Skip to main content

জেটবাহাদুর মশাবাহিনী

গুডনাইট অলআউট এইসব বিশ্রী বিষাক্ত যন্ত্রপাতির যুগে হাইকোয়ালিটি মশাদের প্রভাব প্রতিপত্তি আগের চেয়ে বেশ খানিকটা কম। ব্যায়াম করা চাবুক চেহারার মশাদের দল আজকাল আর অত সহজে দেখাও যায়না; অন্তত ঘরে বা অফিসে তো নয়ই। কলেজে পড়ার সময় যে ভাগ্যবান বন্ধুরা নন্দন চত্ত্বরে বসে প্রেম করেছে, তাদের মুখে শুনেছি পালোয়ান মশাদের জেটবাহাদুর গল্প; চুমুর চক-চকাম নাকি সহজেই ঢাকা পড়ে যেত সেই মশাশ্রেষ্ঠদের মঁ-মঁ-মঁ-মঁ গুঞ্জনে। 
আজকাল যে'সব মশা নজরে পড়ে তাদের আর যাই হোক; সুগঠিত সুঠাম সুদৃঢ় বলা চলেনা। বেশির ভাগই কুচিকুচি সাইজের; তাদের কামড়ে ধার নেই। বাকিরা বেঢপ থ্যাবড়া, তাদের বেয়াল্লিশ মাসে বছর; গায়ে বসে সামান্য এক কামড় দিয়েই আর নড়তেচড়তে পারেনা। তাদের থাবড়ে মারতেও মায়া হয়; আলতো ফুঃ দিয়ে "সোনা বাবা" করে উড়িয়ে দেওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। মোদ্দা কথা হল এই অস্থির সময়ে মশা ম্যানেজমেন্টের চ্যালেঞ্জটাই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। 
সামগ্রিকভাবে মেট্রো মশাদের ফিজিকাল ফিটনেস আর প্রত্যুতপন্নমতিত্ব তলানিতে এসে ঠেকেছে। আগে তারা দলবদ্ধ হয়ে ডাকাতে মেজাজে হা-রে-রে-রে সুরে আক্রমণ করত; এখন টুকটাক সিঁদ কাটে বা পকেটে ব্লেড চালানো লেভেলের মিনমিনে কলজে নিয়ে ঘুরঘুর করে। অচিরেই ক্যালক্যাটার মসকিউটোরা মাস স্কেলে কুইট করবে; এ দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঘুরপাক খায়। 
তবে দমবন্ধ করা অন্ধকার ভেদ করে সামান্য আশার আলো আজ দেখতে পেলাম। কলকাতা বিমানবন্দরের তেইশ এফ গেটের সামনে বসে ফ্লাইটের অপেক্ষা করতে করতে টের পেলাম পালোয়ান মশাদের একটা চমৎকার অভয়ারণ্য এখানে গড়ে তোলা গেছে। অসংখ্য মশামহারথী বিভিন্ন ফর্মেশনে আক্রমণ করছে আর এলোপাথাড়ি চড় থাপ্পড়কে অবলীলায় ডজ করে সরে পড়ছে। সবচেয়ে বড় কথা; তারা কামড় দেওয়ার পরেই লেতকে চামড়ার ওপর পড়ে থাকছে না, স্যাট করে উড়ে যাচ্ছে৷ ভোর রাত্রে চোখে সামান্য ঘুম ছিল বটে কিন্তু এমন টীম-পারফর্মেন্স শেষ কবে দেখেছি মনে নেই, কাজেই ওদের হাতে ঘুম ফর্দাফাই হলেও ওদের বোঝাপড়ার তারিফ না করে থাকা গেল না। গালের মশাকে যেই আক্রমণ করতে যাব অমনি আরও তিনটে মশা বাঁ হাতের মধ্যমায় এসে বসেছে; সে'দিকে মন দিতেই ডান হাতের থাপ্পড় গেল ভড়কে আর গালের মশা এক হোমিওপাতি শিশি রক্ত চুষে গায়েব। ভুল দেখেছি কিনা জানিনা তবে ঘুমচোখে একবার যেন মনে হলো এই মশারা বোধহয় হাইফাইভ দিতেও শিখে গেছে।  
এ মশারা প্রত্যেকে হাইলি স্কিলড। তাদের কামড়ে ঝাল নেই, মাইনর কুটুশ আছে; তবে যে'টা মোক্ষমভাবে আছে সে'টা হলা কামড়ানোর কয়েক সেকেন্ড পর ছড়িয়ে পড়া জ্বালা। 

কলকাতা বিমানবন্দর কতৃপক্ষকে আন্তরিক অভিনন্দন কলকাতার মেট্রো-জীবনের বিষণ্ণতার আস্তরণ ভেদ করে এমন হাই কোয়ালিটি মশাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এইমাত্র বোর্ডিং শুরু হয়েছে। জেটবাহাদুর মশাবাহিনীকে "ব্রাভো" বলে এগোলাম৷ এই অকুতোভয় সৈনিকদের আধলিটার রক্তদান করতে পেরে গর্বিত বোধ করছি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু