Skip to main content

ফেরতবাবার দরবারে


- কী চাই।

- আজ্ঞে আপনার আশীর্বাদ চাই ফেরতবাবা। আপনার আশীর্বাদ।

- ও'সব ফাঁপা আওয়াজ দিয়ে লাভ নেই৷ আশীর্বাদ! ন্যাকাপনা। ধান্দা ছাড়া ফেরতবাবার দরবারে কেউ আসে না। 

- না না। ভক্তিটা কিন্তু জেনুইন।

- বটে? বেশ৷ তুমি আশীর্বাদ চাইলে৷ আমি মা তারার নাম করে আশীর্বাদ দিলাম৷ এ'বারে তা'হলে কেটে পড়।

- অমন করে বলবেন না বাবা। বড় আশা নিয়ে এসেছি৷ হারানো জিনিস খুঁজে পেতে হালিশহর থেকে হরিয়ানার তাবড় বাবুরা ছুটে আসে আপনার কাছে। আমি অবিশ্যি এ পাড়াতেই থাকি। নাম সুকুমার দত্ত। পাতি প্রাইভেট ফার্মের ক্লার্ক বাবা। কিন্তু সাহস করে আপনার কাছে চলেই এলাম।

- অঢেল ন্যাকপনা, তার ওপর বিনয়। তুমি তো হীরের টুকরো খদ্দের হে।

- খদ্দের বলবেন না ফেরতবাবা৷ খদ্দের বলবেন না। আপনি এত বড় তান্ত্রিক। আমি তো ভক্ত।

- তন্ত্রসাধনা করি বটে৷ সেই তন্ত্রের জোরেই লোকের হারানো জিনিসের হদিস পাই। কিন্তু তা বলে আমি আলাভোলা সাধক নই। আদ্যোপান্ত ব্যবসায়ী। আর আবারও বলি৷ খুলি বাগিয়ে, জটা মাথায়, গায়ে ছাই মেখে বসে আছি বলেই পরমসাধক বলে আমার ঠ্যাং জড়িয়ে ধরতে হবে, অমন হাতুড়ে তান্ত্রিক আমি নই। তুমি ফেলবে কড়ি আর আমি আমার তন্ত্রবলে তোমার হারানো জিনিসের খোঁজ বলে দেব। 

- আপনি মহাপুরুষ। 

- প্রতিটা হারানো জিনিস প্রতি একশো কুড়িটাকা ফিজ। তা সে বাড়ির দলিলই হোক বা নস্যির কৌটো। 

- সত্যিই...এত ভক্তের সমাগম আপনার দরবারে ফেরতবাবা।

- বাজে গপ্প ফেঁদে শেষে ডিসকাউন্ট চেয়ে বসবে ভেবেছ? সে গুড়ে বালি। 

- ও মা। আমি অ্যাডভান্স ডিপোজিট করে এসেছি তো। 

- কাজের কথায় এসো বাছাধন। বলি কী হারিয়েছে?

- আজ্ঞে, এক জোড়া কানের দুল। অনেকটা সোনা দিয়ে গড়ানো। রীতিমতো ওজন আছে। বিবাহবার্ষিকীতে বউকে..সারপ্রাইজ দেব ভেবেছিলাম..।

- বটে। কবে কেনা?

- আজ্ঞে গত হপ্তায়। কিনে সে'টাকে বইয়ের আলমারির এক কোণে লুকিয়ে রেখেছিলাম আর কী। কিন্তু গতকাল সকালে উঠেই..।

- উঁ।

- কী ভাবছেন ফেরতবাবা? অমন চোখ বুজে..। এ'টাই কি আপনার প্রসেস?

- শোনো ভাই সুকুমার। এই যে তোমার একশো কুড়ি টাকা। রিটার্ন। রাখো।

- সে কী বাবা। অপরাধ নিলেন নাকি?

- না না। কিন্তু এ দুলের খবর আমি পাচ্ছি না।

- কিন্তু আপনার কাছে তো কোনও কিছুই...। বদ পলিটিকাল নেতারা নাকি আপনার কাছে এসে নিজেদের বিবেকের খোঁজ পেয়ে যায়। আর এই সামান্য দুলটা..।

- তুমি তো ভারি বেআক্কেলে মানুষ হে। তান্ত্রিকের মুখে মুখে তক্ক? দেব নাকি শাঁকচুন্নি লেলিয়ে?

**

- এ'টা কী হলো গুরু?

- কীসে কী।

- ওই যে। সুকুমার দত্তর কেনা দুলের খোঁজ তুমি পাওনি, এমনটা তো হতে পারে না।

- তুই চ্যালা। গুরুর সব ব্যাপারে নাক গলিয়ে তোর দরকারটা কী?

- আমি ফেরতবাবার ইন্টার্ন। চ্যালা বলে হ্যাটা করো কেন।

- অত কথায় তোর কাজ কী।

- বলো না। সুকুমার দত্তকে ওর সেই সোনার দুলের খোঁজ দিলে না কেন? তুমি সত্যিই ও দুলের খবর পাওনি?

- হরিপদ কাঠের মিস্ত্রি। কী একটা কাজে দু'দিন আগে সে সুকুমার ব্যাটার ড্রয়িং রুমে গেছিল। সুযোগ পেয়ে বইয়ের তাক থেকে দুলের বাক্সটা সেইই সরালে..।

- চুরি? তুমি এত বড় কথাটা চেপে গেলে গুরু?

- হরিপদ সে'দিন রাতের বেলা সোহাগ করে সে দুল নিজের বউকে পরিয়েও দিল রে। 

- তা বলে চুরির মাল? তুমি বরদাস্ত করলে?

- চুরিট অপরাধ বটে। তবে ঘুষ দেওয়াটাও কম অন্যায় নয়।

- ঘুষ?

- ওই কানের দুল ছাড়াও সুকুমার দত্তর আরও একটা জিনিস হারিয়েছে রে চ্যালা। স্পষ্ট দেখতে পেলাম। তা দেখেই তো ওর ফিজটা সোজা ফেরত দিয়ে দিলাম।

- সুকুমার দত্ত আর কী হারিয়েছে? দেখলে যখন তার খোঁজ দিলেনা কেন গুরু?

- সুকুমার আর তার স্ত্রী; নিজেদের মধ্যের ভালোবাসাটুকু তারা বেমালুম হারিয়ে ফেলেছে। বিশ্বাস কর, স্পষ্ট দেখলাম। পড়ে আছে শুধু উপহার চালাচালি আর দেখনাই। আর এ'সব উপহার নয় রে চ্যালা, স্রেফ ঘুষ। হরিপদ অন্যায় করেছে। তবে তন্ত্রমতে তাকে ক্ষমা করে দিলাম। সুকুমার না হয় অন্য ঘুষ খুঁজে নেবে'খন৷ আর দুলজোড়া পেয়ে হরিপদর বউয়ের হরিপদকে জাপটে ধরা আনন্দটুকু? লাখ টাকার রে চ্যালা। লাখটাকার।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু