Skip to main content

তাই বন্দুক নিলে হাতে


- ডক্টর চ্যাটার্জী, এমন জরুরী তলব! কী ব্যাপার বলুন দেখি। তাও এমন বিটকেল একটা চেম্বারে। ঢুকেই মনে হয় একটা কোয়্যারান্টাইন কামরা। তবে, বেশ একটা হলিউডি গা ছমছম আছে কিন্তু।  

- এ জায়গাটা ভিড়ভাট্টা থেকে বেশ খানিকটা দূরেই বটে।

- এখানে নতুন চেম্বারটেম্বার ফেঁদে বসার তাল করছেন নাকি? ডুবতে হবে, এই বলে রাখলাম। লোকালয় থেকে এত দূরে লোকজন আসবে ভেবেছেন?

- এ চেম্বারটা ঠিক নতুন নয় অনিলবাবু৷ ইনফ্যাক্ট আমার ট্রীটমেন্টের মূলপর্বটা এখানকার জন্যই তোলা থাকে।

- মানে শহরের চেম্বারটা স্রেফ দেখনাই ডক্টর? এই  পাণ্ডববর্জিত অঞ্চলের আস্তানাটাই মূল?

- না না, তা কেন। ডায়াগনোসিসটা আপনার শহরে বসেই ভালোভাবে হয় বটে। আর এই নিরবিলি চেম্বারে হয় ট্রীটমেন্ট; আদত চিকিৎসা।  

- বেশ হেঁয়ালির মেজাজে রয়েছেন দেখছি।

- সমস্ত খোলসা করতেই তো আপনাকে ডাকা।

- তা আপনার ডায়াগনোসিস কী বলছে। আমার মূল সমস্যা কোথায় বলুন তো। 

- ডায়াগোনিস স্পষ্ট। যে সমস্যায় এ শহরের সমস্ত মানুষ জেরবার; আপনার সমস্যাও তাঁদের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। সমস্যা একটাই; বেঁচে থাকা। আপনার সমস্যা আপনি বেঁচে আছেন।

- এই শুরু হল, হেঁয়ালি থেকে ফিলোসফিতে। 

- হেঁয়ালি নয়। ফিলোসোফি নয়৷ এমন কী কোনো ঠাট্টাও নয়। আবারও বলি; আপনার অসুস্থতা একটাই অনিলবাবু। আপনার বেঁচে থাকা। ও কী.. উঠে দাঁড়ালেন কেন? 

- দেখুন। আমি রোব্বারের ছুটি নষ্ট করে এতটা পথ ঘঁষটে এলাম আপনার "আর্জেন্ট" ডাক পেয়ে। আমি আশা করেছিলাম আপনি বিচক্ষণ আর সুবিবেচক।  শহরে ঘুরে বেড়ানো আর পাঁচটা হাতুড়ের মত টাকাখেকো অকাজের ঢেঁকি নন৷ কিন্তু ব্যাপারটা আপনি যেহেতু সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না..। 

- অধৈর্য হলে চলবে কেন অনিলবাবু? 

- অধৈর্য হব না? একটা জরুরী সমস্যা নিয়ে আপনার কাছে এদ্দিন ধরে আসছি৷ অথচ আপনার ডায়াগনোসিস কী? আমার সমস্যার মূলে হল আমার বেঁচে থাকা।  ইস ইট আ জোক?

- নট অ্যাট অল। আচ্ছা, আপনার সমস্যাটা ঠিক কী ছিল? আই মীন, কেন আপনি প্রথম আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন?

- নিরানন্দ। অবভিয়াসলি। শহরে আর কোনও রোগ বা সমস্যা তো নেই। 

- গোটা শহরে শুধু একটাই রোগ৷ ব্যাপারটা গোলমেলে ঠেকেনি কখনও?

- মেডিকাল সায়েন্সের এমন দুর্দান্ত প্রগ্রেস৷ সব সমস্যার সমাধানই তো হাতের মুঠোয় প্রায়। নেহাত এই নিরানন্দ ব্যাপারটা মহামারীর আকার ধারণ করেছে তাই আপনার মত ডাক্তাররা টু-পাইস করে খাচ্ছে। 

- রাইট। সেই টু-পাইসের প্রতি সততা যেহেতু আমার আছে, তাই আবারও বলছি, এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকাটাই আপনার এই নিরানন্দের মূলে। এবং এর ওষুধ একটাই...।

- ও কী! আপনি কি উন্মাদ হলেন ডাক্তার চ্যাটার্জী? পিস্তলটা নামান৷ প্লীজ! প্লীজ ডাক্তার। 

- এ দুনিয়া না ছাড়লে আপনার মুক্তি নেই অনিলবাবু। আর ডাক্তার হিসেবে রোগীকে ওষুধ না গিলিয়ে আমি ছাড়ি কী করে বলুন। 

- ও...ও'টা বন্দুক ডাক্তার! আ...আমি...আমি আপনার পায়ে পড়ি...আমায় বাঁচতে দিন...।

- এ বেঁচে থাকা মিথ্যে অনিলবাবু...ডাহা মিথ্যে। এ বেঁচে থাকায় যত জড়াবেন, জানবেন নিরানন্দ তত বাড়বে।

- আমি বাঁচতে চাই ডাক্তার। প্লীজ।

- আলবাত বাঁচবেন। তবে এ জগত দেখে বেরিয়ে৷ 

- ভূত হয়ে বাঁচব?

- ভূত হয়েই আপনি বেঁচে আছেন, এ শহরের বাকি মানুষগুলোর মত। এই বন্দুকেই আপনার মুক্তি।

- ভূত হয়ে বেঁচে আছি?

- কারণ এই মিথ্যে শহরে বাঁচতে গিয়ে আপনি আদত বেঁচে থাকা ভুলে গিয়েছেন অনিলবাবু৷ এই মিথ্যে জীবন না ছাড়তে পারলে আপনার মুক্তি নেই। নিরানন্দের শেষ নেই। ইউ হ্যাভ টু ডাই হিয়ার সো দ্যাট ইউ ক্যান লিভ বিয়ন্ড। সুস্থ ভাবে বাঁচতে গেলে এ'খানে আপনাকে মরতে হবে অনিলবাবু। এ জগতে আপনাকে মরতেই হবে। 

- বন্দুকটা সরান। প্লীজ।

- এ বন্দুকের একটা টেকনিকাল নাম আছে অনিলবাবু; ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেশন বাটন। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু