Skip to main content

বাপু, নাথু ও ম্যাজিক


- আই শালা, ইদিকে দ্যাখ।
- আমায় বলছ?
- নেংটি শালা তুই ছাড়া আর আছেটা কে। ইদিকে দ্যাখ।
- ইদিকে মানে কোনদিকে?
- নেতানো পাঁপড়ের মচমচ দেখো, প্রশ্ন করে আবার। শালা হাতের রিভলভার দেখছিস না?
- তা দেখেছি। 
- দ্যাখ ব্যাটা গদ্দারচন্দ্র গদগদি! এই দ্যাখ!
- ম্যাজিকট্যাজিক কিছু দেখাবে নাকি বাবু? রিভলভারের নল দিয়ে টুকুস করে গোলাপ বেরিয়ে আসবে?
- বুড়োভামের ফুর্তি দেখে গা জ্বলে যায়। আজ যদি কচুকাটা না করেছি...।
- বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে ঝাঁঝরা করা যায় নাথু। কচুকাটা করতে হলে তলোয়ারই ভালো। 
- দেশের সর্বনাশ করে এমন দেমাক দেখাতে লজ্জা করে না রে হারামজাদা।
- যুক্তির বদলে বন্দুক তুলে নিয়েছ নাথু৷ এ দেশের সর্বনাশ যে হয়নি, সে কথা হলফ করে বলি কী করে বলো। 
- ওরে আমার হরিদাস পাল এলেন হে। ওঁর যুক্তি বহুত খুব আর আমার যুক্তি গবেটামো।
- বন্দুকের নল থেকে গোলাপ বের করে দেখাও দিকি নাথু৷ তখন বুঝব এদ্দিনে কত যুক্তি শিখেছ।
- বাহাত্তর বছর হল, বছরের এই দিনটা রোজ একবার করে তোর বুকে গুলি ঠুসে যাই৷ তবু মাইরি তোর ঢিঁটগিরি গেলনা।
- বেঁচে থাকতে যায়নি, এখন কি আর পাল্টানোর বয়স আছে ভাই নাথু? তবে ওই হালটাল ছাড়তে আমি পারব না৷ একদিন তোমার বন্দুক থেকে গোলাপের ডাঁটি বেরিয়ে আসবেই৷ দেখো। 
- ধেত্তেরি শালা টেকো ফুটানিবাজ।
- তোমার ছাড়ব না ভাই নাথু। যতই তম্বি করো।
- মাইরি, ইচ্ছে করছে তোর মাথায় থানইট ছুঁড়ে মারি। প্রতি বছর এইভাবে আমার বন্দুকের সামনে এসে হ্যাহ্যা করার কোনও মানে হয়? 
- যদ্দিন বেঁচে ছিলাম; তদ্দিন কত কাজ ছিল হে। দেশের জন্য, দশের জন্য৷ এখন তেমন ব্যস্ততা নেই, শুধু অপেক্ষা। আমি তোমার অপেক্ষায় আছি হে নাথু। আজ এই নিয়ে সত্তর বছর হবে। এইভাবে একদিন সাতশো হবে, সাতহাজার হবে। তবে আমার সময়ের অভাব নেই নাথু। তোমার অপেক্ষায় দিব্যি আছি। চালাও।
- আপনি না মাইরি...।
- কই। আজ তাড়া নেই? 
- আমি কিন্তু সত্যিই আজও গুলি চালাব...।
- মিথ্যে কোনোকিছুর সঙ্গেই থেকে লাভ নেই৷ গুলি চালাতে হলে মিছিমিছি ভণিতা না করাই ভালো।
- তাই বলে প্রতিবছর এইভাবে আমার বন্দুকের নলের সামনে এসে আপনি...।
- ঘাবড়ে গেলে চলবে কেন? হয় এইবেলা পাশে এসে বাধ্য খোকাটির মত চুপটি করে বসবে। নয়ত আমার ছাতি তাক করে দুড়ুম! কেমন?
- বেশ! এই যে! নিন!
****দুড়ুম****
- এ কী নাথু!
- এ কী বাপু! বন্দুকের নল থেকে সত্যিই গোলাপের ডাঁটি...। ম্যা...ম্যাজিক!
- হে রাম!
- ও কী! আপনার মনখারাপ কেন?
- কে জানে নাথু। হঠাৎ মনে বড় কুডাক দিল। এক নাথুকে অন্ধকার থেকে টেনে বার করলাম, এ'দিকের দেশের মাটিতে অন্য কোনও নাথু অন্ধকারের দিকে এগিয়ে গেল কিনা কে জানে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু