Skip to main content

অন্য বেয়াল্লিশ



- গুরু, খৈনি হবে?
- মাইরি ডগলাস, তোমার মত ফচকে ছোকরা আর দুটো দেখিনি। আমি কি তোমার পাড়ার মোড়ের বেঞ্চিতে বসে আড্ডা দেওয়ার ইয়ারদোস্ত? ব্রহ্মাণ্ড চালাতে হয় আমায়। তোমার মত ছিচকে ভূত নই।
- আরে অত ঘ্যাম নিয়ে কী হবে গুরু। বেশ তো চুনে খৈনিতে ডলছিলে৷ দাও দেখি এক চিমটে।
- সাহেবসুবো মানুষ তুমি। এ'সব বিশ্রী নেশা তোমায় মানায় না।
- ঈশ্বর হয়ে মুখ টোপলা করে দিনরাত বসে আছ গুরু। আমি কৌনসি খেত কা মুলি৷ দাও গুরু। এক চিমটে দাও।
- এসো। 
- আহা, অমৃত। আচ্ছা গুরু, এত জটিল হিসেবকিতেব সামাল দাও কী করে বলো দেখি। যখনই দেখি খৈনি ডলে যাচ্ছ; ঈশ্বর হয়ে দুনিয়া সামাল দাও কখন?
- আমি ক্লার্ক নই ভায়া ডগলাস যে মুখ গুঁজে ফাইল ঘঁষটে যাব। সিস্টেম নিজের মত চলছে, আমি শুধু মাঝে মধ্যে "নাজুক নাজুক" বলে চলকে উঠি বা "তৌবা তৌবা" বলে চুকচুক করি।
- সিস্টেম। নাকি?
- এক্কেবারে ট্রায়েড অ্যান্ড টেস্টেড।
- সিস্টেমটা একটু খোলসা করো না গুরু৷ তোমারও কাজ নেই, মড়া হয়ে আমিও ফ্যা-ফ্যা করে টহল দিচ্ছি। একটু না হয় ভালো ভালো কথা শুনি।
- এ যে সব প্রশ্নের সেরা প্রশ্ন ভাই ডগলাস।
- উত্তরটা ছাড়ো না। 
- বলি?
- খৈনিদাদা, বলেই ফেলো।
- বেয়াল্লিশেই জবাব।
- বেয়াল্লিশ? লেগপুল করছ গুরু?
- না না, যাকে খৈনির ভাগ দিয়েছি, তার ঠ্যাং টানব কেন। তবে সিস্টেমের সিক্রেটটা বেয়াল্লিশ দিয়ে বোঝালে তুমি বুঝবে ভালো। 
- হেঁয়ালি না করে ঝেড়ে কাশো দেখি গুরু।
- পৃথিবীর কথাই বলি। আজ সক্কাল সক্কাল এক বাড়িতে সুতীব্র কথা কাটাকাটি শুরু হল। ব্যাপার তেমন গায়ে মাখার মত নয়। যা হয় আর কী; গরীবের সংসার, দানাপানি নেই। খিদের জেরবার খোকাখুকুদের কান্না থামারও নাম নেই। বিশাল সংসারে আয়ের মানুষ দু'জন। সেই খোকাখুকুর বাপ আর তাদের দাদু। ঝগড়া বেঁধেছিল সেই বাপ আর দাদুর মধ্যে; সক্কালসক্কাল।
- ঝগড়া কেন? আর এর সঙ্গে বেয়াল্লিশের কী সম্পর্ক?
- খৈনি চিবোনো আর গল্প শোনার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো সমীচীন নয় ডগলাস৷
- বেশ। বাপ-দাদুর ঝগড়া। কেন?
- দিন আনি দিন খাই সংসার। নাতিনাতনির কান্নার শব্দ সহ্য করতে না পেরে জঞ্জালকুড়িয়ে দাদু চাইছে কাজে বেরোতে। কিন্তু বাপ বলছে ঘরে দানাপানি না থাকলেও কাজে বেরোনো অসম্ভব। সেই নিয়ে ঝগড়া। 
- ও মা! ঘরে খাবারদাবার নেই, এদিকে কাজে বেরোবে না? 
- শহরে দাঙ্গা লেগেছে যে। বিস্তর কাটাকাটি রক্তারক্তি। রাস্তায় প্রাণ হাতে করে বেরোতে হচ্ছে। আর বড়লোকদের না হয় বাতেলায় দিন কেটে যায়। গরীবদের ভয় বেশি। 
- ওহ্।
- কিন্তু বাপ যতই আপত্তি করুক, দাদুটি তো বাপের বাপ। সে কথা শুনবে কেন? খোকাখুকুর দাদু খোকাখুকুর বাপের কথায় পাত্তা না দিয়ে থলে কাঁধে বেরিয়ে পড়ল!
- এতে বেয়াল্লিশ কী? আর সিস্টেমই বা কোথায়?
- ধৈর্য ডগলাস। ধৈর্য। 
- যেয়াজ্ঞে। অতঃপর?
- তা দাঙ্গার চোখরাঙানি অগ্রাহ করে দাদু বেরিয়ে পড়ল কাজে। কারণ সে নিশ্চিত লোকের এ পাগলামি বেশিদিন চলতে পারে না, দাঙ্গা এখন স্তিমিত। কাজকর্ম বন্ধ করে ঘরে বসে থাকাটা পাপ। খোকাখুকুর খিদের কান্না সহ্য করাটা পাপ। মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। আর সেই বিশ্বাসের ভরসায় সে বৃদ্ধ কাজে বেরোলেন; দিনের শেষে যদি দু'টো রুটির ব্যবস্থা করে ফেরা যায়।
- তারপর? গুরুদেব?
- সন্ধ্যে হল কিন্তু গেরস্থালীতে রুটি এলো না, ফিরল দাঙ্গার টাটকা শিকার; দাদুর লাশ। তবে অন দ্য প্লাস সাইড; বুঝলে ভায়া ডগলাস, দাদুর লাশ দেখা যন্ত্রণায় নাতি-নাতনিরা একটা রাত্রের জন্য অন্তত খিদের জ্বালাটা ভুলতে পারল। 
- ওহ...কিন্তু গুরু, এ'তে বেয়াল্লিশ কোথায়?
- শহরের দাঙ্গায় সে খোকাখুকুর দাদুই যে বেয়াল্লিশ নম্বর লাশ ভায়া ডগলাস। বেয়াল্লিশের উদাহরণ দিয়ে সিস্টেমের মূলমন্ত্রটা তোমায় বোঝাতে সুবিধে হবে বলে মনে হল। অন্ধকার যতই বেড়ে চলুক, মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করে পথে নামবে আর বারবার সে বিশ্বাসভঙ্গ হবে৷ এ'ভাবেই বিশ্বাস আর বিশ্বাসভঙ্গের ইতিহাস চক্রাকারে ঘুরে চলেছে এবং চলবে। যদ্দিন তদ্দিন। ঈশ্বর হয়ে আমারও কিছু করার নেই৷ আর এক রাউন্ড খৈনি ডলি বরং, কী বলো ভাই ডগলাস?
পুনশ্চঃ
১। ধর্মের কথাই যখন হচ্ছে, তখন স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে "অতিরঞ্জন" এ পাতি ব্লগারের ধর্ম৷ তবে বেয়াল্লিশ নম্বর লাশের খবরটা নেহাত ভ্রান্ত নয়। ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০; "দ্য হিন্দু"র প্রথম পাতার খবর - Delhi Violence: 1 killed in fresh attack; toll touches 42।
২। ডগলাস অ্যাডামস সাহবের হিচহাইকারস গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি অনেকেই পড়েছেন৷ যারা পড়েননি (এইবেলা পড়ে ফেলুন), তাঁদের জন্য কোট করলামঃ
"The number 42 is, in The Hitchhiker's Guide to the Galaxy by Douglas Adams, "The Answer to the Ultimate Question of Life, the Universe, and Everything", calculated by an enormous supercomputer over a period of 7.5 million years. Unfortunately no one knows what the question is." (এই লেখা সে বইয়ের রিভিউ বা সে বই প্রসঙ্গে আদৌ নয়)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু