Skip to main content

এয়ারপোর্টের সামোসা


এয়ারপোর্টের বাইরে অপেক্ষা করতে করতে ভদ্রলোকের চোখে পড়ল একটা সাজানো-গোছানো খাবারদাবারের দোকান। বার্গারটার্গার, প্যাটিসট্যাটিসের পাশাপাশি রয়েছে মরা সামোসা। ভদ্রলোক কাচের শোকেসের কাছে গিয়ে মন দিয়ে দেখলেন; সামোসাই, শিঙাড়ার লাবণ্য সেগুলির মধ্যে আদৌ নেই।
অনেকক্ষণ ধরে পেটের মধ্যে একটা বিশ্রী খিদে খলবল করে বেড়াচ্ছিল বটে। কিন্তু বেঢপ সামোসার ঠাণ্ডা লাশ চিবুতেও তেমন প্রবৃত্তি হচ্ছিল না। শেষে খিদে যখন পেটের মধ্যে সিঁদ কাটতে শুরু করলে তখন বাধ্য হয়ে সেই কাচের শোকেসের সামনে গিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়ালেন ভদ্রলোক। 
- কী চাই স্যর?
- সমস্যা, থুড়ি, সমোসা। হেহ হেহ। পিজে। 
- ক'পিস দেব?
- ওই একটি ম্যানেজ করতে পারলেই পদ্মশ্রী। 
- হান্ড্রেড অ্যান্ড ফিফটি রুপিজ। 
- পার পিস?
- হ্যাঁ স্যর। 
- মিনিমান তিনশো হওয়া উচিৎ। পার পিস!
- এক্সকিউজ মি স্যর?
- চলুন আড়াইশোয় রফা করছি। কিন্তু তার কম এক পয়সাও নয়। 
- আমি ঠিক বুঝতে পারছি না স্যর।
- উফ আপনি বড় হার্ড বার্গেন করেন মশাই৷ বেশ, সোয়া'দুশোই সই। আর টানাহ্যাঁচড়া করবেন না প্লীজ।
- কিন্তু এর দাম তো দেড়শো টাকা। 
- স্যার, এই ব্রয়লার সামোসার লাশ গেলা তো চাট্টিখানি কথা নয়। নিন, আমায় দুশো টাকা দিন, আমি না হয় একটা চোখনাককান বুজে খেয়েই নিচ্ছি। তবে ক্যাশে দেবেন ভাইটি।
- আমি আপনাকে টাকা দেব? আপনি আমার দোকান থেকে সামোসা খাবেন আর আমি আপনাকে টাকা দেব? মাইরি, ইয়ার্কি পেয়েছেন?
- ও সমোসা খেলে কপালে নিউক্লিয়ার অম্বল নাচছে যে, নির্ঘাৎ। বে অফ জেলুসিলে স্কুবা ডাইভিং করলেও রক্ষে নেই। আপনার এমন দামী শোকেস থেকে ওই লাশ সরানোর জন্য অন্তত দু'শো টাকা দেবেন না? মার্ডার আর ডাকাতি একসঙ্গে করবেন স্যর?
***
ভদ্রলোক সামোসা পাননি৷ আর দোকানিদাদার সেই গোটা বেলাটাপ্রবল অস্বস্তিতে কেটেছিল।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু