Skip to main content

ভজা মাস্তানের মনকেমন

- ভজাদা, ও ভজাদা। চুক্কুস করে এক চুমুক হোক না।

- নাহ্। আজ ও'সব গিলতে মন চাইছে না রে মন্টু।

- আজ এত বড় একটা কাজ হাসিল হল৷ আর তুমি মাইরি নিরামিষ থাকবে?

- কাজ হাসিল? তাই বটে।

- ভজাদা, কেসটা কী বলবে?

- নাহ্। তোদের মোচ্ছব চলুক। আমি বরং ছাতে যাই।

- ও, ভজাদা। কী হলো গো। বলো না। ভজাদা গো। বলো না,  বলো।

- কাজটা ভালো হলো রে মন্টে?

- ওই, ক্লাবঘর তৈরির ব্যাপারটা?

- ওই কাজটাই তো আমরা হাসিল করলাম। তার জন্যেই তো কানু দত্ত আমাদের জন্য ঢালাও মদ-মাংসের ব্যবস্থা করে দিল। তাই না? কিন্তু কাজটা কি আদৌ ভালো হল?

- আমরা লোচ্চা লোফার মাস্তান মানুষ৷ কানুদার মত হাড়বজ্জাত নেতাদের হয়ে একে মারি তাকে ঠুকি, তোলা আদায় করি৷ আমাদের কি কাজের ভালো মন্দ নিয়ে ভাবলে চলে ভজাদা? তুমিই তো বলতে, আমাদের কাজ দিনে  ক্যালানো আর রাতে কেলিয়ে পড়া, সাতপাঁচ ভাবার দায়িত্ব আমাদের নয়।

- হ্যাঁ। আমরা গুণ্ডা, নচ্ছার। আমাদের না হয় সাতপাঁচ ভাবতে নেই। ভদ্রলোকের ভদ্রলোকামি দেখে আমরা খ্যাঁক করে হাসবো, সে'টাই হওয়া উচিৎ৷ কিন্তু আজ ব্যাপারটা একটু গুলিয়ে গেল রে মন্টু।

- গুলিয়ে গেল? কী করে ভজাদা?

- টোটাল ঘেঁটে ঘ। হারুর ওই একচিলতে ভাঙাচোরা টিনের বাড়ি। সে'টুকুতে সাত সাতটা মানুষ ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকত। হারুকে এমনিতেও পাড়ার কেউ পাত্তা দিত না। নীচু জাত বলে কথা। ওই পাতি লোকটার উপর চড়াও হলাম আমরা। খেদিয়ে দিলাম৷ আর ওর সেই টিনের বাড়িটুকু গুঁড়িয়ে দিয়ে কানু দত্ত পাড়ার ছেলেদের জন্য ক্লাবঘর বানিয়ে দিলো। 

- বেশি ভাবছ গুরু। এমনিতেও, ও জমি আদৌ হারুর নাকি?

- নয়, না?

- কানু দত্তর কাছে ও জমির কাগজ আছে৷ আমি অবিশ্যি চোখে দেখিনি। তবে শুনেছি আছে।

- হবে হয়ত। আমার কানে শুধু বাজছে ও বাড়ি ভাঙার সময় হারুর বউ আর দুই মেয়ের কান্না। 

- আজ পর্যন্ত তো অনেক বস্তিই আমরা ভেঙেছি গুরু৷ চোখের জল কি সে'খানে পড়েনি?

- তুই ভাবছিস আজ হঠাৎ এই ভজামাস্তান হারুর বউ মেয়ের কান্না নিয়ে ভাবতে বসল কেন? 

- ঠিক তাই ভজাদা। আমি ঠিক সে'টা ভেবেই ভেবড়ে যাচ্ছি। কেসটা কী?

- না না৷ আমি জাত গুণ্ডা, ওদের কান্না পাত্তা দেওয়ার মত নেকু আমি নই। কিন্তু শুধু একটা ব্যাপার আজ আমায় একটু ঘাবড়ে দিল রে মন্টে।

- কী ব্যাপার ভজাদা?

- চিরকাল জেনে এসেছি আমাদের গুণ্ডামিকে আর কানু নেতার নষ্টামিকে ভদ্রলোকেরা ঘেন্না করে। আমাদের ভয় পায় এ'টা ঠিক, এমন কী কানুদাকে সে ভদ্রলোকেরা ভোটও দেয়। কিন্তু মনেপ্রাণে ঘেন্না করে, কানুদাকে, আমাদেরও। অথচ এই হারুর টিনের বাড়িটা গুঁড়িয়ে বড় ক্লাবঘর তোলার ব্যাপারটাকে দেখলাম পাড়া ভদ্রজনেরাও প্রাণ খুলে বাহবা দিচ্ছে৷ যারা এদ্দিন আমাদের দেখলেই সরে পড়ত, আজ দেখলাম তারাই জড়িয়ে ধরছে। পাড়ার যে সুশীল মানুষজন কানু দত্তকে জোচ্চর বলত, তারাই দেখলাম আজ কানুকে মালা পড়িয়ে নতুন ক্লাবঘরে বরণ করে নিল।  

- ভদ্রলোকের ভদ্রলোকামি তোমায় ব্যথা দিচ্ছে ভজাদা?

- তাই হবে হয়ত।

- আমি আর কী জানি বলো। তবে শুনেছি হারুর ওই টিনের ঘরটার জন্য পাড়ার কালচার নষ্ট হচ্ছিল। দেখতেও বিচ্ছিরি। তার তুলনায় এই নতুন ক্লাবঘর টোটাল ঝিনচ্যাক। তাছাড়া রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যে হবে, ক্যারম কম্পিটিশন হবে; প্রচণ্ড কালচার কালচার একটা ব্যাপার হবে ভজাদা।

- তাই হবে হয়ত৷ জানিস মন্টু, কাল রাতের দিকে হারুদের দেখলাম। স্টেশন রোডের কাছের ওই শনিমন্দিরের চাতালে শুয়ে। হারুটাকে দেখে যা মনে হল গাঁজা টেনে উল্টে পড়ে। আর হারুর ছোট ছেলেটার বোধ হয় জ্বর। রবীন্দ্রনাথফাথে ওদের কিস্যু হবে না। ছোটোলোক তো৷  বিদেয় হয়েছে আপদ গেছে। আমি ছাতে যাই রে মন্টে।

- চলো, গুরু। আমিও ছাতেই যাই৷ দাঁড়াও, আগে মাদুরটা নিয়ে আসি গিয়ে। মদ মাংস না হয় আজ থাক।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু