Skip to main content

মানিব্যাগ


কী গোলমালেই না পড়া গেল। তিন দিন ধরে চলেছে ব্যাপারটা। প্রথম দেড় দিন বেশ ভালোই লাগছিল সমস্ত কিছু; এমন জবরদস্ত উইন্ডফল, তা'তে প্রাণে যে ফুর্তির হাওয়া খেলে যাবে তা'তে আর আশ্চর্যের কী। 

খুলেই বলি, কেমন?

তিনদিন আগে অফিস যাওয়ার পথে বাসের ভাড়া দেওয়ার জন্য মানিব্যাগ বের করেছিলাম; একটা দশটাকার নোট বের করতে গিয়ে স্পষ্ট দেখেছিলাম মানিব্যাগে জ্বলজ্বল করছে তিনটে পাঁচশো টাকার নোট, চারটে একশো টাকা, দশ কুড়ি পঞ্চাশ টাকার কয়েকটা নোট আর কিছু খুচরো পয়সা। সব মিলে ওই হাজার দুয়েকের বেশিই হবে। তারপর গোটা দিন জুড়ে নগদ খরচাপাতি নেহাত কম হয়নি। অফিস ক্যান্টিনে লাঞ্চের জন্য কিছু খরচ হল, গুপ্তবাবুর ফেয়ারওয়েলের জন্য একটা মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হল (গুপ্তবাবু অত্যন্ত খিটখিটে, বদমেজাজি এবং পরশ্রীকাতর একজন সহকর্মী, পলিটিকাল করেক্টনেসকে উড়িয়ে দেওয়ার কলজে থাকলে ফেয়ারওয়েলটা ঠিক এড়িয়ে যেতাম), অফিসের পিওন বিশু কী একটা বিশেষ প্রয়োজনে শ'পাঁচেক টাকা ধার চেয়েছিল; আপত্তি করিনি। এ বাদেও সিগারেট বাবদ কিছু খুচরো খরচ মিলে গোটা দিনে হাজার বারোশো টাকা মত নিশ্চিত ভাবেই খরচ হয়েছিল।
অথচ বাড়ি ফেরার সময় বাসের টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি মানিব্যাগে ওই সকালের মতই দু'হাজার টাকা মত পড়ে আছে। এ'দিকে গোটা দিন আমি এটিএম-মুখো হইনি বা কেউ কোনও পাওনা টাকাও দিয়ে যায়নি। 

প্রবল অস্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে হাত পা ধোয়ার আগেই ড্রয়িং রুমের টেবিলে মানিব্যাগ উপুড় করে সমস্ত টাকা গুনলাম; তেইশশো এগারো টাকা। মানিব্যাগের সমস্ত টাকাপয়সা তিন নম্বর বারের জন্য গুনে ব্যাপারটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলাম। তবে খটকাটা এতই বিশ্রী যে তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলা সহজ ছিল না। আর তারপর থেকে যখন আদত ব্যাপারটা ঠাহর করতে শুরু করলাম; হাত পা পেটে সেঁধিয়ে যাওয়ার জোগাড় হল।  

গত এক হপ্তা ধরে খোকাকে নিয়ে গিন্নী রয়েছে পাণ্ডুয়ায় তার বাপের বাড়িতে। আরও দিন দশেক পর তাঁদের ফেরার কথা। একার জন্য ভাত চাপাতে তেমন গা করল না। বাড়ির কাছেই মিন্টুর রুটি তড়কার দোকান; তাঁকে ফোন করে বললাম হাফ প্লেট ডিম তড়কা আর চারটে রুটি পাঠিয়ে দিতে। মন্টুর দোকানের ছেলেটা আধ ঘণ্টার মাথায় রুটি তড়কা নিয়ে হাজির, জানালে ষাট টাকা দিতে হবে। আমি মানিব্যাগ থেকে ষাট টাকা বের করে তাঁকে বিদেয় করেই আগে রাতের খাওয়াটা সেরে নিলাম। মিন্টু বড় চমৎকার বানায় এই তড়কাটা, জিভে পড়লে মনের মধ্যে জড়ো হওয়া যাবতীয় অন্ধকার সাফ হয়ে যায় যেন। প্রবল পরিতৃপ্তির সঙ্গে ডিনার সেরে একটা হালকা মেজাজের গল্পের বই নিয়ে খাটে এসে গা এলিয়ে দিয়েছিলাম। খানিকক্ষণ পর কী খেয়াল হল বিছানা থেকে উঠে গিয়ে মানিব্যাগটা নিয়ে এসে ফের টাকাগুলো বের করে গুনলাম।  রুটি তড়কার জন্য ষাট টাকা খরচ করা সত্ত্বেও পড়ে রয়েছে সেই তেইশশো এগারো টাকা। 

অস্বস্তি কাটাতে মিনিট কুড়ি ঘরের মধ্যেই পায়চারি করে কাটালাম। মাথা ঠাণ্ডা করতে নিজের জন্য একটু তালমিছরির সরবত তৈরি করলাম; সেই সরবত আড়াই গেলাস খেয়ে একটু আশ্বস্ত বোধ করেছিলাম বোধ হয়। আর যাই হোক, টাকা তো গায়েব হচ্ছে না; বরং উলটোটা। টাকা কমছে না। এ'তো শুভ সংবাদ। 

শুতে যাওয়ার আগে একটা উদ্ভট খেয়ালের পাল্লায় পড়ে একটা সামান্য অন্যায় করে ফেলেছিলাম সে'দিন, মানিব্যাগ থেকে একটা দশটাকার নোট বের করে তা কুচিকুচি করে ছিঁড়ে তা ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সোজা বালিশের তল থেকে বের করলাম মানিব্যাগটা। দশটাকার নোটটা কাল রাত্রে নিজের হাতে ছিঁড়েছি; কাজেই মানিব্যাগে এখন নিশ্চিত ভাবেই তেইশশো এক টাকা পড়ে থাকার কথা। কিন্তু চারবার গুনেও মানিব্যাগের রাখা টাকার যোগফল গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেই তেইশশো এগারোতে। কী বিশ্রী ব্যাপার রে বাবা। টাকার অপচয় নিশ্চিতভাবে মন্দ, কিন্তু তাই বলে এই বিদঘুটে ব্যাপারস্যাপার বরদাস্ত করা যায় না। 

তারপর থেকে পরপর দু'দিন আমি অফিস যাইনি। দু'দিন ধরে আমি মানিব্যাগ থেকে বিস্তর খরচাপাতি করে চলেছি; দরকারি অদরকারি বিভিন্ন রকমের খরচ। গড়িয়াহাটের ফুটপাথে চীনেমাটির বাসন থেকে মুদীর দোকানের চালা-আটা; যা পেরেছি কিনেছি। কিন্তু মানিব্যাগ কিছুতেই নিজেকে হালকা হতে দেয়নি। উলটো চেষ্টাও করেছি বৈকি।  এটিএম থেকে বার তিনেক টাকা তুলে মানিব্যাগে রেখেছি কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই অবস্থা যে কে সেই; কিছুতেই টাকার যোগফল তেইশশো এগারো থেকে নড়ে না। 

আজ চার নম্বর দিন। আমি এতটাই বিহ্বল হয়ে পড়েছি যে গিন্নীকেও ফোনে ব্যাপারটা জানাতে পারিনি। আর বলবই বা কী; ফোনে এমন সব কথা বললে হয়ত আমাকেই সে ছিটগ্রস্ত ভাববে। তার চেয়ে বরং সে ফিরে এলেই সব খুলে বলা যাবে'খন। অফিসের বড়সাহেব বার তিনেক ফোন করেছিলেন, কিন্তু কল রিসিভ করার সাহস হয়নি। মনটা বড্ড অস্থির হয়ে আছে, কা'কে যে কী বলতে কী বলে ফেলব; মাথার মধ্যে একটানা ঘুরপাক খাচ্ছে তেইশশো এগারো।

কিছুক্ষণ আগে একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলাম। বাড়ি থেকে মিনিট কুড়ির হাঁটাপথে গঙ্গার ঘাট, সন্ধেবেলা সে'খানে গিয়ে পকেটের মানিব্যাগটা সোজা ছুঁড়ে ফেলেছিলাম নদীতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আমি আগেভাগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যেন। ঘাট থেকে সবে বাড়ি ফিরে এসেছি, অমনি টের পেলাম আমার ট্রাউজারের পকেট যেন আচমকা ভারী হয়ে পড়ল। হাত দিতেই টের পেলাম কোনও বিশ্রী জাদুবলে সে ভূতুড়ে মানিব্যাগ আমার পকেটেই ফেরত এসেছে। এ'বারে আর পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করার চেষ্টাও করলাম না, কারণ আমি জানি তা'তে ঠিক তেইশশো এগারো টাকা পড়ে আছে। 

আমি বুঝতে পারছিলাম যে যেকোনো মুহূর্তে আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন হতে পারে। এ পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক। এই তেইশশো এগারো সংখ্যাটা যেন আমায় গিলে খেতে চাইছে...আমার চোখের সামনে দুই, তিন, এক, এক মেশানো সংখ্যাগুলো নেচে বেড়াতে লাগলো। ঘরের প্রতিটা দেওয়ালে যেন গিজগিজ করছে দুই তিন এক এক লেখায়। চোখ বুজলেও সেই তেইশশো এগারো থেকে রেহাই নেই। বন্ধ চোখের নীলচে অন্ধকারে বেশ কিছু টাকার নোট আর কয়েন ভেসে যাচ্ছে যেন; আমি জানি তাঁদের যোগফল হল তেইশশো এগারো। 

অসাড় হয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়েছিলাম, জ্ঞান হারানোর ঠিক আগের মুহূর্তে নিজের মুখে সদ্য ওঠা গ্যাঁজলাটুকুও টের পেয়েছিলাম বোধ হয়।  

***

- এই যে...এই যে আমি...এখন কেমন বোধ করছ গো?

- মিনু...তুমি...তুমি এসেছ? তুমি আর খোকা ফিরে এসেছ?

- আহ বেশি নড়াচড়া কোরো না। ডাক্তার বলেছেন আরও অন্তত এক হপ্তা বেডরেস্ট। 

- কিন্তু তোমরা পাণ্ডুয়া থেকে কবে ফিরলে...।

- তিন দিন আগেই ফিরেছি। পাশের বাড়ির মনোজ ঠাকুরপো সময় থাকতে দরজা ভেঙে ঘরে না ঢুকলে...হয় তো আজ...।  সেই আমায় খবর দিয়েছিল। 

- আমায় শনিতে ধরেছিল গো মিনু...। তেইশশো এগারোর শনি...। আমার মানিব্যাগের তেইশশো এগারো টাকা কিছুতেই বাড়েও না আর কমেও না...সে এমন অবস্থা আমি চারদিকে দেখতে শুরু করলাম তেইশশো এগারো...ও কী, তুমি অমন করে কাঁদছ কেন?

- তুমি আমায় ক্ষমা করো গো। আমার জন্যেই আজ তোমার এই দশা...। 

- সে কী! তুমি নিজেকে দায়ী করছ কেন...। আহা...। 

- স্বীকার যে আমায় করতেই হবে। তোমার শেফালীকে মনে আছে তো? ওই যে আমার ছেলেবেলার বন্ধু...পাণ্ডুয়াতেই থাকে...। 

- ওই যার বর দিনে রেলের চাকরী করে আর রাতে তন্ত্রসাধনা? সেই বিপিন মল্লিক?

- সেই বিপিনদাই তো যত গোলমালের কারণ। আমি শুধু বলার মধ্যে বলেছিলাম আমার মনে বড় অভিমান জমে আছে কারণ আমার বর আমাদের বিবাহবার্ষিকী প্রতিবার ভুলে যায়...।

- কী? আমি...?

- প্রতিবার ভুলে যাও। বিপিনদা আমার দুঃখ শুনে বললে 'তুমি শেফালীর প্রাণের বন্ধু, আমার শ্যালিকা-স্থানীয়া। তোমার অভিমান যদি নাই ঘোচাতে পারি তবে আমার তন্ত্রসাধনার মুখে আগুন'। কিন্তু তাঁকে বিশ্বাস করে আমি কী ভুলটাই না করেছিলাম গো...। 

- বলি ব্যাপারটা কী! একটু খোলসা করে বলবে কী? 

- বিপিনদা বড় মুখ করে বললে, "মিনু, তুমি আমায় বলো দেখি তোমাদের বিবাহবার্ষিকীটা ঠিক কবে। আর তার সঙ্গে এমন একটা জিনিসের কথা বলো যে'টার ব্যাপারে তোমার বরের টনটনে হিসেব জ্ঞান"। আমার সাদা মনে কাদা নেই, বিপিনদার আশ্বাসে গলে গিয়ে বলে দিলাম আমাদের বিবাহবার্ষিকী তেইশে নভেম্বর আর সেই তারিখ তোমার কোনোদিন মনে থাকে না। তা নিয়ে যে আমার মনের মধ্যে কত আঁকুপাঁকু হয় গো। আর বিপিনদাকে এও জানিয়ে দিলাম যে মানিব্যাগে রাখা টাকার ব্যাপারে তোমার হিসেবে কোনোদিন ভুলচুক হয় না। বিপিনদাও কী সব ছকটক কষে জানালো "তেইশে নভেম্বর তো? তেইশ এগারো? এই শেফালীকে ছুঁয়ে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, তোমার বর নিজের নাম ভুললেও ওই তেইশে নভেম্বর ব্যাপারটা ভুলবে না, শুধু একটা হালকা বাণ মারবো; তাতেই কেল্লা ফতে"। তখন কি ছাই আমি জানতাম যে একটা সামান্য কাজ করতে গিয়ে তোমায় এমন ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে? জানলে বিশ্বাস করো আমি কিছুতেই বিপিনদাকে এমন কাজ করতে দিতাম না...বিশ্বাস করো...। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু