Skip to main content

রবিবাবুর সমস্যা


- এই যে দাদা, দেশলাই আছে?

- নাহ্।

- আপনার বুঝি সে বদঅভ্যাস নেই?

- বিড়ির? নাহ্। নেই।

- একমিনিট৷ আপনার মুখটা কেমন যেন চেনাচেনা লাগছে..কোথায় দেখেছি বলুন তো?

- বইয়ে। বায়োস্কোপে। দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারে। 

- আরিব্বাস। রবিবাবু যে!

- ছদ্মবেশেও এসেও যে ধরা পড়ে যাব সে'টা ভাবিনি।

- ছদ্মবেশ ধারণ করতে গিয়ে সাধারণত সবাই নকল দাড়ি চাপায়৷ আর আপনাকে অরিজিনাল দাড়ি কামাতে হল। সত্যিই, আপনার ইকুইটির কতটা জুড়ে যে দাড়ি..।

- বললাম তো। দেশলাই নেই। তা সত্ত্বেও আপনি বকবক চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন বলুন তো?

- আসল আগুন তো আপনিই মশাই, দেশলাই তো সে তুলনায় ভিজে জনসন বাডস।

- যতসব থার্ড ক্লাস উপমা।

- তা বেশ তো। নোবেল তো আর আমি পাইনি৷ আপনিই দু'একটা হাইক্লাস জিনিস ছাড়ুন না।

- সে উপায় কী আর আছে ভাই৷ আমি যার স্বপ্নে আছি, তার পাতি ভাঙাচোরা ভাষার বাইরে গিয়ে তো কথা বলতে পারব না৷ ইন্টেলেকচুয়ালিও তার ঘোলাটে ব্রেনের লেভেলেই থাকতে হবে। কাজেই আমায় ঘাঁটানো বন্ধ করুন।

- ও, আই সী। আপনি তো আড্ডা দিতে পছন্দ করেন না।

- রাবিশ। সুকুমারের ব্যাটা কী এক ফালতু থিওরি সবার মাথায় ঢুকিয়ে গেল। তবে হ্যাঁ, এখন মনটন ভালো নেই। তাই গপ্পগুজবে মন দিতে পারছিনা।

- ও মা। আপনার আবার দুঃখ কীসের৷ দিব্যি অন্যের স্বপ্নে এসে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দুনিয়াদারির চিন্তা নেই, লেখালিখির হ্যাপা নেই৷ একটু গা এলিয়ে ফুর্তি করুন দেখি। এ ব্যাটার কখন ঘুম ভেঙে যাবে আর অমনি স্বপ্নের আমি আর আপনি হাওয়া। রিল্যাক্স। তাস খেলবেন? একসেট আছে পকেটে। হবে নাকি একহাত? রংমেলান্তি? 

- না ভায়া। বললাম যে। মনভার। চারদিকে কেমন ফাঁকাফাঁকা ভাব। 

- ও। বুঝেছি। এখানকার হাওয়ার স্বপ্নদেখিয়ের মনখারাপের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। তা'তেই যত গোল।

- ঠিক তাই। স্পষ্ট বুঝছি এ গন্ধ মনখারাপের। অথচ আমি এ মনখারাপের তল পাচ্ছিনে ভাই। 

- তাই বুঝি অমন গোমড়া হয়ে বসে?

- গোমড়া হব না ভায়া? যে মানুষের স্বপ্নের মধ্যে সেঁধিয়েছি, তাঁর ভাষা, ভাবনা সবই অত্যন্ত পানসে। অথচ তার সরল মনখারাপকে কিছুতেই স্পষ্টভাবে ঠাহর করতে পারছিনা। এ যে ক্যালামিটি। আমার গান, কবিতা, গল্পে প্রতিটি বাঙালি আজও নাকি নিজের মনখারাপের উপশম খুঁজে পায়। আর আমি এ স্বপ্নদেখিয়ের মনখারাপটুকু অ্যানালাইজ করে উঠতে পারছি না?

- মেধা। সংবেদনশীলতা। ভালোবাসতে পারার ক্ষমতা। এ'সব বিষয়ে আপনার নখের যোগ্য এ দুনিয়ায় আর কেউ আছে কি গুরুদেব?

- তুমিও ন্যাকাপনা শুরু করলে ভাই?

- নয়ত যে ক্রিটিসিজমটা হুট করে আপনার গায়ে এসে লাগত। 

- ক্রিটিসিজম?

- এ মনখারাপ আধুনিক। শুধু মেধা, সংবেদনশীলতা আর ভালোবাসা দিয়ে এর তল পাবেন না স্যার। রিল্যাক্স।

- ভারী চ্যাটাংচ্যাটাং কথা তো তোমার। কে হে তুমি? আর তুমি কি জানো এই স্বপ্নদেখিয়ের মনখারাপের আদত কারণটুকু?

- আজ্ঞে, যে ঘুমন্ত মানুষের স্বপ্নে আমরা আড্ডা দিচ্ছি, আমায় সে প্রচণ্ড ভক্তি করে। আপনি তার হিরো, আপনাকে এ শোকেসে আটকে রাখে। আর আমি তার ইয়ারদোস্ত, আমায় সে বালিশের পাশে রেখে ঘুমোয়। আমার নাম টেনি। আর হ্যাঁ, আমি চিনি এই মনখারাপকে। কিন্তু ওই যে বললাম, ইন্টেলিজেন্স আর সেনসিটিভিটি দিয়ে এ দুঃখ মাপতে পারবেন না রবিবাবু। এ মনখারাপ বুঝতে দরকার গুলবাজের কলজে। সে'টা আপনার নেই, আমার আছে।

- এ মনখারাপ কীসের ভাই টেনি?

- স্বপ্নদেখিয়ে ভদ্রলোকের ওয়াইফাই ডাউন আর মোবাইলেও সিগনাল নেই। কাজেই ট্যুইটারের তর্ক আর ফেসবুকের ঝগড়া দু'টোই আপাতত থেমে রয়েছে৷ হাজার খানেক অমিত-লাবণ্য  মিলেও এ মনখারাপ ট্যাকেল করতে পারবে না স্যার। কাজেই আপনি চাপ নেবেন না। কেমন?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু