Tuesday, December 5, 2023

ফলাহার

পড়ছি।

পড়ছি।

পড়ছি তো পড়ছিই৷

এক্কেবারে শাঁইশাঁই করে৷

যে স্পীডে পড়ছি তা'ত কয়েক সেকেন্ডেই দুমফটাস হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু পড়াটা থামছে না৷

সময়ের বয়ে চলার স্পীডটা ধরতে পারছি না, তবে অন্তত মিনিট পাঁচেক ধরে যে পড়ে চলেছি তা' নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।

অতল।

অন্তহীন।

প্রথম কয়েক সেকেন্ডের আঁতকে ওঠার ভাবটা বেমালুম কেটে গেছে৷
বুকের ছ্যাঁত ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে।
বেশ একটা ফুরফুরে মেজাজ টের পাচ্ছি৷

কিন্তু চোখে অবশ্য সমস্তই ঝাপসা।

আশপাশের সমস্ত কিছুই গুবলেট, এ দুনিয়ায় শুধু একটাই ব্যাপার ঘটছে; পতন৷

সমস্ত কিছুই ঘোলাটে, শুধু এই পড়ে চলাটাই একমাত্র মজবুত সত্য।

'ফটাস'!

স্বপ্নের সুতোটা কেটে গেল।

টের পেলাম আমি বাবাজীর ঠ্যাঙ ধরে বসে আছি৷ বাবাজী মারাত্মক খটমট মন্ত্রোচ্চারণ করে আমায় মুক্তির শর্টকাট বাতলে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন৷ ঘরে আরও জনাদশেক ভক্ত দোলদোলদুলিনি রিদমে মাথা দোলাচ্ছেন৷ কিন্তু তারা সকলে খানিকটা তফাতে বসে। আসলে আমার সঙ্গে বাবাজীর একটু সবিশেষ দহরমমহরম। হয়ত আমি লীড স্পন্সর বলেই।  অতএব আমার স্থান সরাসরি বাবাজীর পদতলে। 

বাবাজী আমায় মাস তিনেক আগে ঘায়েল করেছেন৷ আশ্বাস দিয়েছেন চাকরীর সমস্যা কেটে যাবে, প্রেমের যোগ আসবে, আর তাসের আড্ডায় কপালের জেল্লা বাড়বে। ঝড়ে বক মরল কিনা জানি না, তবে বাবাজীর দীক্ষা নেওয়ার পরপরই অফিসে একটা বড়সড় প্রমোশন বাগিয়ে বসলাম।

স্বপ্নের ঘোরটা কেটে যেতেই মনের ভিতর এক টুকরো রোদ্দুর এসে পড়ল। টের পেলাম, আজ পুজোর সপ্তমী৷ বাবাজী শুভদিন দেখে পেয়ারের ভক্তদের বিশেষ মাদুলি দেবেন আজ৷ সেই সুপার-প্রো-ম্যাক্স মাদুলি ধারণ করার পর দিন তিনেক শুধু ফলাহার করে থাকতে হবে৷ দিনে সাত বার স্নান করতে হবে আর বারো বার এক বিশেষ মন্ত্রপাঠ করতে হবে৷ সমস্ত ঠিকঠাক করতে পারলে তিনদিন পর থেকে ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হয়ে কামিনীকাঞ্চনের বন্যা বইয়ে দেবেন৷ কিন্তু প্রসেসে সামান্য গণ্ডগোল হলেই সমূহ বিপদ৷ কী বিপদ জানা যায়নি, তবে মাদুলির ফিজটা বাবাজীর চরণে নিবেদন করে ভক্তকুল খানিকটা সোয়াস্তি পেয়েছে বটে৷

শুধু এই গাম্বাট স্বপ্নটা এসে সব ঘেঁটে দিয়ে গেল। টের পেলাম; সপ্তমীর দুপুরে আমি শিউলির আঙুলে আঙুল জড়িয়ে 'সুইটনাথিংস' বিড়বিড় না করে বাবাজীর ঠ্যাঙ ধরে পুজোর বাকি ক'টা দিন ফলাহারের প্ল্যান করছি৷ স্বপ্নটা যে পতনের নয়, অধ:পতনের; তা বুঝতে বাকি রইল না৷

আমার ঢুলুঢুলু চোখের দিকে তাকিয়ে আচমকা বাবাজী শুধোলেন, "কী ব্যাপার অমিত, তুমি কি ক্লান্ত বোধ করছ"?

আমি গদগদ কণ্ঠে বললাম, "গুরুদেব, স্রেফ আড়াই ঘণ্টা গুরুর পদসেবায় যদি ক্লান্ত হই, সে শরীর রেখে হবে কী৷ তবে যদি গোস্তাখি মাফ করতে পারেন, একটা সরলসিধে প্রশ্ন করে ধন্য হই"।

"নিশ্চয়ই বৎস, নির্ভীক প্রশ্নই তো উত্তরণের প্রথম শর্ত"।

"বেশ। তা গুরুদেব, এই যে ফলাহার রেকমেন্ড করছেন, সে প্রসঙ্গেই একটা কোশ্চেন ছিল। তা,  মাটন বিরিয়ানির আলুতে অথবা ইলিশ ঝোলের বেগুনে অথবা ইয়ে..একটা এস্পারওস্পার চুমুতে সামান্য গঙ্গাজল ছিটিয়ে নিলে কি তাদের ফলে কনভার্ট করা সম্ভব"?

No comments: