Skip to main content

বিশ্বকর্মা


বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটায় অন্তত কলকাতা হতাশ করেনি। বাড়ি টু অফিস আর অফিস টু বাড়ি; যাতায়াতের মধ্যে যতগুলো প্যান্ডেল পেরিয়েছি, প্রত্যেকটাই ছিল নব্বুই দশকের রঙিন গানে ভরপুর।

সবচেয়ে বড় কথা নেদু নেদু আলতো-মেজাজের শিউলি-রোম্যান্টিক গানগুলো নয়; কানে বারবার এসে ঠেকেছে 'জেহের হ্যায় কি পেয়ার হ্যায় তেরা চুম্মা'র মত মরমি সুর।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা পুজো কমিটিগুলোর প্রতি; তাদের মধ্যে বেশিরভাগই লাউডস্পীকার ভাড়া করেছেন জনগণের কানের পর্দায় পেরেক ঠুকতে চেয়ে। স্পীকারের শব্দ যত খ্যানখ্যানে তত তার মোহময় আবেদন।

একটা মনকেমনের ঢেউ বুকের মধ্যে অনুভব করেছিলাম দুপুর দেড়টা নাগাদ যখন অফিসের অনতিদূরের একটা প্যান্ডেল থেকে ভেসে এসেছিল "উফ কেয়া রাত আয়ি হ্যায়, মহব্বত রংগ লাই হ্যায়..ডম ডম ডুবা ডুবা ডুবা ডম ডম ডুবা ডুবা"। সে সুরের কী চমৎকার বাঁধুনি, কণ্ঠের সে কী মখমলে আশ্বাস। সেই গানের মায়াজালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়তে পড়তে এক্সেলশিটে একের পর এক ভুল করা আরম্ভ করলাম; তবে ঘাবড়ে যাইনি। ম্যাথেমেটিক্স হাতড়ে খোদ আইনস্টাইনই যখন তেমন কিছু করে উঠতে পারলেন না, আমি কোথাকার কে।

বিকেলের দিকে কোনো পেছন-ভেসুভিয়াস আলিমুদ্দিন-জ্যেঠু মার্কা কেউ স্যট করে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজিয়ে বসেছিল; আর যায় কোথায়, গোটা অঞ্চলের মেজাজ চটকে চ'। তবে কপাল ভালো, সে ভীমরতি সিপিএমের ডাকা বনধের মতই মিনিট দশেকের বেশি চলেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই কালচারকাকুদের কাতুকুতু দিয়ে 'মস্ত মস্ত' পরিবর্তন ধেয়ে এসে লাউডস্পীকার ও চপের কড়াই ফাটিয়ে আকাশ বাতাস জয় করেছে। আমার ধারনা; 'ইয়ে দিল তেরি আঁখো মে ডুবা'র বিশল্যকরণী সুর-স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয়নি কাছের হাসপাতালটাও।

বিশ্বকর্মা জিন্দাবাদ। জয় হাতুড়ি। আসছে বছর ডবল হোক।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু