Tuesday, October 22, 2019

পথের পাঁচালী


পথের পাঁচালীকে গো-টু-বই হিসেবে এতদিন কেন ব্যবহার করিনি কে জানে। এক বন্ধু (সম্ভবত উজান) বলেছিল বুক-ক্রিকেটের মত র‍্যান্ডম পাতা উলটে যে কোনো প্যারা পড়ে ফেললেও আরাম হয়। বিভূতিবাবুর ভাষায় বৃষ্টির গল্প পড়লে খটখটে আকাশে নিচেও গায়ে জলের ছিঁটে এসে লাগে। অমন গদ্য একবার পড়া শুরু করলে আমার মত কাব্য-গাম্বাট মানুষও কবিতা আত্মস্থ করার সাহস পায়। প্লটে চালাকি চলে, কিন্তু অনুভূতি প্রকাশে চালাকি ফলালে তা হয় মাতব্বরির দিকে গড়িয়ে যায় নয়ত ন্যাকাপনায় এসে থামে। সংবেদনশীলতা, স্নেহ আর স্মার্টনেসে; "পথের পাঁচালী" অনন্য। বার বার পড়েও এক ঘেয়ে ঠেক না, অপুদের জন্য মন কেমন এতটুকুও হ্রাস পায় না।
বহুদিন পর এ বইয়ে ফেরত গেলাম। শেষ পড়েছিলাম ছেলেবেলায়; তখন অপুর দৃষ্টির বাইরে গিয়ে কোনো কিছু মাপতে পারার কথা নয়। পয়সা থাকলে অপু দিদির জন্য একটা রবারের বাঁদর কিনে দিত; এই সামান্য হাহাকার যে কী প্রবল ভালো লাগা আর মনখারাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে সময়৷ আর রথের মেলার নাম করে বাপের থেকে পয়সা নিয়ে দুর্গা তা দিয়েছিল অপুকে; জিলিপি খাওয়ার জন্য। অমন মায়ের মত দিদির কথা ভেবেও যে কী ভালো লাগে, মনকেমন করে। বইয়ের কিছু কিছু পাতা সে বয়সে যে কতবার করে
পড়েছি।

এ বয়সে ফের সে বই পড়তে বসে আলাদা করে নজরে পড়ল সর্বজয়ার কান্না, হাসি, বকুনি, আশঙ্কা আর স্নেহ। বাপ-মা হওয়ার পর এ বই পড়লে অন্য পার্স্পেক্টিভ গোচর হবে সে'টাই স্বাভাবিক। ভর সন্ধেবেলা নিজের ছেলেমেয়ের নামে শাপশাপান্ত শুনে সর্বজয়ার বুক হিম হয়ে যাওয়া আর সেই দমবন্ধ করা কষ্টটুকু এ'বারে যেন আলাদা করে দাগা দিয়ে গেল। সর্বজয়া বিশেষ লেখাপড়া করেননি, গ্রামবাংলার সারল্যে ভরপুর ; কিন্তু আধুনিক অবিশ্বাস আর শহুরে ধান্দাবাজির ডিপো হয়েও আমার মনেও সে কু-ডাক ডেকেছিল বৈকি; "এই ভর সন্ধেবেলা অমন শিশুদের নামে অমন কথা কেউ বলে? সে কুকথা যদি তাদের গায়ে লাগে"; আমারও মনে হয়েছিল। নিজের খোকার মুখ মনে পড়েছিল।
এ'বারের পড়া এখনও শেষ হয়নি। তবে পুজোর আগেই দুর্গা চলে গেলো। বছরের এই সময়ে এসে এ বই পড়াটা বেশ দলাপাকানো একটা ব্যাপার বটে।

No comments: