Skip to main content

অরূপ ঘোষালের শহর

- এক্সকিউজ মি।

- আপ মুঝে বুলা রহে হ্যায়?

- আরে হ্যাঁ রে বাবা। আপনাকেই বুলা রহে হ্যায়।

- আরে, আপনিও বাঙালি যে।

- নমস্কার। সঞ্জয় ঘোষ। 

- নমস্কার। আমি অরূপ ঘোষাল। কিন্তু দিল্লীর রাস্তার এই ভীড়ের মধ্যে আমায় বাঙালি বলে ঠাহর করলেন কী করে বলুন দেখি? আমার চেহারা বা পোশাকে তো আলাদা করে তেমন কিছু..।

- না না। চেহারা বা পোশাক নয়। তবে এই যে। এই যে ভাজাভুজিওলার ঠেলায় অমন লোভাতুর উঁকিঝুঁকি মারলেন এবং কয়েক সেকেন্ডের মাথায় উদাস হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তারপর মেঘলা আকাশের দিকে চেয়ে একটা প্রকাণ্ড দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অর্থাৎ আপনার প্রাণ চপ তেলেভাজার জন্য আনচান করছে৷ কিন্তু এই বেসনে চোবানো পাউরুটি ভাজাকে ক্লাসিকাল তেলেভাজার মর্যাদা দিতে ঠিক মন সরছে না। বিড়বিড়ও করলেন খানিকটা। স্পষ্ট শুনতে পাইনি তবে লিপ-মুভমেন্ট ট্র‍্যাক করে মনে হল একটানা খানিকক্ষণ "ধুরশালা" বললেন।

- আপনিই বলুন না। এই ব্রেডপকোড়া দিয়ে কি ছাই বৃষ্টির বিকেলের জিভের সুড়সুড় মেটানো যায়? ব্যাটা পকোড়া-ভাজিয়ে আবার পুদিনার চাটনি মাখিয়ে সার্ভ করছে। টোটাল ডিসাস্টার।

- দিল্লী তা'হলে ঘুরতে আসেননি। পাকাপাকি ভাবে এসেছেন। আর সদ্য এসেছেন। বেশিদিন হয়নি।

- কলকাতা থেকে এই মাস দুয়েক হল এসেছি। ইয়ে, আপনি কি গোয়েন্দা নাকি মশাই? বুঝলেন কী করে?

- ঘুরতে বেরোলে বাঙালির আদেখলাপনার শেষ থাকে না। দিল্লী বেড়াতে এসে আপনি ব্রেডপকোড়াকে অমন রেগেমেগে উড়িয়ে দিতেন না। বরং 'যস্মিন দেশে যদাচার' বলে হাসিমুখে খেতেন এবং খাওয়ার আগে মোবাইলে ছবিও তুলতেন৷ কিন্তু আপনি নির্ঘাৎ দিল্লী এসেছেন বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে, পাকাপাকি ভাবে। কাজেই ইন্টেন্সলি 'বাংলা আমার জীবনানন্দ মোডে' রয়েছেন। ফুলুরিকে রিপ্লেস করতে গিয়ে যে আপনি যন্ত্রণাবোধ করবেন, সে'টাই স্বাভাবিক।

- আপনি কিন্তু ঘ্যাম লোক। আচ্ছা, আর একটা কথা বলুন। দিল্লী পাকাপাকি এসেছি, সে'টা কী'ভাবে ডিডিউস করেছেন বুঝলাম৷ কিন্তু আমি যে সদ্য এসেছি সে'টা কী ভাবে বুঝলেন?

- হেহ্। দাদাভাই, বছরখানেক যেতে দিন৷ এই রাস্তা-গলিঘুপচিগুলো নেভিগেট করতে আর গুগল ম্যাপের দরকার হবেনা। চেনা সবজিওলাকে দেখে হেসে মাথা নাড়বেন। যাতায়াতের পথের অদরকারী দোকানের দোকানিদের মুখগুলোও ক্রমশ মুখস্থ হয়ে আসবে৷ ছেলেমেয়ের ডাক্তার খুঁজে পাবেন৷ নিজের পেয়ারের পানের দোকান বেছে নেবেন। এক একটা শহরের বৃষ্টি এক এক রকমের মনখারাপ আর ভালোলাগা নিয়ে আসে; একসময় দিল্লীর বৃষ্টির হিসেবকিতেবও ঠাহর করতে পারবেন৷ আর যে কলকাতাটুকুকে আপনি বয়ে বেড়াচ্ছেন, সে'টুকু একসময় এই শহরেরই কোনও এক কোণে খুঁজে পাবেন। নতুন শহর একসময় সয়ে আসবেই। তখন দেখবেন। ব্রেডপকোড়াকে ভালোবাসতে না পারলেও, পরিচিতির স্নেহটাকে অগ্রাহ্য করতে পারবেন না৷ সেই স্নেহর বশেই হয়ত একদিন এক প্লেট ব্রেডপকোড়ার পাশে সামান্য পুদিনার চাটনিও চেয়ে নেবেন৷ স্নেহ অতি গোলমেলে জিনিস। বুঝলেন না। অতি গোলমেলে।

- হুম৷ আচ্ছা সঞ্জয়বাবু, খাবেন নাকি ব্রেডপকোড়া? সদ্য আলাপ হল, একটু চা আর ওই পকোড়া দিয়েই না হয়..। তবে, আমিই খাওয়াব কিন্তু..।

- ঝুলোঝুলিই যখন করছেন, তখন বলুন দেখি দু'প্লেট। আর হ্যাঁ, ওয়েলকাম টু দিল্লী। 

Comments

Unknown said…
বেশ ভালো লাগলো।।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু