Skip to main content

বইমেলার ভীড়ে


- এত মানুষ বই কেনে রে বিল্টে?
- এত্ত এত্ত মানুষ।
- শয়ে শয়ে হাজারর হাজারে দোকান। সবার বিক্রিবাটা হয়?

- এক্কেবারে লাল হয়ে যায় মামা। লাল হয়ে যায়।
- এত লেখা হয়? ছাপার জন্য এতশত লেখা পাওয়া যায়?
- পাওয়া যাবে না কেন? দিস্তে দিস্তে লেখা হচ্ছে রোজ। দিস্তে দিস্তে।
- দিস্তে দিস্তে লেখার মত এত লেখক কি সত্যি আছে রে বিল্টে?
- রীতিমতো আছে, ঠাসাঠাসি করে আছে৷ ঠাসাঠাসি।
- এত লেখা...এত সমস্ত লেখা পড়ার মানুষ আছে? 
- প্রচুর মানুষ পড়ে মামা। গাদা গাদা পড়ে। পড়েই চলে।
- কিন্তু বিল্টে...আমি পড়ি কই...। কেন যে এ'সব বইমেলাটইমেলায় আমায় টেনে আনিস..। তখন থেকে এই এক স্টলেই বা কেন দাঁড়িয়ে আছি... আধঘণ্টা হতে চলল রে...।
****
- মাসে দু'চারটে চিঠি লিখলে তোর খুব ক্ষতি হবে রে বিল্টু?
- আমি লিখব? তোকে
- আলবাত লিখবি। আমরা সামনের মাসে যোধপুর চলে যাচ্ছি, তুই চিঠি না লিখলে চলবে কেন?
- আজকাল লোকে চিঠিটিঠি লেখে?
- গাদাগুচ্ছের লেখে। গাদাগুচ্ছের। 
- সে'সব পড়ার সময় আছে মানুষের?
- চিঠি পড়ার সময়? অঢেল। অঢেল। 
- সে'বার সমরবাবুর ফিজিক্স টিউশনির টাকা ফাঁকি দিয়ে তোর জন্য বইমেলা থেকে বই কিনে দিয়েছিলাম। আজও পড়লি না,কচু দেব গাদাগুচ্ছের চিঠি।
- আমায় আবার একবার বইমেলা নিয়ে যাস, কেমন? বাবু?
- পুরনো বইগুলোই পড়িস না৷ তোকে নিয়ে যাব বইমেলায়? ছোহ্। 
- তুই পড়িস তো। তুই বই চেনাবি। আঙুল নাচিয়ে দেখাবি; হুইয্যে সঞ্জীব, হুইয্যে শীর্ষেন্দু। আর আমার মন পড়ে রইবে কাটলেটের দোকানে। আর কাগজের ফুলের স্টলে। 
- ধুস।
- ধুস? তুই বইমেলা দেখাবি, আমি তোর মত করে বইমেলা চিনব, সে বেলা ধুস? থাক, তোর আর চিঠি লিখে কাজ নেই। তোর দেমাক বড্ড বেশি।
***
মৃণালিনী স্টলে প্রায় চল্লিশ মিনিট মত ছিল। নিজের জন্য "লোটাকম্বল" বইটা নিল আর যে বারো বছরের ছিপছিপে ছেলেটা মৃণালিনীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিল; তার জন্য নিল গোটা ফেলুদা সমগ্র। 
ভীড়ের আড়ালে থেকে আর মামার বাজে প্রশ্নের ঢেউ ডজ করে সমস্তটাই লক্ষ্য করল বিল্টুকুমার৷ মৃণালিনী "লোটাকম্বল" বইটা নিল দেখে সামান্য ঢোঁক গিললে সে৷ টিউশনির টাকা সরানোর পাপের টাকায় কেনা "লোটাকম্বল" না পড়ে হয়ত ভালোই করেছে মৃণালিনী। 
তবে যোধপুরে নিয়মিত চিঠি লিখতে না পারার আফশোসটা বহুদিন পর ফের একবার বিল্টুবাবুর মনের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু