Monday, March 2, 2020

বাঘবন্দীর খেলা


- অভ্র, শুনলাম তুই মিছিলে যোগ দিবিনা বলেছিস..।
- ঠিকই শুনেছ।
- লাইটার আছে? আমারটা কে যে ঝেড়ে দিলো।
- এই যে।
- একটা সিগারেট না ধরালেই নয়..থ্যাঙ্কস। 
- মনোজদা, ও মিছিলে আমি বেরোব না।
- ভেবে বলছিস তো?
- তুমি তো জানো, আমি চিরকালই এক কথার মানুষ।
- তোর এই ট্রেটটা আমার বরাবরই ভালো লাগে। তুই ইউনিভার্সিটিতে থাকতেই তোকে মার্ক করেছিলাম কি সাধে? তোর মধ্যে একটা ডিসাইসিভ ব্যাপার আছে, তোর ফোকাস আছে,জেদ আছে, অধ্যাবসায় আছে৷ পলিটিক্সে এই ব্যাপারগুলো খুবই জরুরী৷ 
- এ'টা মিছিল নয় মনোজদা...পরিকল্পিত হামলা৷ 
- তুই লম্বা রেসের ঘোড়া৷ পার্টিতে তোর একটা ব্রাইট ফিউচার আছে৷ হাইকম্যান্ড তোর এনার্জি আর ইন্টেলিজেন্সকে যথেষ্ট সমীহ করে। কিন্তু এখন তোকে যদি সহজপাঠ ধরে পড়াতে হয়....দ্যাট ইজ আনফরচুনেট। দ্যাখ অভ্র, প্রতিটা মিছিলই পরিকল্পিত আক্রমণ৷ সে আক্রমণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, পচাগলা সিস্টেমের বিরুদ্ধে। 
- কিন্তু তোমাদের আজকের এই পরিকল্পিত আক্রমণ অন্যায় বা পচা সিস্টেমের বিরুদ্ধে তো নয়। 
- আমাদের? এ পার্টি তোর নয়? 
- কিছু অসহায় মানুষকে মারধোর করে, তাদের দোকানপাট জ্বালিয়ে তোমরা নিজেদের পলিটিকাল ক্যাপিটাল জড়ো করছ৷ এ কাজ করতে তো আমি পার্টিতে আসিনি মনোজদা...।
- এ'সব ফাঁপা বুলি আউড়ে...।
- কোনো লাভ নেই জানি৷ তবে আমায় ডেকেও কোনও লাভ হবে না মনোজদা। 
- বেশ। তবে তোর লাইটারটা বরং আমার কাছেই থাক...। মিছিলে তো আর স্লোগান থামিয়ে অন্যের কাছে দেশলাই চাওয়া যায় না...কী বলিস? আসি৷ মিছিলে না যাস, কাল অফিসে আসিস। একটা ভালো বই পড়াব। কেমন?
- বেশ। 
***
- অভ্রকে আনতে পারলে না তো মনোজদা?
- বড্ড জেদ। আজ ছেলেটা এলোই না রে পটা। 
- বড্ড রোয়াব মালটার। পার্টির স্বার্থে নিজের আইডিয়াল কিছুতেই ছাড়তে রাজী নয়...এদিকে আমরাই হলাম কুলিমজুর মানুষ...মিছিলের পতাকা হোক বা পেট্রোল বোমা; সে বোঝা আমাদেরই বইতে হবে। 
- আইডিয়াল নাকি? হেহ্।
- হাসছ যে বড়?
- পলিটিক্স শুধু রাজনৈতিক ঝাণ্ডা বাগিয়েই হয় রে? পার্টির লাইন মত দু'চারটে মানুষ প্যাঁদানোই দলের একজন হয়ে ওঠার একমাত্র উপায় ভেবেছিস? 
- অত র‍্যালার কথা আমার মাথায় ঢুকলে আজ রাস্তায় নেমে দাঙ্গা না বাঁধিয়ে পার্টি অফিসে বসে টিভি চ্যানেলদের ইন্টারভিউ দিতাম গো মনোজদা।
- শাটাপ রাস্কেল! কতবার বলেছি মিছিলকে মিছিল বলবি। দাঙ্গাটাঙ্গা আবার কী ছোটলোকের মত ভাষা! বল প্রতিরোধ! বল সংগ্রাম!
- ওই হল। ক্যালানি দেওয়ার আগে কত যে ঢ্যামনামো মারাতে হয়। যাক গে, ঝাণ্ডা না বাগিয়ে রাজনীতি কীভাবে করা যায় মনোজদা?
- ধরিমাছনাছুঁইপানিবাজ আইডিয়ালিস্টদের চিনতে পারা; ওটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ক্ষমতা। সে ক্ষমতা আছে বলেই আজ আমি নেতা আর তুই স্রেফ কর্মী। 
- ধ...ধরিমাছ...ধরিমাছ...।
- ধরিমাছনাছুঁইপানিবাজ আইডিয়ালিস্ট। এই যেমন অভ্র। এই আইডিয়ালিসম বেচে ও একদিন বড় কলেজের প্রফেসর হবে, টেড-টক দেনেওলা ইন্টেলেকচুয়ালও হতে পারে। অথচ দ্যাখ, আমি আগুন লাগাতে বেরোচ্ছি জেনেও ও কেমন নিশ্চিন্ত মনে আমায় নিজের লাইটার ধার দিল৷ আইডিয়াল নিয়ে ও আছে; থাকুক। কিন্তু এই টোকেনিজমটুকুকে ত্যাগ করতে পারলে না যখন, ওর মুক্তি নেই রে।
- মুক্তি নেই? 
- আজ অভ্রর লাইটার মিছিলে বেরোবে, তা দিয়ে দু'চারটে দোকানপাট জ্বালাব। কাল অভ্র নিজের বেরোবে মশাল হাতে হারেরেরেরে সুরে। আর এই অভ্রদের সাইলেন্স চিনতে পারি বলেই আমি নেতা...কী বুঝলি? 
- তোমার কাছে বিড়ি আছে গুরু?

No comments: