Skip to main content

আ ক্লিয়ার ব্লু স্কাই



জনি বেয়ারস্টোর বায়োগ্রাফিতে আর যাই থাক, ওয়ার্নের জীবনীতে বর্ণিত সেই ক্রিকেটীয় থ্রিল নেই৷ কিন্তু এ বই পড়ার জন্য সে অর্থে ক্রিকেট ভক্ত না হলেও চলে। কালপুরুষ ছবির শেষে সমুদ্র ঘেঁষে পিতা-পুত্রের হেঁটে যাওয়া যারা দেখেছেন, নিশ্চিত ভাবেই সেই সিনেমার ভবঘুরে বাঁশিওয়ালার সুর ভোলেননি। আমি ভুলিনি। আর গোটা বই জুড়ে সেই সুর ঘুরে ফিরে আসে।
স্পয়লার নয় (জীবন থেকে তুলে আনা এমন তরতাজা গল্পের স্পয়লার হয় না), শুধু বইয়ের পটভূমিটা দু'লাইনে বলা যায়৷ জনির বয়স যখন সাত তখন ওর মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। তার কিছুদিনের মাথায় জনির বাবা ডেভিড বেয়ারস্টো (যিনি নিজেও একজন ক্রিকেটার, ইয়র্কশায়ারের এক প্রাক্তন মহারথী বলা চলে) আত্মহত্যা করেন। সে'খান থেকে জনি যে হারিয়ে যাননি তার প্রমাণ তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার। বলাই বাহুল্য যে সেই উত্থান নিয়ে একটা রূপকথার মত গল্প বলা যেতেই পারে। কিন্তু এ বইয়ে ঠিক রূপকথার মেজাজ নেই। 


এক খোকা পথ হাঁটছে আর অনবরত নিজের বাবার না-থাকা-টুকুকে পেরিয়ে আবছা কিছু স্মৃতি আঁকড়ে নিজের বাপের গন্ধ খুঁজে নিচ্ছে৷ সিনিয়র বেয়ারস্টোও উইকেট কীপার ছিলেন, তাঁর দুম করে চলে যাওয়ার গুমোটে আটকে না থেকে জুনিয়র বেয়ারস্টো উইকেটকীপিং গ্লাভস হাতে তুলে নিচ্ছেন; ব্যাপারটা যেমন যন্ত্রণাদায়ক তেমনি সুন্দর। এই বই না পড়লে অবশ্য সেই দোলাচলটা টের পাওয়া যাবে না। মতি নন্দীর উপন্যাস হতে পারত এ বই; সহজেই। 
এ বইয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিষাদ। অথচ এ বইয়ের নাম "আ ক্লীয়ার ব্লু স্কাই" কী অপূর্ব ভাবে সার্থক। ক্রিকেটার জনি বেয়ারস্টোর আত্মজীবনী পড়তে বসেছিলাম৷ বই শেষ করে টের পেলাম যে বেয়ারস্টোর আত্মজীবনীই বটে; তবে পুত্র জনির নয়, পিতা ডেভিডের।
নিজের বাপের বিষাদকে এমন ভাবে ভালোবাসায় মুড়ে রাখতে খুব বেশি মানুষ পারেননি। জোনাথন মার্ক বেয়ারস্টো পেরেছেন আর এক মন ভালো করা গল্পের মাধ্যমে নিজের বাপকে মৃত্যুঞ্জয় করে তুলতে পেরেছেন। 
এ বই না পড়লেই নয়।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু