Skip to main content

কৈলাসের পিসেমশাই


(নীচের ছবি সম্বন্ধে
সূত্রঃ শুকতারা শারদ সংখ্যা ১৯৯১, 
মূল কবিতার নামঃ "কৈলাসপতির কলকাতা দর্শন",
কবিঃ ভবানীপ্রসাদ মজুমদার)

***
- নন্দে, ফটোশপ ব্যাপারটা কী রে?
- সে জিনিসে আপনার আবার কী দরকার গুরু?
- আরে বল না। 
- ও'সব মর্ত্যলোকের জিনিস। তা দিয়ে হবেটা কী।
- আরে ধ্যার রে বাবা খালি ফালতু কথা। প্রশ্ন করলে মাথা নুইয়ে উত্তর দিবি, অত চ্যাটাংচ্যাটাং পাল্টা প্রশ্ন আবার কেন রে নন্দে? ফটোশপ কী তা আদৌ জানিস কি?
- জানি না আবার। কাতুদা তো ওই দিয়েই নিজের গোঁফে অমন জেল্লা জুড়ে মর্ত্যে নিজের ইমেজ বানিয়েছে। এমনিতে তো দিনে বাইশবার দাড়ি কামিয়েও গোঁফ পুরুষ্টু হল না।
- বটে?
- আজ্ঞে। চুঁচড়োয় সে'বার দেখলেন না, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে কাতুদার ইয়াব্বড় পাকানো গোঁফ।
- ছেলেটা এখনও জ্যামিতিটা ভালো করে শিখলনা অথচ বাহারে মেজাজ রপ্ত করেছে সাড়ে ষোলআনা। যাকগে, ওই ফটোশপ ব্যাপারটা একটু হাত কর দেখি নন্দে।
- কিন্তু ফটোশপে আমাদের কাজ কী?
- সিক্স প্যাক না জুড়লে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না রে। এই দ্যাখ না সে'দিন, আমার এক পুরনো ভক্তকে স্বপ্ন দিয়ে বললাম পাড়ার শিব মন্দিরের ত্রিশূলটায় মরচে পড়েছে, একটা নতুন কিনে দিতে৷ ও মা, নাদুসনুদুস চেহারা দেখেই ভাবল বোধ হয় মাই ডিয়ার পিসেমশাই গোছের কেউ৷ ব্যাটাচ্ছেলে সামান্য ত্রিশূল রিপ্লেস করার জন্য অফিসে প্রমোশনের বর আদায় করে ছাড়লে। কোথায় থরহরি কম্প হয়ে হুকুম তামিল করবে তা না! ব্যাটা স্বপ্নের মধ্যে নেগোশিয়েশন শুরু করলে! ভাবতে পারিস?
- অ। তা ফটোশপে আপনার ফুলকো বাইসেপ আর ঘ্যাম সিক্সপ্যাক দেখলে ভক্তরা নিঃস্বার্থ সেবা করবেন ভেবেছেন? সে গুড়ে বালি, কী জিনিস মর্ত্যলোকে ছেড়েছেন গুরু। সব এক একটি চীজ।
- এ আবার কী ভাষা নন্দে। চীজ?
- ও ছোটখাটো ব্যাপার আপনি বুঝবেন না৷ দাঁড়ান, আমি বরং একটা কল্কে সেজে দিই।
- থাম। কথায় কথায় খালি আমায় কল্কে গছিয়ে প্রসাদ পাওয়ার ধান্দা। পার্বতী ঠিকই বলে, তোদের জন্যেই আমি এই মেদ ব্যাপারটা কন্ট্রোল করতে পারছি না। আমার দরকার ডিসিপ্লিন।
- ডিসিপ্লিন গুরু?
- আলবাত। বাড়তি মেদ না ঝরলে...।
- মেদ? আপনার আবার মেদ কোথায় গুরু? ওটা তো বিউটি ফ্যাট।
- বলছিস?
- কী জেল্লা দিচ্ছে। বিষ্ণু স্যরের গ্লেজ আছে বটে, তবে আপনার ন্যাচুরাল গ্লোর ধারে কাছে লাগতে পারবে না। খামোখা আপনি মেদটেদ নিয়ে পড়লেন..। বিষ্ণু স্যর পারত হলাহলকে অমন ব্লু লেগুনের মত স্যাটাস্যাট সাফ করে দিতে?
- পারত না, তাই না?
- এক্কেবারে ছড়িয়ে একাকার করে দিত। যাক গে, কল্কেটা সাজি?
- তা সাজ। তবে ইয়ে নন্দে, কাতুকে বলে ওই ফটোশপটার একটা ব্যবস্থা কর বাবা। বিউটি ফ্যাট নিয়ে কৈলাসে বসে থাকি ক্ষতি নেই, কিন্তু মর্ত্যে একটু ইমেজ মেকওভারের দরকার আছে। নয়ত স্বপ্নাদেশ দিতে গেলেই ভক্তগুলো অকারণ গপ্প জুড়ে দেয়, যেন গুপ্তিপাড়ার পিসেমশাই এসেছে মাখাসন্দেশের হাঁড়ি হাতে। 
- তা নিয়ে আর চিন্তা কীসের। সিক্স প্যাক ঠ্যাক জুড়ে এখুনি আপনাকে ক্যাপ্টেন আমেরিকা করে দিচ্ছি।
- ক্যাপ...ক্যাপ্টেন আ...আমেরিকা? সে'টা আবার কী? ধ্যেত্তোরি, ও'সব বাড়াবাড়ি ভালো নয় নন্দে। 
- যেয়াজ্ঞা। ভাববেন না, কাজ হয়ে যাবে।
- ইউ আর আ গুড বয় নন্দে। এ কাজ করতে পারলে তোকে আমি নিজের হাতে লুচি ভেজে হালুয়ার সঙ্গে খাওয়াবো।
- কে বলবে আপনি গুপ্তিপাড়ার ন'পিসে নন।
- কী বললি রে ব্যাটাচ্ছেলে?
- ও কিছু নয়। এই নিন কল্কে, প্রসাদ দিয়ে ধন্য করুন।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু