Monday, November 11, 2019

আনএথিকাল

পুজোর আদত ক'টা দিন পাণ্ডববর্জিত এলাকায় কাটিয়ে সবে এসে পৌঁছেছি দিল্লীতে।
পাড়ার পুজো মণ্ডপে থেবড়ে বসার শখ অপূর্ণ থাকল বলে দেবীদর্শন করব না, তা কি হয়? মনস্থ করলাম এ'খানেই এ প্যান্ডেল সে প্যান্ডেল ঘুরে প্যারামাউন্টের ডাব-সরবতের স্বাদ গড়িয়াহাটের বরফলেবুজলে মেটাব।

সবে পুজো দেখতে বেরোব এমন সময় শ্বশুরমশাই গদগদ সুরে জানতে চাইলেন;
"ডিনারটা তো বাড়ি ফিরেই সারবে নাকি"?

এমন আনএথিকাল প্রশ্ন শুনে থমকে গেলাম। মুখের মধ্যে একটা বিশ্রী তিতকুটে স্বাদ ছড়িয়ে পড়ল। এই বয়সের একজন নিপাট ভালোমানুষ পুজোয় ঘুরতে বেরোনোর কন্সেপ্ট সম্বন্ধে অবহিত নন?
ঠাকুর দেখে বাড়ি ফিরে ডিনার করব?
এরপর কি আলুপোস্ত দিয়ে পাউরুটি খাব?
প্যারামাউন্টে গিয়ে মশলা দোসার খোঁজ করব?
বর্ষা কেটে গেলে আনন্দমেলা পুজোসংখ্যা পড়ব?
লর্ডসের ব্যালকনিতে জোব্বা পরা সৌরভকে দেখে বাহবা দেব?

Tuesday, October 22, 2019

সহদেবের আশীর্বাদ

বৈঠকখানার ঢাউস মানুষ সমান জানালাটার শিকে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সহদেব৷ ঘরের বাতি নেভানো ছিল, তা'বলে অবশ্য ঘরের মধ্যে আলোর অভাব ছিল না৷ জানালার ও'পাশে বড় রাস্তা, এমনিতেই কলকাতায় রোশনাই আর হৈচৈয়ের অভাব নেই আর এই পুজোর দিনগুলোয় তো শহরের সমস্ত রাস্তাঘাট আলো আর অজস্র শব্দের ঢেউয়ে ভেসে যায় যেন৷
বছরের এই সময়টাতেই বাড়ির সকলে ঘুরতে বেরোয়; কোনোবার পাহাড়, কোনোবার সমুদ্র, কখনও জঙ্গল৷ তাঁরা ফিরে এলে সে'সব জায়গার চোখ ধাঁধানো সমস্ত ছবি দেখেন সহদেব; মনের ভিতর থেকে আপনা হতেই বেরিয়ে আসে "বাহ্, জব্বর"! গৃহকর্তা সুব্রতবাবু সহদেবকে সবিশেষ স্নেহ করেন, তাঁদের সম্পর্কটা ঠিক বাবু আর পরিচারকের নয়; সে'টা সহদেবও বুঝতে পারে৷ তাঁদের সম্পর্কটা তো আজকের নয়; একসময় সুব্রতবাবুর মা একসঙ্গে দু'জনকে হর্লিক্স গুলে খাইয়েছেন, সুব্রতবাবুর বাবা কম চেষ্টা করেননি সহদেবকে লেখা পড়া শেখাতে৷ কিন্তু স্বভাবে চটপটে হলেও লেখাপড়ার ব্যাপারটায় কোনোদিনই ঠিক সুবিধে করে উঠতে পারেননি সহদেব৷ সবার কি সব হয়? এই না হওয়াগুলো নিয়ে কোনো দু:খ পুষে রাখেননি তিনি৷
সুব্রতবাবু মাঝেমধ্যেই অবশ্য ইচ্ছে প্রকাশ করেন পুজোর ছুটিতে সহদেবকে বগলদাবা করে ঘুরতে বেরনোর৷ কিন্তু এত বড় বাড়ি এতদিনের জন্য ফাঁকা ফেলে যাওয়াটা বেশ ঝুঁকির ব্যাপার৷ অবশ্য এ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও এক রাতের বেশি কাটাতে সহদেবেরই কেমন অসোয়াস্তি লাগে৷ চোদ্দে বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর মনসাপুর গ্রাম ছেড়ে এ বাড়িতে এসে উঠেছিলেন, তারপর থেকে এ বাড়ির বাইরে দিন দুয়েকের বেশি কখনও কাটিয়েছেন বলে মনে পড়ে না৷ ছুটি কাটিয়ে ফিরে সুব্রতবাবুর নয় বছরের ছেলে টিপু চোখ বড় করে হাত পা নেড়ে তাঁকে ঘোরার গল্প করবে আর খুন্তি নাড়তে নাড়তে সহদেব সে'সব গল্প গিলবেন; সে'টাই বরং বেশি মজার৷
বাড়ি ফাঁকা থাকলে অবিশ্যি রান্নাবান্নার দিকেও বিশেষ মন থাকেনা সহদেবের৷ ভাতেভাত খেয়েই বেশির ভাগ দিন কেটে যায়৷ তার চেয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতেই তাঁর ভালো লাগে৷ কত মানুষ, কত হাসি, কত আনন্দ৷ বাতাস ভারী হয়ে থাকে ভাজাভুজির গন্ধে৷ বাড়ি থেকে কয়কশো পা হেঁটেই খান দুয়েক পেল্লায় পুজো৷ দিনে একবার সে'খান থেকে ঘুরে আসেন সহদেব, এমন ভীড় তাঁর নেহাত মন্দ লাগে না৷ এত মানুষ একসঙ্গে আনন্দ করছে, তাদের হাসি হৈহৈ, লাইন দিয়ে প্যান্ডেলে ঢোকা, তাদের মোবাইল ক্যামেরা খচরখচ, খাওয়ার দোকানের স্টলগুলোর সামনে জমাটি ভীড়; এ'সব কিছুই বড় ভালো লাগে সহদেবের৷ সহদেব মনে মনে ভাবে; আহা রে, এ'দের কতজনের মনের মধ্যে কত রকমের দু:খ; কারুর টাকার অভাব, কারুর সম্পর্ক ভেঙেছে, কারুর প্রিয়জনের বিষম অসুখ, কারুর ভাগ্যে অনবরত শনি ঘুরপাক খাচ্ছে; কিন্তু এই পুজোর যাবতীয় রোশনাই আর শব্দে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়তে কসুর করছে না৷
টিপুর একটা কথা সহদেবের কানে বড় মিঠে সুরে ঠেকে; পুজোর প্ল্যান৷ পুজোর মাস তিনেক আগে থেকেই ডাইনিং টেবিলের আড্ডায় তাদের জোরদার পুজোর প্ল্যান চলে, নিজের মতের দিকে ঝোল টানতে টিপু মাঝেমধ্যেই সহদেবের সমর্থন আদায় করতে চায়.." তাই না স'দেবকাকা"? অথবা "আমি ঠিক বলছি তাই না স'দেবকাকা? বলো না বাবা মাকে...এ'বার পুজোয় আমরা প্রতিদিন শুধু চাইনিজ খাব"৷ সহদেব বরাবর না হেসে সমর্থন জানান৷

রাস্তায় উপচে পড়া মানুষের ভিড় দেখে "পুজোর প্ল্যান" কথাটা মাঝেমধ্যে মনের মধ্যে আউড়ে থাকেন সহদেব৷ এই সমস্ত মানুষের "পুজোর প্ল্যান" আছে৷ সহদেব নিজে ভক্ত মানুষ, সকালে ঠাকুরকে প্রসাদ না দিয়ে নিজে জলস্পর্শ করেন না৷ কিন্তু এই জানালার শিকে মাথা রাখতে রাখতে সহদেবের মাঝেমধ্যে মনে হয় 'পুজোর প্ল্যান' ব্যাপারটা বোধ হয় ভক্তির চেয়ে কম গুরুতর নয়৷

রাস্তার ভিড়ে খুড়কুটোর মত ভাসতে থাকা প্রতিটি মানুষের পুজোর প্ল্যান আছে, সমস্ত জ্বালা যন্ত্রণা পেরিয়েও কত মানুষ পুজোর প্ল্যান কষার ধক রাখেন৷ সংসারহীন সহদেবের চোখ স্নেহে ছলছল আসে, "আহা রে, দু'চারদিন বই তো নয়"৷

এক সপ্তমীর দিন বিকেলে মা মারা গেছিলেন, তখন অবিশ্যি সহদেব বেশ ছোট, বয়স বছর পাঁচ হবে৷ দু:খের চেয়েও বুকে বেশি বেজেছিল ভয়; কীসের ভয় তা সে বয়সে ঠিক ঠাহর করতে পারেননি৷ সাদা চাদরে মোড়া মায়ের সে চেহারা আজও তাঁর চোখের সামনে ভেসে ওঠে মাঝেমধ্যে, আর বুকের মধ্যে ভেসে ওঠে সেই অজানা ভয়ের গন্ধ৷ সেই পুজোর বাকিদিনগুলো সহদেব বাবার গায়ের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে রেখে কাটিয়েছিলেন৷
বাবা৷ বাবার স্মৃতি বরং সহদেবের মনে অনেকটা স্পষ্ট৷ বাবার ময়লা ফতুয়া, গায়ের সেই মাটি মাখানো গন্ধ, সেই সশব্দ আকাশ কাঁপানো হাসি; সে সবকিছুর মধ্যেই ফেলে আসা মনসাপুর মেশানো৷ যদিও তখন সহদেব " পুজোর প্ল্যান" কথাটা ঠিক শেখেননি, তবে পুজোর চারদিন বাবার হাত ধরে শালিকগঞ্জের মেলায় ঘোরাটা প্রায় নিয়মের পর্যায় পড়ত৷

বাবা৷ সহদেবের সমস্ত আগডুম বাগডুম গল্প মন দিয়ে শোনা বাবা৷ সহদেবের প্রিয় কচুর শাক রান্না করে এক থালা ভাত মেখে দেওয়া বাবা৷ সহদেবকে ঘুড়ি ওড়াতে শেখানো বাবা৷ মায়ের মত বাবা৷ সেই বাবাও মাত্র আড়াই দিনের জ্বরে চলে গেছিলেন পুজোর মধ্যে, অষ্টমীর রাত্রে৷ জ্বলন্ত চিতার মধ্যে থেকেও বাবার গায়ের মেটো গন্ধ এসে সহদেবের বুকে মিশেছিল, বহুদূর থেকে ভেসে আসছিল নবমীর সকালের ঢাকের শব্দ। সহদেবের দিব্যি মনে আছে৷

এই ঢাকের শব্দের ছ্যাঁকার জন্যেই নিজের জন্য কোনোদিনই কোনো 'পুজোর প্ল্যান' ভেবে উঠতে পারেননা সহদেব। শুধু এই ফাঁকা বাড়ির ঢাউস জানালার শিকে মাথা ঠেকিয়ে তাকিয়ে থাকেন রাস্তার দিকে। শালিকগঞ্জের মেলার ভীড়ের স্মৃতি চলকে ওঠে; পাঁপড়ভাজা আর চপের সুবাস, নাগোরদোলার ক্যাঁচরক্যাঁচর শব্দ বুকের মধ্যে তাজা হয়ে ওঠে।
হঠাৎ রাস্তার মাইকে হিন্দীর সিনেমার গান থেমে ঢাকের শব্দ বেজে ওঠে। জানালার শিকটাকে খামচে ধরেন সহদেব। রাস্তার মানুষগুলোর জন্য মনকেমন করে; কত না পাওয়া, কত যন্ত্রণা, কত ছটফট পুজোর প্ল্যানের মলমে শান্ত করে মানুষ বেরিয়ে পড়ে। ভীড়ে হেঁটে হদ্দ হয়, খাওয়াদাওয়ার ছক কষে, নিজের খোকাখুকুর হাত শক্ত করে ধরে এগিয়ে চলে; প্রবল ক্লান্তিতেও দমে যায়না।

হঠাৎ টিপুবাবুর জন্য মনকেমন করে ওঠে সহদেবের, জানালা ছেড়ে ফোনের কাছে এসে নম্বর ডায়াল করে। টিপুবাবু তার ফোন পেলে বড্ড খুশি হয়। সহদেব মনেপ্রাণে ঠাকুরকে ডাকেন, ঢাকের বাদ্যি যেন টিপুবাবুর কানে কোনোদিনও গরম লোহার টুকরো হয়ে না ঢোকে।

ফোন সেরে ফের জানালার সামনে এসে দাঁড়ান সহদেব, ভীড়ের প্রত্যেকটা অজানা মানুষকে আশীর্বাদ করতে ইচ্ছে হয়; "কারুর পুজোর প্ল্যান যেন কোনোদিনও ফুরিয়ে না যায়, কোনোদিনও না"।
আজও ছ্যাঁতছ্যাঁতে ঢাকের শব্দের সঙ্গে বাবার গায়ের মেঠো সুবাস বাতাসে মিশে সহদেবকে অবশ করে ফেলে। জানালার শিকে ফের মাথা রেখে চোখ বোজেন সহদেব।

পথের পাঁচালী


পথের পাঁচালীকে গো-টু-বই হিসেবে এতদিন কেন ব্যবহার করিনি কে জানে। এক বন্ধু (সম্ভবত উজান) বলেছিল বুক-ক্রিকেটের মত র‍্যান্ডম পাতা উলটে যে কোনো প্যারা পড়ে ফেললেও আরাম হয়। বিভূতিবাবুর ভাষায় বৃষ্টির গল্প পড়লে খটখটে আকাশে নিচেও গায়ে জলের ছিঁটে এসে লাগে। অমন গদ্য একবার পড়া শুরু করলে আমার মত কাব্য-গাম্বাট মানুষও কবিতা আত্মস্থ করার সাহস পায়। প্লটে চালাকি চলে, কিন্তু অনুভূতি প্রকাশে চালাকি ফলালে তা হয় মাতব্বরির দিকে গড়িয়ে যায় নয়ত ন্যাকাপনায় এসে থামে। সংবেদনশীলতা, স্নেহ আর স্মার্টনেসে; "পথের পাঁচালী" অনন্য। বার বার পড়েও এক ঘেয়ে ঠেক না, অপুদের জন্য মন কেমন এতটুকুও হ্রাস পায় না।
বহুদিন পর এ বইয়ে ফেরত গেলাম। শেষ পড়েছিলাম ছেলেবেলায়; তখন অপুর দৃষ্টির বাইরে গিয়ে কোনো কিছু মাপতে পারার কথা নয়। পয়সা থাকলে অপু দিদির জন্য একটা রবারের বাঁদর কিনে দিত; এই সামান্য হাহাকার যে কী প্রবল ভালো লাগা আর মনখারাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে সময়৷ আর রথের মেলার নাম করে বাপের থেকে পয়সা নিয়ে দুর্গা তা দিয়েছিল অপুকে; জিলিপি খাওয়ার জন্য। অমন মায়ের মত দিদির কথা ভেবেও যে কী ভালো লাগে, মনকেমন করে। বইয়ের কিছু কিছু পাতা সে বয়সে যে কতবার করে
পড়েছি।

এ বয়সে ফের সে বই পড়তে বসে আলাদা করে নজরে পড়ল সর্বজয়ার কান্না, হাসি, বকুনি, আশঙ্কা আর স্নেহ। বাপ-মা হওয়ার পর এ বই পড়লে অন্য পার্স্পেক্টিভ গোচর হবে সে'টাই স্বাভাবিক। ভর সন্ধেবেলা নিজের ছেলেমেয়ের নামে শাপশাপান্ত শুনে সর্বজয়ার বুক হিম হয়ে যাওয়া আর সেই দমবন্ধ করা কষ্টটুকু এ'বারে যেন আলাদা করে দাগা দিয়ে গেল। সর্বজয়া বিশেষ লেখাপড়া করেননি, গ্রামবাংলার সারল্যে ভরপুর ; কিন্তু আধুনিক অবিশ্বাস আর শহুরে ধান্দাবাজির ডিপো হয়েও আমার মনেও সে কু-ডাক ডেকেছিল বৈকি; "এই ভর সন্ধেবেলা অমন শিশুদের নামে অমন কথা কেউ বলে? সে কুকথা যদি তাদের গায়ে লাগে"; আমারও মনে হয়েছিল। নিজের খোকার মুখ মনে পড়েছিল।
এ'বারের পড়া এখনও শেষ হয়নি। তবে পুজোর আগেই দুর্গা চলে গেলো। বছরের এই সময়ে এসে এ বই পড়াটা বেশ দলাপাকানো একটা ব্যাপার বটে।

বিশ্বকর্মা


বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটায় অন্তত কলকাতা হতাশ করেনি। বাড়ি টু অফিস আর অফিস টু বাড়ি; যাতায়াতের মধ্যে যতগুলো প্যান্ডেল পেরিয়েছি, প্রত্যেকটাই ছিল নব্বুই দশকের রঙিন গানে ভরপুর।

সবচেয়ে বড় কথা নেদু নেদু আলতো-মেজাজের শিউলি-রোম্যান্টিক গানগুলো নয়; কানে বারবার এসে ঠেকেছে 'জেহের হ্যায় কি পেয়ার হ্যায় তেরা চুম্মা'র মত মরমি সুর।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা পুজো কমিটিগুলোর প্রতি; তাদের মধ্যে বেশিরভাগই লাউডস্পীকার ভাড়া করেছেন জনগণের কানের পর্দায় পেরেক ঠুকতে চেয়ে। স্পীকারের শব্দ যত খ্যানখ্যানে তত তার মোহময় আবেদন।

একটা মনকেমনের ঢেউ বুকের মধ্যে অনুভব করেছিলাম দুপুর দেড়টা নাগাদ যখন অফিসের অনতিদূরের একটা প্যান্ডেল থেকে ভেসে এসেছিল "উফ কেয়া রাত আয়ি হ্যায়, মহব্বত রংগ লাই হ্যায়..ডম ডম ডুবা ডুবা ডুবা ডম ডম ডুবা ডুবা"। সে সুরের কী চমৎকার বাঁধুনি, কণ্ঠের সে কী মখমলে আশ্বাস। সেই গানের মায়াজালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়তে পড়তে এক্সেলশিটে একের পর এক ভুল করা আরম্ভ করলাম; তবে ঘাবড়ে যাইনি। ম্যাথেমেটিক্স হাতড়ে খোদ আইনস্টাইনই যখন তেমন কিছু করে উঠতে পারলেন না, আমি কোথাকার কে।

বিকেলের দিকে কোনো পেছন-ভেসুভিয়াস আলিমুদ্দিন-জ্যেঠু মার্কা কেউ স্যট করে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজিয়ে বসেছিল; আর যায় কোথায়, গোটা অঞ্চলের মেজাজ চটকে চ'। তবে কপাল ভালো, সে ভীমরতি সিপিএমের ডাকা বনধের মতই মিনিট দশেকের বেশি চলেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই কালচারকাকুদের কাতুকুতু দিয়ে 'মস্ত মস্ত' পরিবর্তন ধেয়ে এসে লাউডস্পীকার ও চপের কড়াই ফাটিয়ে আকাশ বাতাস জয় করেছে। আমার ধারনা; 'ইয়ে দিল তেরি আঁখো মে ডুবা'র বিশল্যকরণী সুর-স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয়নি কাছের হাসপাতালটাও।

বিশ্বকর্মা জিন্দাবাদ। জয় হাতুড়ি। আসছে বছর ডবল হোক।

Wednesday, September 18, 2019

মানিব্যাগ


কী গোলমালেই না পড়া গেল। তিন দিন ধরে চলেছে ব্যাপারটা। প্রথম দেড় দিন বেশ ভালোই লাগছিল সমস্ত কিছু; এমন জবরদস্ত উইন্ডফল, তা'তে প্রাণে যে ফুর্তির হাওয়া খেলে যাবে তা'তে আর আশ্চর্যের কী। 

খুলেই বলি, কেমন?

তিনদিন আগে অফিস যাওয়ার পথে বাসের ভাড়া দেওয়ার জন্য মানিব্যাগ বের করেছিলাম; একটা দশটাকার নোট বের করতে গিয়ে স্পষ্ট দেখেছিলাম মানিব্যাগে জ্বলজ্বল করছে তিনটে পাঁচশো টাকার নোট, চারটে একশো টাকা, দশ কুড়ি পঞ্চাশ টাকার কয়েকটা নোট আর কিছু খুচরো পয়সা। সব মিলে ওই হাজার দুয়েকের বেশিই হবে। তারপর গোটা দিন জুড়ে নগদ খরচাপাতি নেহাত কম হয়নি। অফিস ক্যান্টিনে লাঞ্চের জন্য কিছু খরচ হল, গুপ্তবাবুর ফেয়ারওয়েলের জন্য একটা মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হল (গুপ্তবাবু অত্যন্ত খিটখিটে, বদমেজাজি এবং পরশ্রীকাতর একজন সহকর্মী, পলিটিকাল করেক্টনেসকে উড়িয়ে দেওয়ার কলজে থাকলে ফেয়ারওয়েলটা ঠিক এড়িয়ে যেতাম), অফিসের পিওন বিশু কী একটা বিশেষ প্রয়োজনে শ'পাঁচেক টাকা ধার চেয়েছিল; আপত্তি করিনি। এ বাদেও সিগারেট বাবদ কিছু খুচরো খরচ মিলে গোটা দিনে হাজার বারোশো টাকা মত নিশ্চিত ভাবেই খরচ হয়েছিল।
অথচ বাড়ি ফেরার সময় বাসের টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি মানিব্যাগে ওই সকালের মতই দু'হাজার টাকা মত পড়ে আছে। এ'দিকে গোটা দিন আমি এটিএম-মুখো হইনি বা কেউ কোনও পাওনা টাকাও দিয়ে যায়নি। 

প্রবল অস্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে হাত পা ধোয়ার আগেই ড্রয়িং রুমের টেবিলে মানিব্যাগ উপুড় করে সমস্ত টাকা গুনলাম; তেইশশো এগারো টাকা। মানিব্যাগের সমস্ত টাকাপয়সা তিন নম্বর বারের জন্য গুনে ব্যাপারটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলাম। তবে খটকাটা এতই বিশ্রী যে তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলা সহজ ছিল না। আর তারপর থেকে যখন আদত ব্যাপারটা ঠাহর করতে শুরু করলাম; হাত পা পেটে সেঁধিয়ে যাওয়ার জোগাড় হল।  

গত এক হপ্তা ধরে খোকাকে নিয়ে গিন্নী রয়েছে পাণ্ডুয়ায় তার বাপের বাড়িতে। আরও দিন দশেক পর তাঁদের ফেরার কথা। একার জন্য ভাত চাপাতে তেমন গা করল না। বাড়ির কাছেই মিন্টুর রুটি তড়কার দোকান; তাঁকে ফোন করে বললাম হাফ প্লেট ডিম তড়কা আর চারটে রুটি পাঠিয়ে দিতে। মন্টুর দোকানের ছেলেটা আধ ঘণ্টার মাথায় রুটি তড়কা নিয়ে হাজির, জানালে ষাট টাকা দিতে হবে। আমি মানিব্যাগ থেকে ষাট টাকা বের করে তাঁকে বিদেয় করেই আগে রাতের খাওয়াটা সেরে নিলাম। মিন্টু বড় চমৎকার বানায় এই তড়কাটা, জিভে পড়লে মনের মধ্যে জড়ো হওয়া যাবতীয় অন্ধকার সাফ হয়ে যায় যেন। প্রবল পরিতৃপ্তির সঙ্গে ডিনার সেরে একটা হালকা মেজাজের গল্পের বই নিয়ে খাটে এসে গা এলিয়ে দিয়েছিলাম। খানিকক্ষণ পর কী খেয়াল হল বিছানা থেকে উঠে গিয়ে মানিব্যাগটা নিয়ে এসে ফের টাকাগুলো বের করে গুনলাম।  রুটি তড়কার জন্য ষাট টাকা খরচ করা সত্ত্বেও পড়ে রয়েছে সেই তেইশশো এগারো টাকা। 

অস্বস্তি কাটাতে মিনিট কুড়ি ঘরের মধ্যেই পায়চারি করে কাটালাম। মাথা ঠাণ্ডা করতে নিজের জন্য একটু তালমিছরির সরবত তৈরি করলাম; সেই সরবত আড়াই গেলাস খেয়ে একটু আশ্বস্ত বোধ করেছিলাম বোধ হয়। আর যাই হোক, টাকা তো গায়েব হচ্ছে না; বরং উলটোটা। টাকা কমছে না। এ'তো শুভ সংবাদ। 

শুতে যাওয়ার আগে একটা উদ্ভট খেয়ালের পাল্লায় পড়ে একটা সামান্য অন্যায় করে ফেলেছিলাম সে'দিন, মানিব্যাগ থেকে একটা দশটাকার নোট বের করে তা কুচিকুচি করে ছিঁড়ে তা ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সোজা বালিশের তল থেকে বের করলাম মানিব্যাগটা। দশটাকার নোটটা কাল রাত্রে নিজের হাতে ছিঁড়েছি; কাজেই মানিব্যাগে এখন নিশ্চিত ভাবেই তেইশশো এক টাকা পড়ে থাকার কথা। কিন্তু চারবার গুনেও মানিব্যাগের রাখা টাকার যোগফল গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেই তেইশশো এগারোতে। কী বিশ্রী ব্যাপার রে বাবা। টাকার অপচয় নিশ্চিতভাবে মন্দ, কিন্তু তাই বলে এই বিদঘুটে ব্যাপারস্যাপার বরদাস্ত করা যায় না। 

তারপর থেকে পরপর দু'দিন আমি অফিস যাইনি। দু'দিন ধরে আমি মানিব্যাগ থেকে বিস্তর খরচাপাতি করে চলেছি; দরকারি অদরকারি বিভিন্ন রকমের খরচ। গড়িয়াহাটের ফুটপাথে চীনেমাটির বাসন থেকে মুদীর দোকানের চালা-আটা; যা পেরেছি কিনেছি। কিন্তু মানিব্যাগ কিছুতেই নিজেকে হালকা হতে দেয়নি। উলটো চেষ্টাও করেছি বৈকি।  এটিএম থেকে বার তিনেক টাকা তুলে মানিব্যাগে রেখেছি কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই অবস্থা যে কে সেই; কিছুতেই টাকার যোগফল তেইশশো এগারো থেকে নড়ে না। 

আজ চার নম্বর দিন। আমি এতটাই বিহ্বল হয়ে পড়েছি যে গিন্নীকেও ফোনে ব্যাপারটা জানাতে পারিনি। আর বলবই বা কী; ফোনে এমন সব কথা বললে হয়ত আমাকেই সে ছিটগ্রস্ত ভাববে। তার চেয়ে বরং সে ফিরে এলেই সব খুলে বলা যাবে'খন। অফিসের বড়সাহেব বার তিনেক ফোন করেছিলেন, কিন্তু কল রিসিভ করার সাহস হয়নি। মনটা বড্ড অস্থির হয়ে আছে, কা'কে যে কী বলতে কী বলে ফেলব; মাথার মধ্যে একটানা ঘুরপাক খাচ্ছে তেইশশো এগারো।

কিছুক্ষণ আগে একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলাম। বাড়ি থেকে মিনিট কুড়ির হাঁটাপথে গঙ্গার ঘাট, সন্ধেবেলা সে'খানে গিয়ে পকেটের মানিব্যাগটা সোজা ছুঁড়ে ফেলেছিলাম নদীতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আমি আগেভাগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যেন। ঘাট থেকে সবে বাড়ি ফিরে এসেছি, অমনি টের পেলাম আমার ট্রাউজারের পকেট যেন আচমকা ভারী হয়ে পড়ল। হাত দিতেই টের পেলাম কোনও বিশ্রী জাদুবলে সে ভূতুড়ে মানিব্যাগ আমার পকেটেই ফেরত এসেছে। এ'বারে আর পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করার চেষ্টাও করলাম না, কারণ আমি জানি তা'তে ঠিক তেইশশো এগারো টাকা পড়ে আছে। 

আমি বুঝতে পারছিলাম যে যেকোনো মুহূর্তে আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন হতে পারে। এ পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক। এই তেইশশো এগারো সংখ্যাটা যেন আমায় গিলে খেতে চাইছে...আমার চোখের সামনে দুই, তিন, এক, এক মেশানো সংখ্যাগুলো নেচে বেড়াতে লাগলো। ঘরের প্রতিটা দেওয়ালে যেন গিজগিজ করছে দুই তিন এক এক লেখায়। চোখ বুজলেও সেই তেইশশো এগারো থেকে রেহাই নেই। বন্ধ চোখের নীলচে অন্ধকারে বেশ কিছু টাকার নোট আর কয়েন ভেসে যাচ্ছে যেন; আমি জানি তাঁদের যোগফল হল তেইশশো এগারো। 

অসাড় হয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়েছিলাম, জ্ঞান হারানোর ঠিক আগের মুহূর্তে নিজের মুখে সদ্য ওঠা গ্যাঁজলাটুকুও টের পেয়েছিলাম বোধ হয়।  

***

- এই যে...এই যে আমি...এখন কেমন বোধ করছ গো?

- মিনু...তুমি...তুমি এসেছ? তুমি আর খোকা ফিরে এসেছ?

- আহ বেশি নড়াচড়া কোরো না। ডাক্তার বলেছেন আরও অন্তত এক হপ্তা বেডরেস্ট। 

- কিন্তু তোমরা পাণ্ডুয়া থেকে কবে ফিরলে...।

- তিন দিন আগেই ফিরেছি। পাশের বাড়ির মনোজ ঠাকুরপো সময় থাকতে দরজা ভেঙে ঘরে না ঢুকলে...হয় তো আজ...।  সেই আমায় খবর দিয়েছিল। 

- আমায় শনিতে ধরেছিল গো মিনু...। তেইশশো এগারোর শনি...। আমার মানিব্যাগের তেইশশো এগারো টাকা কিছুতেই বাড়েও না আর কমেও না...সে এমন অবস্থা আমি চারদিকে দেখতে শুরু করলাম তেইশশো এগারো...ও কী, তুমি অমন করে কাঁদছ কেন?

- তুমি আমায় ক্ষমা করো গো। আমার জন্যেই আজ তোমার এই দশা...। 

- সে কী! তুমি নিজেকে দায়ী করছ কেন...। আহা...। 

- স্বীকার যে আমায় করতেই হবে। তোমার শেফালীকে মনে আছে তো? ওই যে আমার ছেলেবেলার বন্ধু...পাণ্ডুয়াতেই থাকে...। 

- ওই যার বর দিনে রেলের চাকরী করে আর রাতে তন্ত্রসাধনা? সেই বিপিন মল্লিক?

- সেই বিপিনদাই তো যত গোলমালের কারণ। আমি শুধু বলার মধ্যে বলেছিলাম আমার মনে বড় অভিমান জমে আছে কারণ আমার বর আমাদের বিবাহবার্ষিকী প্রতিবার ভুলে যায়...।

- কী? আমি...?

- প্রতিবার ভুলে যাও। বিপিনদা আমার দুঃখ শুনে বললে 'তুমি শেফালীর প্রাণের বন্ধু, আমার শ্যালিকা-স্থানীয়া। তোমার অভিমান যদি নাই ঘোচাতে পারি তবে আমার তন্ত্রসাধনার মুখে আগুন'। কিন্তু তাঁকে বিশ্বাস করে আমি কী ভুলটাই না করেছিলাম গো...। 

- বলি ব্যাপারটা কী! একটু খোলসা করে বলবে কী? 

- বিপিনদা বড় মুখ করে বললে, "মিনু, তুমি আমায় বলো দেখি তোমাদের বিবাহবার্ষিকীটা ঠিক কবে। আর তার সঙ্গে এমন একটা জিনিসের কথা বলো যে'টার ব্যাপারে তোমার বরের টনটনে হিসেব জ্ঞান"। আমার সাদা মনে কাদা নেই, বিপিনদার আশ্বাসে গলে গিয়ে বলে দিলাম আমাদের বিবাহবার্ষিকী তেইশে নভেম্বর আর সেই তারিখ তোমার কোনোদিন মনে থাকে না। তা নিয়ে যে আমার মনের মধ্যে কত আঁকুপাঁকু হয় গো। আর বিপিনদাকে এও জানিয়ে দিলাম যে মানিব্যাগে রাখা টাকার ব্যাপারে তোমার হিসেবে কোনোদিন ভুলচুক হয় না। বিপিনদাও কী সব ছকটক কষে জানালো "তেইশে নভেম্বর তো? তেইশ এগারো? এই শেফালীকে ছুঁয়ে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, তোমার বর নিজের নাম ভুললেও ওই তেইশে নভেম্বর ব্যাপারটা ভুলবে না, শুধু একটা হালকা বাণ মারবো; তাতেই কেল্লা ফতে"। তখন কি ছাই আমি জানতাম যে একটা সামান্য কাজ করতে গিয়ে তোমায় এমন ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে? জানলে বিশ্বাস করো আমি কিছুতেই বিপিনদাকে এমন কাজ করতে দিতাম না...বিশ্বাস করো...। 

Monday, September 2, 2019

মার্কেট শেয়ার আর নব জারগন



- ও দত্তদা! 

- কী হল?

- এ মাসের মার্কেট শেয়ার...। 

- কত পার্সেন্ট রাইজ?

- মাইনাস আড়াই পার্সেন্ট! ইয়ার অন ইয়ার। 

- বলো কী হে সান্যাল! মাইনাস?

- এই দেখুন না। এক্সেলে কেমন লাল রঙটা জ্বলজ্বল করছে। 

- তাই বলে মাইনাস?

- মাইনাস!

- এ'টা মার্কেট শেয়ার না দেশের ইকনমি হে। 

- গলাটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে। 

- কাল রিভিউ। গলাটাই থাকবে না তো গলার শুকনো হওয়া। 

- এ'বার কী হবে দত্তদা?

- এক্সেলে জলটল মিশিয়ে দেখো দেখি। 

- যা মেশানোর মিশিয়ে দিয়েছি। না মেশালে মাইনাস সাড়ে চারে যেত। 

- উফ! ধনেপ্রাণে মারবে দেখছি। মাইনাসের খেল দেখলে বড়সাহেব আস্ত রাখবে ভেবেছ? 

- চামড়াটামড়া গুটিয়ে নেবেনা তা ঠিক। তবে ভদ্রলোকের মুখের যা ভাষা দত্তদা, চামড়া গুটিয়ে নিলে যন্ত্রণা কম হত। 

- যোগবিয়োগটা একটু মিলেও নাও হে সান্যাল। মাইনাসটা কি অকাট্য?

- কাল সূর্য পশ্চিমে উঠতে পারে। গভর্নমেন্ট অপোজিশনকে জড়িয়ে "বেশ করেছিস নিন্দে করেছিস" বলতে পারে। কিন্তু এ মার্কেট শেয়ার পজিটিভে যাওয়ার নয়। 

- কী কুক্ষণে যে এথেইস্ট হয়েছিলাম ভাই সান্যাল। একটু যে মানতটানত করে মনটাকে শান্ত করব সে উপায়ও নেই। 

- আমার বডিতে ছ'টা আংটি, চারটে মাদুলি আর একটা স্পেশ্যাল তাবিজ দত্তদা। কিন্তু এই কোয়ার্টারলি ইনসেন্টিভ ছাড়া কিছুতেই কনফিডেন্স পাইনা, এ'সব মাদুলি মানত স্রেফ ডিভাইন ছলাকলা। 

- আর ভাই ইনসেন্টিভ। তোমার আমার পিছনে ইন্সেন্স স্টিক গুঁজে কাল দিলে দিনের বেলার রিভিউ মিটিংয়ে সন্ধে-আহ্নিক করবেন বড়সাহেব। 

- উহ্‌, শুনেই কেমন...। 

- হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে তো? স্বাভাবিক। তবে, শেষ চেষ্টা একটা করতেই হবে। 

- বললাম তো দত্তদা। সমস্ত রকম টেকনিক ফলালো হয়ে গেছে। যাবতীয় ব্যাক ক্যালকুলেশন করে দেখে নিয়েছি। মার্কেট শেয়ার মাইনাসেই থাকবে। 

- আহ্‌। রিভিউ মিটিংয়ে মার্কেট শেয়ারটাই শেষ কথা নয় সান্যাল। 

- নয়?

- পাওয়ার-পয়েন্টে কতগুলো স্লাইড আছে আপাতত?

- এই এ বছরের প্রডাক্ট ওয়াইজ সেলস আর করেস্পন্ডিং মার্কেট শেয়ার নিয়ে তিনটে স্লাইড। প্রস্পেক্টস নিয়ে দু'টো। সামনের কোয়ার্টের প্রজেকশন নিয়ে তিনটে। ইস্যুস অ্যান্ড সলিউশনস; এ নিয়ে আর দু'টো। আর আগে পিছে খান দুই দেখনাই স্লাইড নিয়ে...এই ধরুন ডজন খানেক। 

- মিনিমাম সত্তরটা স্লাইড চাই। 

- সেভেনটি?

- ইংরেজিতে বললে বেশি মজবুত লাগে?

- কিন্তু সত্তরটা স্লাইড...। 

- নোট করো। ক্যুইক সান্যাল ক্যুইক। বড়সাহেবের সামনে যদি মুখ থুবড়ে না পড়তে হয়...। 

- বলে যান। লিখে নিচ্ছি। 

- প্রথম দিকে কয়েকটা স্লাইড; আমাদের টীম নিয়ে। 

- টীম? টীম বলতে তো আপনার সঙ্গে আমি...। 

- আর আমার সঙ্গে তুমি। কর্পোরেটে ওয়ান ম্যান কমিটি হয় হে, দু'জন থাকলে তো পলিটব্যুরো ফর্ম করা যাবে। প্রথমে আমাদের টীমের সলিউশন ওরিয়েন্টেড ফোকাস নিয়ে দু'চার স্লাইড দাও। 

- স...সলিউশন...। 

- ওরিয়েন্টেড ফোকাস। 

- সে'টা কী রকম?

- গুগল থাকতে আমায় কাঠি করা কেন হে সান্যাল। ও কিছু একটা চালিয়ে দিও। এরপর আসবে আমাদের বেস্ট প্র্যাক্টিসেস ভিস-আ-ভি আমাদের কম্পিটিটরদের প্র্যাক্টিসেস...।

- মানে যাদের মার্কেট শেয়ার আমাদের চেয়ে ভালো...। 

- খবরদার যদি শুরুতেই মার্কেট শেয়ার নিয়ে ধেইধেই নেত্য শুরু করেছ সান্যাল। তা'হলে বসের আগে আমি তোমার চামড়া গুটিয়ে নিয়ে মাদুর করে পাতব। 

- সরি। সরি। আপনি বলে যান। আমি শুধু লিখে যাচ্ছি। 

- এরপর দেখাবে আমরা কী'ভাবে ক্রমাগত রিসোর্স অপটিমাইজ করার দিকে মন দিচ্ছি। 

- রিসোর্স অপটিমাইজ...মাইরি আমাদের মাসের চা বিস্কুটের খরচ যদি দেখেন সে'টুকুতেই আড়াই পার্সেন্ট মার্কেট শেয়ার উঠে আসবে বোধ হয়। 

- তুমি বড় বাড়তি কথা বলো সান্যাল। 

- সরি দত্তদা। রিসোর্স অপটিমাইজেশন। ওউক্কে। নেক্সট?

- কোথাও একটু লিভারেজ কথাটা ঢুকিয়ে দিও দেখি। 

- লিভারেজ? ডান। 

- ওহ হ্যাঁ...এর সঙ্গে অবশ্যই জুড়বে থিঙ্কিং আউট অফ দ্য বক্স। 

- উদাহরণ যদি দু'একটা বলে দেন...। 

- আহ্‌, ও একটা সাজিয়ে গুছিয়ে বলে দিও না। যদি নেহাত অসুবিধে হয় স্যাটাস্যাট বিল গেটস বা ওয়ারেন বুফের কোট গুঁজে দিও। লোকে টপ করে বাজে প্রশ্ন করবে না। এই গেল আমাদের টীমের অ্যানালিসিস। 

- খান তিরিশেক স্লাইড এখানেই মেরে দেওয়া গেছে বোধ হয়। 

- গুড। এইতো। এরপর আসবে মার্কেট অ্যানালিসিস। 

- মার্কেট? অ্যানালিসিস? সার্ভে টার্ভে কিছু করতে হবে? কিন্তু সময় এত কম...। 

- তোমার ঘটে কি ঝাল ছাড়া আলু-কাবলি ভরা আছে? সান্যাল? লিখে দাও ফান্ডামেন্টালস আর সাউন্ড। 

- সাউন্ড?

- কানে কেমন ঠেকছে, তাই না? তুমি বরং রোবাস্ট লেখো। শব্দটা খুব চলছে আজকাল। 

- রোবাস্ট মার্কেট ফান্ডামেন্টালস। বেশ। তারপর দত্তদা?

- উম...একটা স্যোট অ্যানালিসিস দিয়ে দাও। 

- কার স্যোট?

- সে একটা কিছুর দিয়ে দিও। মোট কথা একটা গ্রিড এলে পিপিটিতে একটু পাঞ্চ আসবে। 

- স্যোট।  তারপর? ইমপ্যাক্ট স্টাডি বলে কিছু একটা দিয়ে দেব? খান তিনেক স্লাইড খসে যাবে তা'তে। 

- দেবে? ইচ্ছে হয়েছে যখন দাও। বাড়াবাড়িতে তো ক্ষতি নেই কোনও। এরপর বরং একটু "রিচিং আউট" মার্কা কিছু লেখো। আমরা কী ভাবে এগিয়ে এসেছি...। 

- আমরা এগিয়ে এসেছি? কার দিকে? চ্যানেল পার্টনারদের দিকে? না কাস্টোমারদের দিকে?

- বড় এঁচোড়ে পাকা তুমি। ধ্যাত্তেরি। দাও না যা হোক একটা কিছু। পালটা প্রশ্ন শুনলে গা জ্বলে যায়। ওহহো। রীচিং আউট প্রসঙ্গে মনে হল। "গিভিং আওয়ার হান্ড্রেড পার্সেন্ট" মার্কা এক্সপ্রেশন দরকার একটু এখানে। 

- হান্ড্রেড পার্সেন্ট? সিকলীভ নিয়ে সে'দিন আমি আপনি ডার্বি দেখতে গেলাম...। 

- বেশ। গিভিং হান্ড্রেড অ্যান্ড টেন পার্সেন্ট করে দাও। 

- যেয়াজ্ঞে। আশা করি এতক্ষণে খান পঞ্চাশেক স্লাইডে চলে এসেছি...। 

- বাহ্‌, চমৎকার। ভেরি গুড। এরপর একটু লটরপটর করে নেগেটিভ মার্কেট শেয়ারের ব্যাপারটা মাইল্ডলি মাঠে নামাতে হবে। 

- চামড়া গুটিয়ে যাওয়ার ফেজ। 

- কিন্তু তাঁর আগে থাকবে বোনাস খান পাঁচেক স্লাইড মার্কেটের প্যারাডাইম শিফট নিয়ে। পারলে চেঞ্জ লীডারশিপ নিয়ে একটা ইউটিউব ভিডিও চালিয়ে দিতে পারো। 

- মার্কেটের প্যারাডাইম শিফট?

- কী ভাবে খেলার নিয়মটাই যাচ্ছে পালটে। 

- কোন নিয়ম?

- জিডিপি ক্যালকুলেট করার নিয়ম পালটে যাচ্ছে সান্যাল! টেস্ট ক্রিকেটে ইঞ্জুরির পর সাবস্টিটিউট নামছে মাঠে। আর তুমি খেলার নিয়ম পালটে যাওয়া শুনে কেঁপে উঠছ?

- কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে দত্তদা। 

- প্রিসাইসলি। 

- হুঁ?

- তার মানে আমাদের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন সঠিক দিকেই আছে। 

- গুলিয়ে যাচ্ছে বলে?

- এই প্যারাডাইম শিফট নিয়ে খান পাঁচেক স্লাইড ঝেরে দিয়ে সুট করে হালকা চালে রিভিউ রুমে বোমা ফেলে দাও, মার্কেট শেয়ারে মাইনাসে। ততক্ষণে সবাই ছেড়ে দে মা লাঞ্চে গিয়ে বাঁচি। আমাদের প্রেজেন্টেশনের স্লট লাঞ্চের ঠিক আগে। খুব পজিটিভ সাইন। 

- একটু কনফিডেন্স পাচ্ছি বটে। 

- গুড। ভেরি গুড। আর শোনো, প্রেজেন্টেশনের সময় বাঙালদের মত 'চেঞ্জ' বলবে না কেমন? চেঞ্জের বদলে বলবে ডেল্টা। 'ডিটেইলস' বলবে না; বলবে গ্র্যানিউলারিটি। 'অ্যানালিসিস' কথাটা তো হেঁজিপেঁজি সবাই ব্যবহার করে আজকাল; তুমি তার বদলে বলবে 'পীলিং দ্য অনিয়ন'। কী বলবে?

- পীলিং দ্য অনিয়ন!

- সাবাস! আর কেউ বেআক্কেলে কিছু দড়াম করে জিজ্ঞেস করলে ঘাবড়ে যাবে না, ফট করে রাম-শ্যাম-যদু-মদু গোছের একটা জবাব দিয়েই বলবে; যে'টা বলেছি সে'টা 'ডায়রেকশনালি করেক্ট'। 

- ডা...ডায়রেকশনালি করেক্ট?

- করেক্ট, তবে ডায়রেকশনালি। আর চুরি, ডাকাতি, মার্কেট শেয়ার লস; যাই বলো না কেন - শেষে প্রমাণ করে দেখিয়ে দেবে যে যা হয়েছে সে'টাই হচ্ছে আদত উইন-উইন। 

- মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে দত্তদা। 

- আর ফাইনালি। মনে রেখো সান্যাল; অমুক করা হয়নি, তমুক করতে পারেনি; এই ধরনের কথা ভুলেও মুখে এনো না। 

- কোনও কাজ না করে থাকলে...স্বীকার করব না যে করা হয়নি?

- নো স্যার। বলবে; উই হ্যাভ লেফট দ্যাট ওপেন।

- দত্তদা! মার্কেট শেয়ারটেয়ার তো মায়া। আপনার মত এমন ডাইনামিক লীডারের ছত্রছায়ায় আছি, চারদিকে সব কিছুই সুপার-পজিটিভ। 

- এক্সেলেন্ট সান্যাল। এক্সেলেন্ট। এ'বার চট করে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনটা একটু খেলিয়ে নাও দেখি। আমি বরং দু'কাপ কফি নিয়ে আসি। সঙ্গে ডিম টোস্ট চলবে?     

Sunday, September 1, 2019

খগেনবাবুর ফাঁদে

- নবেন্দুবাবু...।

- কে...কে...। 

- আমি খগেন।  

- খ...খ...।

- খগেনচন্দ্র দাস। 

- খগেন...খগেনচন্দ্র দাস...। নামটা...নামটা...। 

- নামটা আপনার অতি-পরিচিত। সে'টাই স্বাভাবিক। আপনি কেমন বোধ করছেন নবেন্দুবাবু?

- আমি কোথায়...। 

- আপাতত আমার বাড়িতে। 

- আপনার বাড়ি...?

- বাইশ নম্বর হরিসাধন মূখার্জী স্ট্রিট। আপাতত রয়েছেন আমার শোওয়ার ঘরে। 

- গুলিয়ে যাচ্ছে...গুলিয়ে যাচ্ছে...। 

- আপনি শান্ত হোন। ব্যাপারটা সহজ তো নয়। তাছাড়া কোনো মিডিয়াম ছাড়া আপনাকে সোজা টেনে নামানো হয়েছে...। এ'ভাবে টেনে আনাটা আপনার জন্য বেশ যাকে বলে...স্ট্রেসফুল...কিন্তু আমার কোনো উপায় ছিল না। 

- আজেবাজে কথাগুলো এ'বার...। 

- আজেবাজে নয় সে'টা আপনিও বুঝতে পারছেন। আগে বলুন তো...নিজের দেহটা অনুভব করতে পারছেন আদৌ?

- নাহ, দিস মাস্ট বি সাম কাইন্ড অফ...ডা...ডার্ক-ম্যাজিক...। 

- খগেনচন্দ্র দাসের পরিচিতি যে সে'খানেই নবেন্দুবাবু। 

- রা...রাবিশ...।

- রাবিশই যদি হবে...তা'হলে আপনি আপনার দেহ অনুভব করতে পারছেন না কেন? নিজেকে দেখতে পারছেন কী?

- না...না! নাহ্‌! আহ...শুধু...শুধু কী যন্ত্রণা!

- বললাম তো...কোনো রকমের মিডিয়াম ছাড়া আপনার আত্মাকে নামাতে হয়েছে। তাই এই বিশ্রী যন্ত্রণাটা আপনি টের পাচ্ছেন। সরি। কিন্তু অকাল্ট ব্যাপারস্যাপার নিয়ে সামান্য পড়াশোনা তো আপনারও আছে। ব্যাপারটা আপনার বোঝা উচিৎ। 

- দিস ইজ ননসেন্স। কোনো ভোজবাজিতে নিজের দেহ অনুভব করতে পারছি না বা দেখতে পারছি না...সে'টা যেমন ঠিক...কিন্তু তেমনই এ'টাও আমি স্থির জানি যে আমি মারা যাইনি। 

- তৌবা তৌবা নবেন্দুবাবু। আপনি মরতে যাবেন কেন? শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে একশো বছরের বেশি বেঁচে থাকবেন, এমনটাই আমার আশা। 

- কিন্তু...কিন্তু সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে...আমায় কি আপনি কিডন্যাপ করেছেন? এ'সব হাবিজাবি বলে আপনি ঠিক কী প্রমাণ করতে চাইছেন...। 

- হাবিজাবি? আমার নামটা হাবিজাবি ঠেকছে নবেন্দুবাবু? খগেনচন্দ্র দাস। 

- আলবাত। 

- আর আমার বাড়ির ঠিকানাটা? বাইশ নম্বর হরিসাধন মূখার্জী স্ট্রিট? 

- সব...সব জালিয়াতি...। 

- বটে? এ ঘরে বসে হপ্তায় অন্তত একবার আমি প্ল্যানচেটে আত্মাদের নামাই? সেটাও তবে ভুয়ো?

- অফ কোউর্স। খগেন দাস মিথ্যে। হরিসাধন মূখার্জী স্ট্রীট বলে কোনো রাস্তা ভূ-ভারতে নেই তো বাইশ নম্বর; এই সব মিথ্যে। ফিকশনাল। কাল্পনিক। 

- কল্পনাকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিলেন নবেন্দুবাবু? সাহিত্যিকের মুখে এই বিশ্রী ভাষা মানায়?

- থামুন! হরিসাধন মূখার্জী স্ট্রীট ইস আ ফিগমেন্ট অফ মাই ইম্যাজিনেশন। ফ্রড কোথাকার! 

- ফ্রড? ঠগবাজ? আমি ঠগবাজ? ঠগবাজ তো আপনি! একটা নভেল লেখা শুরু করে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন। মুনশিয়ানার সঙ্গে কয়েক হাজার শব্দ লিখে ফেললেন...প্ল্যানচেট বিশেষজ্ঞ খগেনচন্দ্র দাসের জন্ম দিলেন...তরতর করে এগিয়ে চলল প্লট...আমার এই ঘরটা তৈরি হল...। স্পষ্ট হল আমার আত্মা নামানোর অভ্যাস...। আর দুম করে সে লেখা বন্ধ করে কী সব হিজিবিজি ফরমায়েশি প্রবন্ধ লেখা শুরু করলেন! একবার ফিরেও তাকালেন না এই খসড়াটার দিকে যে'খানে বসে আমি শুধু নিষ্ফল ছটফট করে দিন কাটাচ্ছি। সস্তা চটকদার প্রবন্ধ লিখে পাওয়া টাকাই সবকিছু নবেন্দুবাবু?

- আমি...আমি ঠিক...। 

- ঠিক ধরতে পারছেন না, তাই না? এই যে আমায় আপনি ঝুলিয়ে রেখেছেন...আমার যন্ত্রণাটা আপনি ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না...তাই না? বাহ্‌! এই না হলে আধুনিক বাজারি লেখক। ছিহ্‌ নবেন্দুবাবু। 

- কিন্তু...কিন্তু আপনার...আপনার কোনো অস্তিত্ব নেই...। এ'সব হচ্ছে কী করে...। 

- আপনার দুনিয়ায় আমি ফিকশন হতে পারি নবেন্দুবাবু...কিন্তু এই দুর্দান্ত প্ল্যানচেট টেকনিকে আমি আপনাকে আমার দুনিয়ায় টেনে এনেছি...এখানের রিয়ালিটিটা আমায় ঘিরে। আপনি এখানে শুধু একটা প্ল্যানচেটে নামানো আত্মা মাত্র...। 

- বিশ্রী...বিশ্রী একটা স্বপ্ন...। 

- অশরীরী হওয়ার অভিজ্ঞতাটা নতুন তো...দুঃস্বপ্ন মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়...। 

- ইয়ে, খগেনবাবু! আসলে একটা এমন বিশ্রী রাইটার্স ব্লক হিট করেছে...মানে...বুঝলেন...। 

- বুঝি। সে'টা বুঝি। রাইটার্স ব্লক লেখক ধাক্কা দিলে যে তাঁরা অর্ধমৃত হয়ে পড়েন সে'টা আমার অবশ্যই জানা। আর আপনি আধমরা ছিলেন বলেই তো আপনাকে প্ল্যানচেটে তুলে আনতে পারলাম মশাই...। টোটালি জ্যান্ত থাকলে তো আর আত্মাকে ধরে টান দেওয়ার উপায় ছিল না। নিন, এ'বার ফেরত গিয়ে চট করে আমার নভেলটা শেষ করে একটু জ্যান্ত হয়ে পড়ুন দেখি, নয়ত কিন্তু ফের আপনার আত্মাকে তুলে এনে কড়কানি দেব...এই বেলা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলাম। কেমন?