Skip to main content

লুচিম্যান


১।

দুর্যোধন - ধনসম্পত্তি তো সবই খোয়ালেন দাদাভাই। এখন পরের দান খেলবেন কী বাজি রেখে?

ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির (লুচি বেগুনভাজা মুখে দিয়ে) - তাই তো হে। এ তো মহাসমস্যায় পড়া গেল। বাজি রাখতে না পারলে তো আবার পাশার টেস্টম্যাচ ছেড়ে ছেড়ে টুয়েন্টি-নাইনের টিটুয়েন্টি খেলতে হবে। রোব্বার সক্কাল সক্কাল টুয়েন্টি নাইন ঠিক জমবে না। কী যে বাজি রাখি...।

দুর্যোধন (এক চামচ দুধ-কর্নফ্লেক্স মুখে চালান করে) - আপনার পাতে অতগুলো লুচি বেগুনভাজা পড়ে। ও'গুলোই না হয়ে দাঁওতে রাখুন...।

ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির - মুখ সামলে রে রাস্কেল। নিজের পাতের লুচি দিয়ে জুয়ো খেলব? তার চেয়ে বরং...তার চে'বরং...আমার এই ভাইগুলোকে এক এক করে বাজি রাখি...।

২।

কুন্তী (দরজা খোলার আগেই) - পাঁচ ভাই ভিক্ষেতে যা পেয়েছ তা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিও।

যুধিষ্ঠির - এক মিনিট। আজ আমি ভিক্ষেতে লুচি মোহনভোগ পেয়েছি৷ এর ভাগ চাইলে আমি কালই কৌরবদের কোম্পানিতে ক্লার্ক হিসেবে জয়েন করব। এই বলে রাখলাম। 

৩।

কৃষ্ণ - দ্রোণকে না আটকালে সমূহ বিপদ।

যুধিষ্ঠির - হোক গে বিপদ। তাই বলে ধর্মপুত্র হয়ে মিছে কথা বলব? অসম্ভব। 

কৃষ্ণ - বুড়ো যে'ভাবে যুদ্ধ করছে তা'তে আমাদের সব সৈন্য আজকের মধ্যেই সাবাড় হয়ে যাবে যে।

যুধিষ্ঠির - হোক গে। কিন্তু কেশব, অধর্মে মত দিই কী করে বলো...। বাজারে আমার একটা রেপুটেশন আছে..।

কৃষ্ণ - আরে কী মুস্কিল...যুদ্ধে হারলে তোমার রাজ্য যাবে, মানইজ্জত যাবে...।

যুধিষ্ঠির - ধর্ম তো থাকবে ভায়া৷ রিল্যাক্স৷ 

কৃষ্ণ - হারলে সপরিবারে জঙ্গলে ফেরত যেতে হবে ধর্মপুত্তুর। আর জঙ্গলে তো জানোই, রোব্বারের জলখাবারে লুচি-ছোলারডালের বদলে শাঁকালু আর শসা।

যুধিষ্ঠির - আকাশের রং খয়েরী৷ আমার নাম অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ শুয়োরদের আমি পেখম তুলে নাচতে দেখেছি৷ বুলাও দ্রোণকে। দেখাচ্ছি মিথ্যের ফুলঝুরি কাকে বলে। 

৪।

ঈশ্বর - আসুন ধর্মপুত্র৷ আসুন আসুন। কী সৌভাগ্য আমার। কী সৌভাগ্য৷ নশ্বর মানুষ হয়েও পায়ে হেঁটে স্বর্গে এসে পৌঁছলেন, এ কি কম কেরামতির ব্যাপার? ব্রাভো। ব্রাভো। 

যুধিষ্ঠির - হেহ, থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ৷ তা বলছিলাম যে..।

ঈশ্বর - এ যে কী ফ্যান্টাস্টিক ব্যাপার৷ অমন মহীয়সী দ্রৌপদী পাহাড়ের রাস্তায় ফসকে গেল। নকুল সহদেবের মত স্মার্ট দু'জন টেঁসে গেল। বীর অর্জুন ডাহা ফেল করে নিকেশ হয়ে গেল। আর এমন মহাশক্তিমান ভীম, সেও পুজোপ্যান্ডেলহপিং লেভেল হাঁটাহাঁটির চোটে খতম। এক তুমিই নিশ্চিন্তে হেঁটে স্বর্গলাভ করলে...।

যুধিষ্ঠির - সে'সব তো হল কিন্তু...।

ঈশ্বর - তুমি জিনিয়াস...। তুমি ঘ্যাম। 

যুধিষ্ঠির - আরে ধুর সে'সব তো বুঝলাম৷ দেখুন,সোজাসুজি বলছি। আমি স্রেফ টপ-কোয়ালিটি লুচি ভাজার গন্ধ পেয়ে... একটানা হেঁটে...পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে..লুচির সুবাসের উৎসে এসে পৌঁছলাম। আপনার হেঁসেল কে সামলায় বলুন দেখি? ভারী চমৎকার লুচি ভাজে তো। আমায় আগে সেই লুচির কাছে নিয়ে চলুন প্লীজ। এদ্দূর হেঁটে এলাম...আর গড়িমসি সহ্য হচ্ছে না।

ঈশ্বর - তুমি সত্যিই মহাত্মা হে যুধিষ্ঠির। গোটা স্বর্গই যে লুচি ভাজার সুবাসে পরিপূর্ণ। ওয়েলকাম ব্রাদার, ওয়েলকাম।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু