Skip to main content

বাঘবন্দীর খেলা


- অভ্র, শুনলাম তুই মিছিলে যোগ দিবিনা বলেছিস..।
- ঠিকই শুনেছ।
- লাইটার আছে? আমারটা কে যে ঝেড়ে দিলো।
- এই যে।
- একটা সিগারেট না ধরালেই নয়..থ্যাঙ্কস। 
- মনোজদা, ও মিছিলে আমি বেরোব না।
- ভেবে বলছিস তো?
- তুমি তো জানো, আমি চিরকালই এক কথার মানুষ।
- তোর এই ট্রেটটা আমার বরাবরই ভালো লাগে। তুই ইউনিভার্সিটিতে থাকতেই তোকে মার্ক করেছিলাম কি সাধে? তোর মধ্যে একটা ডিসাইসিভ ব্যাপার আছে, তোর ফোকাস আছে,জেদ আছে, অধ্যাবসায় আছে৷ পলিটিক্সে এই ব্যাপারগুলো খুবই জরুরী৷ 
- এ'টা মিছিল নয় মনোজদা...পরিকল্পিত হামলা৷ 
- তুই লম্বা রেসের ঘোড়া৷ পার্টিতে তোর একটা ব্রাইট ফিউচার আছে৷ হাইকম্যান্ড তোর এনার্জি আর ইন্টেলিজেন্সকে যথেষ্ট সমীহ করে। কিন্তু এখন তোকে যদি সহজপাঠ ধরে পড়াতে হয়....দ্যাট ইজ আনফরচুনেট। দ্যাখ অভ্র, প্রতিটা মিছিলই পরিকল্পিত আক্রমণ৷ সে আক্রমণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, পচাগলা সিস্টেমের বিরুদ্ধে। 
- কিন্তু তোমাদের আজকের এই পরিকল্পিত আক্রমণ অন্যায় বা পচা সিস্টেমের বিরুদ্ধে তো নয়। 
- আমাদের? এ পার্টি তোর নয়? 
- কিছু অসহায় মানুষকে মারধোর করে, তাদের দোকানপাট জ্বালিয়ে তোমরা নিজেদের পলিটিকাল ক্যাপিটাল জড়ো করছ৷ এ কাজ করতে তো আমি পার্টিতে আসিনি মনোজদা...।
- এ'সব ফাঁপা বুলি আউড়ে...।
- কোনো লাভ নেই জানি৷ তবে আমায় ডেকেও কোনও লাভ হবে না মনোজদা। 
- বেশ। তবে তোর লাইটারটা বরং আমার কাছেই থাক...। মিছিলে তো আর স্লোগান থামিয়ে অন্যের কাছে দেশলাই চাওয়া যায় না...কী বলিস? আসি৷ মিছিলে না যাস, কাল অফিসে আসিস। একটা ভালো বই পড়াব। কেমন?
- বেশ। 
***
- অভ্রকে আনতে পারলে না তো মনোজদা?
- বড্ড জেদ। আজ ছেলেটা এলোই না রে পটা। 
- বড্ড রোয়াব মালটার। পার্টির স্বার্থে নিজের আইডিয়াল কিছুতেই ছাড়তে রাজী নয়...এদিকে আমরাই হলাম কুলিমজুর মানুষ...মিছিলের পতাকা হোক বা পেট্রোল বোমা; সে বোঝা আমাদেরই বইতে হবে। 
- আইডিয়াল নাকি? হেহ্।
- হাসছ যে বড়?
- পলিটিক্স শুধু রাজনৈতিক ঝাণ্ডা বাগিয়েই হয় রে? পার্টির লাইন মত দু'চারটে মানুষ প্যাঁদানোই দলের একজন হয়ে ওঠার একমাত্র উপায় ভেবেছিস? 
- অত র‍্যালার কথা আমার মাথায় ঢুকলে আজ রাস্তায় নেমে দাঙ্গা না বাঁধিয়ে পার্টি অফিসে বসে টিভি চ্যানেলদের ইন্টারভিউ দিতাম গো মনোজদা।
- শাটাপ রাস্কেল! কতবার বলেছি মিছিলকে মিছিল বলবি। দাঙ্গাটাঙ্গা আবার কী ছোটলোকের মত ভাষা! বল প্রতিরোধ! বল সংগ্রাম!
- ওই হল। ক্যালানি দেওয়ার আগে কত যে ঢ্যামনামো মারাতে হয়। যাক গে, ঝাণ্ডা না বাগিয়ে রাজনীতি কীভাবে করা যায় মনোজদা?
- ধরিমাছনাছুঁইপানিবাজ আইডিয়ালিস্টদের চিনতে পারা; ওটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ক্ষমতা। সে ক্ষমতা আছে বলেই আজ আমি নেতা আর তুই স্রেফ কর্মী। 
- ধ...ধরিমাছ...ধরিমাছ...।
- ধরিমাছনাছুঁইপানিবাজ আইডিয়ালিস্ট। এই যেমন অভ্র। এই আইডিয়ালিসম বেচে ও একদিন বড় কলেজের প্রফেসর হবে, টেড-টক দেনেওলা ইন্টেলেকচুয়ালও হতে পারে। অথচ দ্যাখ, আমি আগুন লাগাতে বেরোচ্ছি জেনেও ও কেমন নিশ্চিন্ত মনে আমায় নিজের লাইটার ধার দিল৷ আইডিয়াল নিয়ে ও আছে; থাকুক। কিন্তু এই টোকেনিজমটুকুকে ত্যাগ করতে পারলে না যখন, ওর মুক্তি নেই রে।
- মুক্তি নেই? 
- আজ অভ্রর লাইটার মিছিলে বেরোবে, তা দিয়ে দু'চারটে দোকানপাট জ্বালাব। কাল অভ্র নিজের বেরোবে মশাল হাতে হারেরেরেরে সুরে। আর এই অভ্রদের সাইলেন্স চিনতে পারি বলেই আমি নেতা...কী বুঝলি? 
- তোমার কাছে বিড়ি আছে গুরু?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু