Tuesday, December 5, 2023

পার্ফেকশন প্যারাডক্স



- বুঝলে গো শ্যামলদাদা, কিস্যুটি ঠিকঠাক হচ্ছে না। কিস্যু না।

- ও কী ভায়া৷ ভরসন্ধ্যেবেলা নেতিয়ে পড়লে দেখছি৷ মেজাজটা তুঙ্গে না রাখলে চলবে কেন? হরনাথবাবু আর নাড়ু এসে পড়লে বলে৷ তারপর টুয়েন্টি নাইনের মহাযুদ্ধ..গলায় একটু তেজ না আনলে খেলা জমবে কী করে?

- সে না হয় খেলব৷ কিন্তু মনের মত তাস যে আমি কোনওদিনই পাইনা। কাজেই আমার মত পার্টনার নিয়ে তাসের আড্ডা হোস্ট করাটা আপনারই লস্।

- তাস আজ গোলমেলে হলে হবে৷ কাল দেখবে সিঙ্গল হ্যান্ডে মাত করছ। দাঁড়াও, তোমার দরকার এককাপ কড়া কফির৷

- হবে না শ্যামলদা। হবে না৷ কফিতে সাঁতার কাটলেও আমার কপালে পার্ফেকশন জুটবে না৷ মিডিওক্রিটির সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে কাটানো ছাড়া আমার কোনও গতি নেই।

- ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাকগলানো শ্যামল চ্যাটুজ্জ্যের অত্যন্ত নাপসন্দ। তবু তুমি টুয়েন্টিনাইন পার্টনার। একটু খুঁচিয়ে দেখি না হয়৷ বলছিলাম ভায়া দিবাকর, মনটন খারাপ নাকি?

- তেমন নতুন কিছু নয়, আলাদা করে কিছু ঘটেনি। তবে জীবনে কিছু না ঘটাটাও তো দুর্ঘটনার সামিল। একদিকে চাকরী, অন্যদিকে সংসার, পাশাপাশি অমুক প্যাশন, তমুক শখ; যুদ্ধ তো কম নয়৷ কিন্তু কিছুতেই পার্ফেকশন খুঁজে পেলাম না।

- ব্যবসায়ী মানুষ আমি। সংসারও করলাম না। ও'দিকে আমার প্যাশন বলতে রান্নাবান্না আর শখ বলতে টুয়েন্টিনাইন৷ তবু, তুমি অপরাধ না নিলে, একটু জ্ঞান দিই ভায়া?

- ইরশাদ!

- অর্জ কিয়া হ্যায়৷ নিখুঁত কত কিছু আমাদের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যায় ভায়া, রোজ। তারা কিনা সহজে এসে ধরা দেয়, তাই তাদের কদর কম। আর যা জোটে না তা নিয়েই আমাদের যত হাহুতাশ।

- হবে হয়ত। কিন্তু আমার পোড়া কপালের গল্প তো তোমার কিছুই অজানা নেই দাদা! নিখুঁত কবে কী জোটাতে পেরেছি বলো? সে'সব ভেবে মাঝেমধ্যেই বুকটা হুহু করে ওঠে৷ এক্কেবারে হুহু হুহু..।

- খানিকক্ষণ আগে যে ডিমটা ভেজে দিলাম, সে'টা চেটেপুটে খেলে, আহা-বাহা করলে; কিন্তু কদর করলে না। সমাদর করলে না। যে'দিন সে ডিমভাজার কদর করতে পারবে, সে'দিন বুঝবে বাবু দিবাকর দত্ত.. পার্ফেকশন প্রতিনিয়ত আমাদের ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমরা তাদের ছুঁতে পারছি না। সে'টাই প্যারাডক্স৷ সে'টাই ট্র‍্যাজেডি।

- কফিটা আমি বানাই শ্যামলদা। আপনি বরং আর এক রাউন্ড ডিমভাজায় মন দিন৷ আজ টুয়েন্টিনাইনের ব্র‍্যাডম্যান হতে মন চাইছে।

No comments: