Skip to main content

সুবিনয় দাসগুপ্তর বন্ধু


- অতনু গাঙ্গুলি। রাইট?

- হ্যাঁ।

- বায়োডেটা তো বেশ ইম্প্রেসিভ।

- থ্যাঙ্ক ইউ।

- টেল মি সামথিং আবাউট ইওরসেল্ফ।

- মিস্টার দাসগুপ্ত, আমি ঠিক চাকরীর জন্য আসিনি।

- এক্সকিউজ মি?

- মাফ করবেন। আপনার সঙ্গে একটা জরুরী দরকার ছিল। কিন্তু কিছুতেই আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছিলাম না। আর আপনার ওই পেল্লায় বাড়িতে ঢোকার কথা তো ভাবতেই পারিনা। তাই বাধ্য হয়ে চাকরীর এই দরখাস্তটা করে বসলাম। ডাকও চলে এলো। এই রোলের জন্য ক্যান্ডিডেটদের যে আপনি নিজে বাছাই করেন, সে খবরটা আমি পেয়েছিলাম। 

- যে কোনও টম-ডিক-হ্যারির সঙ্গে দেখা করার জন্য অ্যালকেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের এম-ডি বসে নেই।

- আমি সত্যিই দুঃখিত কিন্তু..।

- লুক হিয়ার গাঙ্গুলি, আমার সময়ের দাম আছে। এই অসভ্যতাটা না করলেই পারতে।

- ব্যাপারটা সত্যিই জরুরী..। প্লীজ।

- ইউ হ্যাভ ট্যু মিনিটস।

- আমার বাবা অমল গাঙ্গুলি। লোকনাথপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে আপনার সহপাঠী ছিলেন।

- অমল..অমল..।

- আপনার হয়ত মনে নেই, তাই না?

- না নেই। আর শুনে রাখো,  যদি ভাবো পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে আমার থেকে কোনও ফেভার আদায় করবে, তা'হলে সে'গুড়ে বালি। এ'সব ধান্দাবাজি আমার সঙ্গে চলবে না।

- ধান্দাবাজি ঠিক নয়। শুধু এ'টা দেওয়ার ছিল।

- হোয়াট ইজ দিস? এই প্যাকেটে কী আছে?

- অরণ্যদেব সমগ্র। খণ্ড দুই। আর খণ্ড তিন।

- হোয়াট ননসেন্স। এই রাবিশ নিয়ে আমার অফিসে আসার কী মানে!

- বাবা বারবার বলে গেছিলেন এই পুরনো বই দু'টো যেন আপনার কাছে পৌঁছে দিই। 

- অমল..? বলে গেছে মানে?

- বাবা গতমাসে মারা গেছেন।

- অ। আই সী৷ আই অ্যাম সরি। 

- আমি এখন আসি।

- অমল এই সাতপুরনো বইদু'টো আমায় দিতে বলে গেছে? আমায়?

- মৃতুশয্যাতেও কথাটা বারবার বলে গেছেন। আর পোস্টে পাঠাতে বারণ করেছিলেন তাই..। উনি চেয়েছিলেন যেন আপনার হাতেই তুলে দিই।

- অ।

- আমি আসি। নমস্কার।

**

অতনু,

অমলকে চিরকালই আমার আলাভোলা ইডিয়ট মনে হত৷ স্কুল ছাড়ার পর তাই আপ্রাণ চেষ্টা করেছি অমন রাস্টিক ইডিয়টের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে। 

যাকগে।

তিনটে পুরনো বই ফেরত পাঠালাম। অরণ্যদেব সমগ্র এক, দুই ও তিন। 

ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় অমলের বাবা ওর জন্মদিনে বই তিনটের সমগ্র উপহার দিয়েছিলেন ওকে। বিদেশে ছাপা এই ইংরেজি কমিক্সের বইগুলোর জেল্লাই আলাদা ছিল। আমাদের গড়পড়তা ইন্দ্রজাল কমিক্স সে তুলনায় বেশ সাদামাটা। গোটা স্কুলের ছেলেপিলে হামলে পড়েছিল যে'দিন অমল বই তিনটে নিয়ে স্কুলে এসেছিল।

আমার খুব হিংসে হয়েছিল। হিংসে আর ছেলেমানুষির মিশেল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর৷ অমলের ব্যাগ থেকে সংগ্রহের এক নম্বর খণ্ডটা আমি সরিয়ে ফেলি৷ অমল কোনওদিন সন্দেহ করেনি। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমার এই নিরেট বোকা ক্লাসমেটটি আমার কুকর্মটি ধরতেই পারেনি৷ কিন্তু সে'দিন অফিসে তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বুঝলাম যে অমলের কোনওদিন সন্দেহ হয়নি কারণ সে আগাগোড়াই জানত বইটা কে সরিয়েছে।অথচ, একদিনের জন্যেও অমল আমায় বুঝতে দেয়নি যে ব্যাপারটা সে জানে। 

অমলের মত বন্ধু আর একটিও দেখলাম না। আর আমি নিজে ধান্দাবাজ,  জীবনটা ধান্দাবাজদের সান্নিধ্যেই কাটিয়ে দিলাম। 

অমল চিরকালই প্রাণ দিয়ে বই ভালোবাসত৷ রক্ত-মাংসের বন্ধুদের মত বই কোনওদিন লোক ঠকায়না৷  প্রথম ও তৃতীয় খণ্ডের সঙ্গে দ্বিতীয় খণ্ডের বিচ্ছেদটা ওকে ওই অল্পবয়সেও বড় দাগা দিত৷ মরার আগে সেই বিচ্ছেদ ঘোচানোর ব্যবস্থাটা সে করে গেল। 

আমার অপরাধটা ক্ষমার যোগ্য মনে হলে একদিন বাড়িতে এসো, ইন্টারভিউয়ের দরখাস্ত ছাড়াই। 
কেমন?

ইতি,

সুবিনয় দাসগুপ্ত।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু