Sunday, March 1, 2020

বইমেলার ভীড়ে


- এত মানুষ বই কেনে রে বিল্টে?
- এত্ত এত্ত মানুষ।
- শয়ে শয়ে হাজারর হাজারে দোকান। সবার বিক্রিবাটা হয়?

- এক্কেবারে লাল হয়ে যায় মামা। লাল হয়ে যায়।
- এত লেখা হয়? ছাপার জন্য এতশত লেখা পাওয়া যায়?
- পাওয়া যাবে না কেন? দিস্তে দিস্তে লেখা হচ্ছে রোজ। দিস্তে দিস্তে।
- দিস্তে দিস্তে লেখার মত এত লেখক কি সত্যি আছে রে বিল্টে?
- রীতিমতো আছে, ঠাসাঠাসি করে আছে৷ ঠাসাঠাসি।
- এত লেখা...এত সমস্ত লেখা পড়ার মানুষ আছে? 
- প্রচুর মানুষ পড়ে মামা। গাদা গাদা পড়ে। পড়েই চলে।
- কিন্তু বিল্টে...আমি পড়ি কই...। কেন যে এ'সব বইমেলাটইমেলায় আমায় টেনে আনিস..। তখন থেকে এই এক স্টলেই বা কেন দাঁড়িয়ে আছি... আধঘণ্টা হতে চলল রে...।
****
- মাসে দু'চারটে চিঠি লিখলে তোর খুব ক্ষতি হবে রে বিল্টু?
- আমি লিখব? তোকে
- আলবাত লিখবি। আমরা সামনের মাসে যোধপুর চলে যাচ্ছি, তুই চিঠি না লিখলে চলবে কেন?
- আজকাল লোকে চিঠিটিঠি লেখে?
- গাদাগুচ্ছের লেখে। গাদাগুচ্ছের। 
- সে'সব পড়ার সময় আছে মানুষের?
- চিঠি পড়ার সময়? অঢেল। অঢেল। 
- সে'বার সমরবাবুর ফিজিক্স টিউশনির টাকা ফাঁকি দিয়ে তোর জন্য বইমেলা থেকে বই কিনে দিয়েছিলাম। আজও পড়লি না,কচু দেব গাদাগুচ্ছের চিঠি।
- আমায় আবার একবার বইমেলা নিয়ে যাস, কেমন? বাবু?
- পুরনো বইগুলোই পড়িস না৷ তোকে নিয়ে যাব বইমেলায়? ছোহ্। 
- তুই পড়িস তো। তুই বই চেনাবি। আঙুল নাচিয়ে দেখাবি; হুইয্যে সঞ্জীব, হুইয্যে শীর্ষেন্দু। আর আমার মন পড়ে রইবে কাটলেটের দোকানে। আর কাগজের ফুলের স্টলে। 
- ধুস।
- ধুস? তুই বইমেলা দেখাবি, আমি তোর মত করে বইমেলা চিনব, সে বেলা ধুস? থাক, তোর আর চিঠি লিখে কাজ নেই। তোর দেমাক বড্ড বেশি।
***
মৃণালিনী স্টলে প্রায় চল্লিশ মিনিট মত ছিল। নিজের জন্য "লোটাকম্বল" বইটা নিল আর যে বারো বছরের ছিপছিপে ছেলেটা মৃণালিনীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিল; তার জন্য নিল গোটা ফেলুদা সমগ্র। 
ভীড়ের আড়ালে থেকে আর মামার বাজে প্রশ্নের ঢেউ ডজ করে সমস্তটাই লক্ষ্য করল বিল্টুকুমার৷ মৃণালিনী "লোটাকম্বল" বইটা নিল দেখে সামান্য ঢোঁক গিললে সে৷ টিউশনির টাকা সরানোর পাপের টাকায় কেনা "লোটাকম্বল" না পড়ে হয়ত ভালোই করেছে মৃণালিনী। 
তবে যোধপুরে নিয়মিত চিঠি লিখতে না পারার আফশোসটা বহুদিন পর ফের একবার বিল্টুবাবুর মনের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল৷

No comments: