Sunday, December 10, 2023

ডিমসিদ্ধ



আমার ডিমসেদ্ধ ভালোই লাগে৷

তবে ডিমসেদ্ধ আমি বাইরে গিয়ে খেলে একটু বেশি ভালো খাই৷ আমার সবচেয়ে প্রিয় তিনটে ডিমসেদ্ধ-ব্যাকগ্রাউন্ড বলি। 

১। ট্রেনে বা রেলস্টেশনে; কাগজের ওপর ফালি করে বিটনুন ছড়িয়ে দেওয়া৷
হ্যাট টিপ: বারাউনি স্টেশনের ডিমসেদ্ধদাদারা ডিম দিতেন নুনের পাশাপাশি অল্প পেঁয়াজ-লঙ্কা কুচি ছড়িয়ে। ও জিনিস এককালে ফুচকার মত টপাটপ খাওয়ার ধক আর ক্ষমতা ছিল। 'সেই আমি'র কথা ভাবলে এখন মনে মনে স্যালুট ঠুকতে ইচ্ছে করে।

২। গঙ্গার ঘাটে; লেবুচায়ের আগে শালপাতার বাটিতে সার্ভ করা জোড়া ডিমসেদ্ধ৷ সন্ধে আর নদীর হাওয়া মিলে যার স্বাদ দশগুণ বেড়ে যায়৷
হ্যাট টিপ: বাবুঘাটের সামনে একটা দোকানে পোলট্রির মুর্গির ডিমের পাশাপাশি দেশি হাঁসের ডিমও থাকত, টকটকে লাল কুসুম৷ নমস্য।

৩। গরম ঘুগনিতে ফেলে। ছোট কাঠের চামচে (যে ধরণের চামচ দিয়ে এককালে আমরা আইসক্রিম খেতাম) সেদ্ধ ডিমের কুসুম ঘুগনিতে ভালো করে মিশিয়ে তারপর মুখে তোলা৷ ডিমের স্পর্শে ঘুগনি চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠে না ঘুগনিতে ডিমের স্বর্গলাভ; কে জানে। 
হ্যাটটিপ: বালিগঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন যে সবজি বাজার, সে'খানে এক দাদাভাই ঘুগনি-ডিমসেদ্ধ বিক্রি করতেন। বিটনুন-পেঁয়াজ-লঙ্কার পাশাপাশি তিনি সে কম্বিনেশনে জুড়ে দিতেন সামান্য তেঁতুলজল৷ দু'চামচ মুখে দিলে জ্বরে কাবু জিভও তড়াং করে লাফিয়ে উঠত৷ ভাবলেই মনটা উদাস হয়ে পড়ে।

সমস্যা হল, বাড়িতে সেই ডিমসেদ্ধর কদরই সামান্য কমে যায়। মনে হয় ও জিনিস সোজাসাপটা না খেয়ে ঝোলে ফেলে খাই৷ বা সেদ্ধ না করে ডিম ফাটিয়ে সোজা নির্ভেজাল অমলেট করে নিই। তা গত পরশু রাত্রে যখন ঠিক হল রাত্রে শুধুই ডিমসেদ্ধ-ভাত, তখন সামান্য ছটফটিয়ে উঠতে হল। ভ্যানিলা ডিমসেদ্ধকে রোম্যান্টিক-স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার ট্রেন, গঙ্গা বা ঘুগনি৷ সে'সব জিনিস তো চাইলেই পাওয়া যায়না৷

সেই সিচুয়েশনে আমাদের ভরসা হলো ডিমমাখা বা ডিমভর্তা। আমরা দু'টো ফর্ম্যাটে খেলি৷ প্রথমটা সোজাসাপটা; অনেকটা সর্ষের তেল আর কাঁচালঙ্কা কুচি দিয়ে কষে মেখে নেওয়া। দ্বিতীয়টা সামান্য দরদী, যে'টা গত শুক্রুবার করেছিলাম। আগে পেঁয়াজ, রসুনকুচি, আর শুকনো লঙ্কা ভেজে; তারপর সেই ভাজাগুলোকে সেদ্ধ ডিমে ফেলে, তা'তে কড়াইয়ের গরম তেল ফেলে, স্বাদমত নুন দিয়ে মেখে নেওয়া। এই প্রসেসের সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক পর্বটা হচ্ছে ভর্তাটা মাখার পর নিজের আঙুল চেটে সাফ করা।

ঘ্যাম শব্দটা মেপে ব্যবহার করে উচিৎ, কারণ অতিরিক্ত ব্যবহারে ঘ্যামের ওজন কমে আয়৷ কিন্তু এই ডিমভর্তার ক্ষেত্রে ঘ্যাম শব্দটা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়।

No comments: