Skip to main content

অ্যাপোক্যালিপ্স

- এই যে স্যার৷ জ্ঞান ফিরেছে তা'হলে৷ চারদিকে তাকিয়ে দেখুন৷ এই বজরাই হচ্ছে এখন আপনার আস্তানা৷
- বাহ্৷ আপনার এই বজরাটা দিব্যি তো৷
- স্টেট অফ দ্য আর্ট মশাই৷ স্টেট অফ দি আর্ট৷
- বেশ৷ একটু জিরিয়ে নিই৷
- হ্যাঁ। বেশ তো৷ এ'খানে তো আপনার অখণ্ড অবসর৷ সামান্য ব্র্যান্ডি দিই? নাকি চা করে আনব? শুধু ব্ল্যাক টী পাবেন কিন্তু৷
- আপনি কিডন্যাপার৷ আপনি যখন বলছেন, তখন অখণ্ড অবসরই সই৷ যা দেবেন খেতে, তাই রুচবে৷
- অমন খিটখিটে মেজাজে কথা বলবেন না প্লীজ৷ বড় আশা করে আপনাকে নিয়ে এসেছি৷
- তুলে এনেছেন বলুন।
- এহ হে, কিডন্যাপিংয়ের ব্যাপারটা নিয়ে আপনি বেশ ইরিটেটেড বোধ করছেন৷ তাই নয় কি স্যর?
- ইরিটেটেড হওয়া উচিৎ নয়, তাই না? না হয় একটু ক্লোরোফর্ম শুঁকিয়ে চ্যাংদোলা করে তুলে এনেছেন৷ এ আর এমন কী৷
- শুনুন স্যার৷ অমন চ্যাটাংচ্যাটাং কথা বেশি বলবেন না৷ আমি আপনাকে প্রাণে বাঁচিয়েছি৷
- কিডন্যাপ করে?এই বিচ্ছিরি একটা স্টীমারে এনে আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন?
- এক্সকিউজ মি! এ'টা স্টীমার? চারদিকে চেয়ে দেখুন মশাই৷ এ'টা বজরা৷
- তা আমার প্রাণরক্ষা কী'ভাবে করেছেন?


- যে'ভাবে করার কথা ছিল৷ প্রলয় শুরু হয়ে গেছে৷ অর্ধেক পৃথিবী অলরেডি জলের তলে৷ কলকাতা ভেসে গেছে আজ ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ। এক্কেবারে যাকে বলে ডিলিউজড৷ বাকি দুনিয়াটা ডুবে যাবে আগামীকাল দুপুরের মধ্যে৷ সে জলও অবিশ্যি বিষিয়ে যাবে৷ টোটাল ডেস্ট্রাকশন। ধুয়েমুছে সাফ।
- অ্যাপোক্যালিপ্স?
- ইয়েস স্যার৷
- কিডন্যাপার৷ গুল শিরোমণি৷ আপনার বায়োডেটাটা বেশ ইম্প্রেসিভ কিন্তু৷
- উড়িয়ে দিতে পারেন৷ তবে অল্প সময়ের মধ্যেই মালুম হবে, আমি ভুল বলছি না৷
- আপনি নোয়া?
- নোয়া নয়৷ নোয়া ট্যু পয়েন্ট ও৷
- এ'টা আপনার আর্ক ট্যু পয়েন্ট ও?
- আরে মশাই এ তো আর বিফোর ক্রাইস্ট নয়৷ এ'টাও আর্ক নয়, শৌখিন বজরা৷ বললাম তো৷
- গা জ্বলে যাচ্ছে৷
- অবিশ্বাস কেটে গেলে স্বস্তি পাবেন। পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে স্যার৷ আমরাই শুধু রইনু বাকি৷
- তা, ইয়ে৷ আমার এনেছেন কী মতলবে? আপনিও পুরুষ৷ আমিও তাই। যদি পৃথিবীকে রিপপুলেট করতেই হয়, তা'হলে তো আমরা সাফিশিয়েন্ট নই৷ তাছাড়া জন্তুজানোয়ার আর গাছপালার স্যাম্পেলগুলো কই?
- আরে ধুর ধুর৷ আমার বয়ে গেছে এ'সব জঞ্জাল আবার রিক্রিয়েট করতে৷ সব বিষিয়ে গেছে স্যার। সব। এবার সব কিছু ধুয়েমুছে সাফসুতরো হয়ে গেলেই মঙ্গল৷
- তা ভাই, আমিও তো সেই বিষাক্ত পৃথিবীরই একজন। আমিও ভেসে গেলেই ভালো হত না?
- না স্যার৷ না৷ শেষ আলোটুকু আপনার সুরেই ছিল৷ তাই আপনাকে নিয়ে আসা৷ এ বজরায় কয়েক মাসের খাবার মজুদ করা আছে৷ আপনার গিটার, মাউথঅর্গান আর কীবোর্ডটাও আনিয়ে রেখেছি৷ আর রিপপুলেট করার গবেটামো নয়৷ এ'বারে শুধু আপনার গানে গানে ভেসে গিয়ে ফুরিয়ে যাওয়া৷ ব্যাস৷ হিসেব খতম৷ দুনিয়াদারীর হাড়বজ্জাতি আর সহ্য হয় না৷
- আমরা সত্যিই কোথায় আছি বলবেন?
- আমি মিথ্যে বলছি না সুমনবাবু৷ অনন্ত সাগরে আর নিরেট অন্ধকারে; আমরাই শেষ দুই প্রাণবিন্দু৷ আপনার গানই শেষ আলো৷ সে আলো নেভার পর সমস্ত শেষ৷
- ভাই নোয়া..।
- আর গাঁইগুঁই নয় সুমনবাবু৷ ওই যে আপনার গীটার৷ এই নিন, ধরুন। এ'বার একটা গান হোক দেখি৷ আমার আর আপনার কিন্তু সত্যিই আর কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই।

Comments

Shantanik Basak said…
গুরু এটা পুরোওওও চুমু মাইরি......জাস্ট ফাটাফাটিইইই
গুরু এটা পুরোওওও চুমু মাইরি......জাস্ট ফাটাফাটিইইই

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু