Skip to main content

মিরাকেল

-চা খাবে নাকি?

-বাদ দাও। সময় নেই।

-মিরাকেলে বিশ্বাস আছে?

-মানে ওই লোহাকে সোনা করা বা ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া বা মরে বেঁচে ওঠা?

-খানিকটা সে’রকমই। বিশ্বাস আছে?

-বিজ্ঞানের ছাত্র তো। চট করে বলতে ইচ্ছে করে না যে মিরাকুলাস ব্যাপারে বিশ্বাস আছে।

-বিজ্ঞান কি মানুষকে অবিশ্বাসী করে তোলে?

-যুক্তিবাদী তো করে তোলেই।

-স্বর্গলাভের কনসেপ্টটা মিরাকেলে বিশ্বাসের সমান নয়?

-আচমকা এ কথা কেন ভায়া। এ কাজের দায়িত্ব মাথা পেতে নেওয়া কি স্বর্গলাভের কথা ভেবে? আমরা অন্তত এ কাজ করছি আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোর সামান্য ভালোর জন্য। আমাদের ছোট ছেলে মেয়েগুলো যেন একটু সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারে; সেই জন্য। পরকালে সুখ লাভের জন্য কিছু করা তো স্রেফ ধান্দাবাজি হত হে। আমরা শিক্ষিত, আগামীর স্বপ্ন দেখছি আমরা। কুসংস্কার মাখা বিপ্লব আমরা চাইব কেন?

- আসলে। আমার হঠাৎ ভীষণ স্বর্গে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল। আমার কেমিস্ট্রির গোল্ড মেডাল ভুলে মিরাকেলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল।

-শেষ মুহুর্তে এসে মন দূর্বল হয়ে গেল নাকি হে?

-তা কিছুটা হয়েছে। তবে ঠিক নিজের জন্য নয়।

-তাহলে?

-এই মাত্র এই শপিং মলে ঢুকল মেয়েটা। ফুটফুটে একেবারে। বছর পাঁচেকের বেশি বয়স হতেই পারে না। সাদা স্কার্টে ছোপ ছোপ গোলাপি ফুল; মেয়েটার গালেও গোলাপি ছোপ। মেয়েটার এক হাতে দু'টো লজেন্স আর অন্য হাতে শক্ত করে ধরা ছিল আর একটা বাচ্চা ছেলের হাত; সম্ভবত ওর ভাই। ভাইয়ের বয়স বছর তিন কি সাড়ে তিন বড় জোর। আমাদের প্ল্যান্ট করা বোমাটা আর তিরিশ সেকেন্ডে এই মল উড়িয়ে দেবে। দ্যাখো আমার স্বর্গে বিশ্বাস ছিল না, লোভও ছিল না। কিন্তু ওই মেয়েটিকে যদি তিরিশ সেকেন্ড পর একটা সোয়াস্তির জায়গা দিতে পারতাম গো- যেখানে দাঁড়িয়ে মেয়েটা শান্তিতে নিজের ভাইয়ের সাথে লজেন্স দু'টো অন্তত খেতে পারত। তাই মিরাকেলের কথা জিজ্ঞেস করছিলাম। আর কী!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু