভেসে আসল পকেটের ভেতর থেকে-
"দিনে একটা করে। কথা দিয়েছিলে"

**

অন্যঃ

চীনেবাদাম ছাড়িয়ে বাদাম ফেলে দিয়ে খোসাগুলো নুনে মাখিয়ে টপাটপ মুখে পড়ছিলেন গণেশ বণিক। প্রতিবেশী; চুল্লুর সুবাস মাইন্ড করলে চলে না। তবে কিনা বাদামের এমন অন্যায় অপচয় বরদাস্ত করা যায় না। হুড়ুম করে সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "এটা কী হচ্ছে গণাদা, এইভাবে বাদাম ওয়েস্ট করছেন কেন?"

"ব্যালেন্স রিস্টোর করছি", মিচকি হেসে বললেন গণেশ বণিক, "অনুরাধাও বাদাম ভালবাসতো। পার্কে বসে কত খাইয়েছি জানো? নিজের হাতে খোসা ছাড়িয়ে। কিপিং উইথ হার প্যাশন ফর বাদাম, নৃপেন সাহার সিমেন্টের ব্যবসার বিটনুনমাখানো বাদাম পেয়ে আমার মত ক্লার্কের ওয়ান বেডরুম ফ্ল্যাটকে খোসার মত সাইড করে দিলে অনুরাধা! উফ! খোসাদের বড় দুঃখ গো, বড় দুঃখ। তাই আমি এভাবেই বদলা নিয়ে থাকি। বুঝলে?" 

একটা প্রেমের গল্প

-লেঙ্গি খেয়েছিস? ফের?

-ফের।

-এহ হে! শেষ পর্যন্ত সুস্মিতাও দাগা দিলে?

-দিলে।

-কী আর করবি! সিগারেট দেবদাস হয়ে যা। ধোঁয়ায় যন্ত্রণা উড়িয়ে দেয়ে। সুপ্রাচীন বিশল্যকরণী। 
-সিগারেট? সেটুকুই আছে হয়তো। তবে পাতি সিগারেটে বুকের এ ব্যথা যাবে না রে।
-স্পেশ্যাল সিগারেট? কী রকম?
-বোরোলিন ফ্লেভারের সিগারেট হয় না?

**

-এবার প্রেমে। সিওর।

-এ তোর রোজকার বাতেলা। ভাগ।

-মাইরি। একে না পেলে ভেঙ্গে পড়ব।

-ভাগ ভাগ।

-এই দ্যাখ। ব্লেড। দাড়ি কাটিনি এ ব্লেডে। পকেটে নিয়ে ঘুরছি। বুক হাউহাউ করে উঠলেই হাত কেটে নাম লিখব : শ্রাবণী।
-শ্রাবণী? তা তার পয়জনটা কী? ডানাকাটা পরী না কাটারি সেন্স অফ হিউমর?
-নান। ওসব ক্যাপিটালিস্ট অ্যাটিটিউডে প্রেমিকা মেপেই তুই শেষ হলি।
-কেন? শ্রাবণী কি লেনিনগ্রাদ থেকে এসেছে?
-চুপ কর। অমন মেয়ে পেলে তুই ধন্য হয়ে যেতিস।
-কেন, এমন কীসে?
-আজ দেখা, দেলখোশায়। কোণাকুণি টেবিলে। প্রেসির ফিলোসফি। আড়ি পেতে বুঝলাম। চোখের সামনে গপাগপ কবিরাজি সাবাড় করে চললে; তিন প্লেট- ব্যাক টু ব্যাক। শেষে হুড়মুড় করে বিল মিটিয়ে দৌড় লাগালে ফুচকা খাবে বলে। শোন, ও মেয়েকে না পেলে আমি মারা যাব।

**

হার্ট শেপের গোলাপ তোড়া হাতে সামান্য অস্বস্তিইই হচ্ছিল মিত্রবাবুর। প্রেমে মাখামাখির অবশ্য কোন বয়স হয় না। তাছাড়া পরকীয়া তো আর নয়। তবে এতদিনে একবারও তো শ্রাবণীকে এমন রোম্যান্টিক সারপ্রাইজ দেওয়া হয়নি। শেষে আশিতে এসে এমন গদগদে একপ্রেশনটা ভীমরতি বলে আইডেন্টিফাইড হবে না তো? খোকা বৌমা আড়ালে হাসবে না তো? পাঞ্জাবিতেতে পারফিউম কি বেশি মাত্রায় ছড়ানো হয়ে গেছে?

"যাক গে", অস্বস্তি ঝেড়ে ট্যাক্সি থামালেন মিত্রবাবু; "চলো হে, ক্যাঁওড়াতলা"।

রাতের ঘুম

১।



২।

-রাতে একটানা জেগে থাকার বেস্ট উপায় কী বল তো?

-গপ্প গুজব।

-গুড। বাট নট দ্য বেস্ট।

-কফি?

-ক্লোজ বাট নট ক্লোজ এনাফ।

-তাহলে? তোমার মত রাতে টানা জেগে থাকার বেস্ট টোটকা কী?

-রাত জাগার সব চেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ঘুমোনোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। নেভার ফেইলস।

৩। 

মিরাকেল

-চা খাবে নাকি?

-বাদ দাও। সময় নেই।

-মিরাকেলে বিশ্বাস আছে?

-মানে ওই লোহাকে সোনা করা বা ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া বা মরে বেঁচে ওঠা?

-খানিকটা সে’রকমই। বিশ্বাস আছে?

-বিজ্ঞানের ছাত্র তো। চট করে বলতে ইচ্ছে করে না যে মিরাকুলাস ব্যাপারে বিশ্বাস আছে।

-বিজ্ঞান কি মানুষকে অবিশ্বাসী করে তোলে?

-যুক্তিবাদী তো করে তোলেই।

-স্বর্গলাভের কনসেপ্টটা মিরাকেলে বিশ্বাসের সমান নয়?

-আচমকা এ কথা কেন ভায়া। এ কাজের দায়িত্ব মাথা পেতে নেওয়া কি স্বর্গলাভের কথা ভেবে? আমরা অন্তত এ কাজ করছি আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোর সামান্য ভালোর জন্য। আমাদের ছোট ছেলে মেয়েগুলো যেন একটু সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারে; সেই জন্য। পরকালে সুখ লাভের জন্য কিছু করা তো স্রেফ ধান্দাবাজি হত হে। আমরা শিক্ষিত, আগামীর স্বপ্ন দেখছি আমরা। কুসংস্কার মাখা বিপ্লব আমরা চাইব কেন?

- আসলে। আমার হঠাৎ ভীষণ স্বর্গে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল। আমার কেমিস্ট্রির গোল্ড মেডাল ভুলে মিরাকেলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল।

-শেষ মুহুর্তে এসে মন দূর্বল হয়ে গেল নাকি হে?

-তা কিছুটা হয়েছে। তবে ঠিক নিজের জন্য নয়।

-তাহলে?

-এই মাত্র এই শপিং মলে ঢুকল মেয়েটা। ফুটফুটে একেবারে। বছর পাঁচেকের বেশি বয়স হতেই পারে না। সাদা স্কার্টে ছোপ ছোপ গোলাপি ফুল; মেয়েটার গালেও গোলাপি ছোপ। মেয়েটার এক হাতে দু'টো লজেন্স আর অন্য হাতে শক্ত করে ধরা ছিল আর একটা বাচ্চা ছেলের হাত; সম্ভবত ওর ভাই। ভাইয়ের বয়স বছর তিন কি সাড়ে তিন বড় জোর। আমাদের প্ল্যান্ট করা বোমাটা আর তিরিশ সেকেন্ডে এই মল উড়িয়ে দেবে। দ্যাখো আমার স্বর্গে বিশ্বাস ছিল না, লোভও ছিল না। কিন্তু ওই মেয়েটিকে যদি তিরিশ সেকেন্ড পর একটা সোয়াস্তির জায়গা দিতে পারতাম গো- যেখানে দাঁড়িয়ে মেয়েটা শান্তিতে নিজের ভাইয়ের সাথে লজেন্স দু'টো অন্তত খেতে পারত। তাই মিরাকেলের কথা জিজ্ঞেস করছিলাম। আর কী!