Skip to main content

খগেনবাবুর ফাঁদে

- নবেন্দুবাবু...।

- কে...কে...। 

- আমি খগেন।  

- খ...খ...।

- খগেনচন্দ্র দাস। 

- খগেন...খগেনচন্দ্র দাস...। নামটা...নামটা...। 

- নামটা আপনার অতি-পরিচিত। সে'টাই স্বাভাবিক। আপনি কেমন বোধ করছেন নবেন্দুবাবু?

- আমি কোথায়...। 

- আপাতত আমার বাড়িতে। 

- আপনার বাড়ি...?

- বাইশ নম্বর হরিসাধন মূখার্জী স্ট্রিট। আপাতত রয়েছেন আমার শোওয়ার ঘরে। 

- গুলিয়ে যাচ্ছে...গুলিয়ে যাচ্ছে...। 

- আপনি শান্ত হোন। ব্যাপারটা সহজ তো নয়। তাছাড়া কোনো মিডিয়াম ছাড়া আপনাকে সোজা টেনে নামানো হয়েছে...। এ'ভাবে টেনে আনাটা আপনার জন্য বেশ যাকে বলে...স্ট্রেসফুল...কিন্তু আমার কোনো উপায় ছিল না। 

- আজেবাজে কথাগুলো এ'বার...। 

- আজেবাজে নয় সে'টা আপনিও বুঝতে পারছেন। আগে বলুন তো...নিজের দেহটা অনুভব করতে পারছেন আদৌ?

- নাহ, দিস মাস্ট বি সাম কাইন্ড অফ...ডা...ডার্ক-ম্যাজিক...। 

- খগেনচন্দ্র দাসের পরিচিতি যে সে'খানেই নবেন্দুবাবু। 

- রা...রাবিশ...।

- রাবিশই যদি হবে...তা'হলে আপনি আপনার দেহ অনুভব করতে পারছেন না কেন? নিজেকে দেখতে পারছেন কী?

- না...না! নাহ্‌! আহ...শুধু...শুধু কী যন্ত্রণা!

- বললাম তো...কোনো রকমের মিডিয়াম ছাড়া আপনার আত্মাকে নামাতে হয়েছে। তাই এই বিশ্রী যন্ত্রণাটা আপনি টের পাচ্ছেন। সরি। কিন্তু অকাল্ট ব্যাপারস্যাপার নিয়ে সামান্য পড়াশোনা তো আপনারও আছে। ব্যাপারটা আপনার বোঝা উচিৎ। 

- দিস ইজ ননসেন্স। কোনো ভোজবাজিতে নিজের দেহ অনুভব করতে পারছি না বা দেখতে পারছি না...সে'টা যেমন ঠিক...কিন্তু তেমনই এ'টাও আমি স্থির জানি যে আমি মারা যাইনি। 

- তৌবা তৌবা নবেন্দুবাবু। আপনি মরতে যাবেন কেন? শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে একশো বছরের বেশি বেঁচে থাকবেন, এমনটাই আমার আশা। 

- কিন্তু...কিন্তু সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে...আমায় কি আপনি কিডন্যাপ করেছেন? এ'সব হাবিজাবি বলে আপনি ঠিক কী প্রমাণ করতে চাইছেন...। 

- হাবিজাবি? আমার নামটা হাবিজাবি ঠেকছে নবেন্দুবাবু? খগেনচন্দ্র দাস। 

- আলবাত। 

- আর আমার বাড়ির ঠিকানাটা? বাইশ নম্বর হরিসাধন মূখার্জী স্ট্রিট? 

- সব...সব জালিয়াতি...। 

- বটে? এ ঘরে বসে হপ্তায় অন্তত একবার আমি প্ল্যানচেটে আত্মাদের নামাই? সেটাও তবে ভুয়ো?

- অফ কোউর্স। খগেন দাস মিথ্যে। হরিসাধন মূখার্জী স্ট্রীট বলে কোনো রাস্তা ভূ-ভারতে নেই তো বাইশ নম্বর; এই সব মিথ্যে। ফিকশনাল। কাল্পনিক। 

- কল্পনাকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিলেন নবেন্দুবাবু? সাহিত্যিকের মুখে এই বিশ্রী ভাষা মানায়?

- থামুন! হরিসাধন মূখার্জী স্ট্রীট ইস আ ফিগমেন্ট অফ মাই ইম্যাজিনেশন। ফ্রড কোথাকার! 

- ফ্রড? ঠগবাজ? আমি ঠগবাজ? ঠগবাজ তো আপনি! একটা নভেল লেখা শুরু করে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন। মুনশিয়ানার সঙ্গে কয়েক হাজার শব্দ লিখে ফেললেন...প্ল্যানচেট বিশেষজ্ঞ খগেনচন্দ্র দাসের জন্ম দিলেন...তরতর করে এগিয়ে চলল প্লট...আমার এই ঘরটা তৈরি হল...। স্পষ্ট হল আমার আত্মা নামানোর অভ্যাস...। আর দুম করে সে লেখা বন্ধ করে কী সব হিজিবিজি ফরমায়েশি প্রবন্ধ লেখা শুরু করলেন! একবার ফিরেও তাকালেন না এই খসড়াটার দিকে যে'খানে বসে আমি শুধু নিষ্ফল ছটফট করে দিন কাটাচ্ছি। সস্তা চটকদার প্রবন্ধ লিখে পাওয়া টাকাই সবকিছু নবেন্দুবাবু?

- আমি...আমি ঠিক...। 

- ঠিক ধরতে পারছেন না, তাই না? এই যে আমায় আপনি ঝুলিয়ে রেখেছেন...আমার যন্ত্রণাটা আপনি ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না...তাই না? বাহ্‌! এই না হলে আধুনিক বাজারি লেখক। ছিহ্‌ নবেন্দুবাবু। 

- কিন্তু...কিন্তু আপনার...আপনার কোনো অস্তিত্ব নেই...। এ'সব হচ্ছে কী করে...। 

- আপনার দুনিয়ায় আমি ফিকশন হতে পারি নবেন্দুবাবু...কিন্তু এই দুর্দান্ত প্ল্যানচেট টেকনিকে আমি আপনাকে আমার দুনিয়ায় টেনে এনেছি...এখানের রিয়ালিটিটা আমায় ঘিরে। আপনি এখানে শুধু একটা প্ল্যানচেটে নামানো আত্মা মাত্র...। 

- বিশ্রী...বিশ্রী একটা স্বপ্ন...। 

- অশরীরী হওয়ার অভিজ্ঞতাটা নতুন তো...দুঃস্বপ্ন মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়...। 

- ইয়ে, খগেনবাবু! আসলে একটা এমন বিশ্রী রাইটার্স ব্লক হিট করেছে...মানে...বুঝলেন...। 

- বুঝি। সে'টা বুঝি। রাইটার্স ব্লক লেখক ধাক্কা দিলে যে তাঁরা অর্ধমৃত হয়ে পড়েন সে'টা আমার অবশ্যই জানা। আর আপনি আধমরা ছিলেন বলেই তো আপনাকে প্ল্যানচেটে তুলে আনতে পারলাম মশাই...। টোটালি জ্যান্ত থাকলে তো আর আত্মাকে ধরে টান দেওয়ার উপায় ছিল না। নিন, এ'বার ফেরত গিয়ে চট করে আমার নভেলটা শেষ করে একটু জ্যান্ত হয়ে পড়ুন দেখি, নয়ত কিন্তু ফের আপনার আত্মাকে তুলে এনে কড়কানি দেব...এই বেলা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলাম। কেমন? 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু