Skip to main content

মাঝরাত্রের স্কুলবাড়ি আর দাসগুপ্তবাবু



- আসুন মিস্টার দাসগুপ্তা। ওয়েলকাম। ওয়েলকাম টু দ্য ফার্স্ট ডে অফ স্কুল।

- ধন্যবাদ। কিন্তু মানে...আমি ঠিক...।

- বুঝতে পারছেন না? ন্যাচরালি, ন্যাচরালি। ক্লাসরুমে নিয়ে যাওয়ার আগে তাই দেখা করতে এলাম..। আমি এ'খানকার হেডমাস্টার। ইয়ে, শিক্ষক বলতেও আমিই..।

- কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না...এত রাত্রে আমি এই সাতপুরনো ভাঙাচোরা স্কুলবাড়িতে কী করছি? এলামই বা কী করে? 

- ভূতের স্কুল তো পোড়ো স্কুলবাড়িতেই হবে।

- কী? আমি মৃত? 

- অফ কোর্স। আপনি মৃত! আমি বা এ'খানের সমস্ত ছাত্ররা, সবাই...।

- আমি মারা গেছি?

- নিঃসন্দেহে। শুধু মড়ারা এই স্কুলবাড়িটা দেখতে পায়।

- আমি মারা গেছি! ব্যারাকপুরের অরিন্দম দাসগুপ্ত মারা গেছে! 

- আপনি মারা গেছেন! অরিন্দম দাসগুপ্ত মারা যাবেন কেন? তিনি এই মাত্র ইয়ারবাড খুঁজে না পেয়ে "ধ্যারশ্লা" বলে ফের শুতে গেলেন।

- আমিই তো অরিন্দম দাসগুপ্ত।

- মিস্টার দাসগুপ্তা। রিল্যাক্স। ইউ আর নট হিম। ইউ আর জাস্ট আ ডেড ড্রীম অফ মিস্টার দাসগুপ্তা। আপনি দাসগুপ্তবাবুর সদ্য মৃত স্বপ্ন। এ'টা মড়া স্বপ্নদের স্কুল মিস্টার দাসগুপ্ত। 

- ওহ...আমি তাহলে...।

- আচমকা ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে গিয়ে মাকে চমকে দেবেন ভেবেছিলেন। আজ সন্ধেবেলা পৌঁঁছনোর কথা ছিল। ভেবেছিলেন মাকে জড়িয়ে ধরবেন। পাড়ায় হাঁটতে বেরোবেন। দত্তবাজার থেকে ট্যাংরা কিনে এনে মাকে বলবেন ঝাল করতে। রাতে মায়ের পাশ ঘেঁষে শুয়ে কত গল্প। পুরনো পাশবালিশের কাচা ওয়াড়ের সুবাস। শোওয়ার ঘরের জানালার পাশে গন্ধরাজ গাছ। যেই গাছের আশেপাশে দত্তবাড়ির মিতুল ঘোরাঘুরি করত। সে'সব ছোটবেলার কথা ভাবতে ভাবতে আপনার ঘুমিয়ে পড়ার কথা ছিল। আপনি সেই স্বপ্নের মিস্টার দাসগুপ্ত,  আপনি মারা গেছেন। মারা গেছেন।

- তা'হলে...।

- যা হয়। মিস্টার দাসগুপ্তার মিসেস ভ্যাকেশন প্ল্যান করে ফেলেছিলেন। প্লাস ফিরে এসেই অফিসের রিভিউ।  দেশের বাড়িমুখো স্বপ্নের মিস্টার দাসগুপ্তা হ্যাড টু ডাই। দেশের বাড়ির স্বপ্নের মিস্টার দাসগুপ্তা বা আপনি না মরলে আদত দাসগুপ্ত ছিন্নভিন্ন হতেন। এই কিছুক্ষণ আগেই আদত দাসগুপ্ত দেশের বাড়ি ফেরার টিকিট ক্যান্সেল করেছেন।

- অর্থাৎ সে টিকিট ক্যান্সেল করে আদত দাসগুপ্ত আমায় খুন করেছেন। আর আমি ওর মৃত স্বপ্নের ভূত।

- প্রিসাইসলি। তবে মনখারাপ করবেন না। আপনার ক্লাসে অসংখ্য মৃত স্বপ্নের ভূত, ইন ফ্যাক্ট ব্যারাকপুরের অরিন্দম দাসগুপ্তর প্রচুর মড়া স্বপ্ন আপনার ক্লাসমেট হতে চলেছে। ওদের সঙ্গে আলাপ হলে আপনার ভালো লাগবে।

- ইয়ে, আপনার পরিচয়টা হেডমাস্টার স্যার? ক্লাসও তো আপনিই নেবেন?

- ক্লাস আমিই নেব। আমার ডাকনাম সুগা।

- সুগা?

- পুরো নাম সুমনবাবুর গান! 

- ওহ! যাক। ক্লাসরুমটা কোনদিকে সুগাবাবু?

- আসুন আমার সঙ্গে। আর হ্যাঁ, মিতুলদেবীর একটা মড়াস্বপ্ন আপনারই ক্লাসে রয়েছেন, "অরিন্দম একদিন অন্তত জোর গলায় বলবে 'তুই অন্য কাউকে বিয়ে করবি না' " গোছের একটা স্বপ্ন। মরে কাঠ হয়ে ছিল। আমি এই ক্লাসে ভর্তি করিয়ে নিয়েছি। আপনার ইন্টারেস্টিং লাগতে পারে, তাই বললাম। এ'বার চটপট আসুন দেখি, ক্লাস শুরু হতে দেরী হচ্ছে।

Comments

Anonymous said…
Khub sundor lekha.. :)

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু