Skip to main content

মারো গুলি


- দত্ত! অ্যাই যে, দত্ত! আমার টেবিলে খবরের কাগজ আজ একটা কম কেন?
- তিপ্পান্নটা কাগজের জায়গায় বাহান্নটা রয়েছে, এতে অত চেল্লামেল্লির কী হয়েছে মিনিস্টারদাদা?
- সেক্রেটারি হয়ে এত চ্যাটাংচ্যাটাং কথা বলার সাহস তুমি পাও কী করে! ব্যাটার যত বড় মুখ নয় তত বড়..।
- সুইস ব্যাঙ্কের পাশবই আপডেট করিয়ে এনেছি গতকাল।
- তোমার সবদিকে খেয়াল ভায়া। তুমি না থাকলে আমি যে কী করতাম..। 
- বলছিলাম, খবরেরকাগজে মুখ গুঁজে পড়ে না থেকে ব্রেকফাস্টটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলুন৷ দশটা নাগাদ জ্যাপান ডট ওআরজির ডেলিগেটদের সঙ্গে মিটিং আছে। 
- ওহহো,তা ওদের জন্য লাঞ্চের ব্যবস্থা কী করেছ? বড্ড বায়নাক্কা ওদের। লিথিয়ামটিথিয়াম কিন্তু ওদের জন্য বড্ড স্পাইসি।
- মিনিস্টারদাদা, টোটালি সোলার বুফে রেখেছি৷ চেটেপুটে খাবে। 
- গুড গুড। ওদের ক্ষেত্রে অবশ্য একটা সাফক্লাস সুবিধে আছে। আমাদের মত মানুষ ট্যাঁকে নিয়ে ঘোরার বিশ্রী ঝ্যামেলা ওদের নেই।
- ঝামেলা বলে ঝ্যামেলা। মালগুলো দু'আনার কাজ করে আর বারো আনার অধিকার দাবী করে। 
- আহা দত্ত, ওরা আহাম্মক হতে পারে, তা বলে ওদের মাল বলে ডেকো না। ওরা না থাকলে তো আর আমরা...।
- আহাম্মক, নেকুপুষু, রিসোর্স-খেকো; কিছু বলতেই আর দোষ নেই। এই যেমন ডাইনোসরদের ফ্যাট আগলি বাস্টার্ডাস বললেও সেন্টিমেন্ট হার্ট করার ব্যাপার থাকে না।
- আমি ঠিক বুঝতে পারছি না দত্ত...।
- মিনিস্টার সব কিছু বুঝলে সেক্রেটারি তার ন্যাজটা নাড়বে কী করে বলুন। বুঝিয়ে বলি বরং, এখন কিন্তু আমরাও জ্যাপান ডট ওআরজি'র মত সুপারপাওয়ার...সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডাক এলো বলে...। 
- বলো কী দত্ত! কিন্তু দেশে মানুষ থাকলে তো..।
- মিনিস্টারদাদা...তিপ্পান্নটা কাগজের মধ্যে কোন কাগজটা কম সে'টা বোধ হয় খেয়াল করেননি৷ এ দেশের খবরের কাগজগুলোর মধ্যে একটাই ছিল ব্যাটাচ্ছেলে মানুষগুলোর। 
- সে কাগজ বন্ধ করে দিয়েছ?
- আজ্ঞে না, সে কাগজের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ইন্ডিয়া ডট বিজের যত মানুষ; সব এক্কেরে একরাতে ঝেঁটিয়ে সাফ করেছি। এ'বার থেকে শুধুই আমরা। কন্ট্রোল রুমে বসে যে বোতাম যেমন টিপবেন, দেশের সক্কলে তেমনই মুণ্ডু দোলাবে।
- এ'বার থেকে..শুধু...শুধুই আমরা? শুধুই রোবট...? 
- কে...কেন?
- আরে মালগুলোর খালি কথায় কথায় প্রতিবাদ। কাজেকম্মে এন্তার ভুল অথচ অনবরত হিউমান রাইটস হিউমান রাইটস বলে ভ্যাজরভ্যাজর করেই চলেছে৷ এ'সব ন্যাকাপনা চলতে থাকলে ইন্ডিয়া ডট বিজ ক্র‍্যাশ করতই৷ কাজেই...ওই তর্ক-লজিক-ডিবেট ঢের হয়েছে। গুলি করে মেরে ফেলবার সহজ উপায় থাকতে শৌখিন যুক্তিতর্কে অকারণ সময় নষ্ট করার যে কী দরকার।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু