Skip to main content

পতাকা আর চীফগেস্ট


- এই যে। দত্তবাবু। কাল সোয়া সাতটার মধ্যে আসছেন কিন্তু। পৌনে আটটায় বড়সাহেব এসে পৌঁছবেন৷ ফ্ল্যাগ হয়েস্টিং আটটায়।

- ধুস। পনেরোই অগস্টটাও ছাই পড়ল শনিবারে।

- নিজের মধ্যে মশাই একটু দেশাত্মবোধক ইয়ে জেনারেট করুন না।

- দেখুন গাঙ্গুলিদা, দেশাত্মবোধ নিয়ে অকারণ খোঁটা দেবেন না। মনে রাখবেন, আ ম্যানস হোম ইজ হিস ক্যাসেল। রিয়েল পেট্রিয়ট হিসেবে কাল আমার উচিৎ নিজের বাড়ির ছাতে তেরঙ্গা উত্তলন করা। বুল্টি জনগণমন গাইবে, বুল্টির মা স্পীচ দেবে। অফিসে বড়সাহেবকে চীফগেস্ট করে তেল দেওয়াটা আর‍ যাই হোক পেট্রিয়টিজম নয়। 

- স্বাধীনতা দিবস সন্তোষীমার ব্রত উদযাপন নয় যে ঘরের কোণে বসে কাজ সারবেন। দশজনের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তেরঙ্গাকে সেলুট না করলে বুকের মধ্যে হুহুটা ফীল করবেন কী করে।

- পতাকার প্রতি রেস্পেক্ট তো ভালো কথা। কিন্তু আমাদের মূল দায়িত্ব তো বড়সাহেবের প্রতি নুয়ে পড়া।

- ও'টা নুয়ে পড়া নয় দত্তবাবু৷ ও'টা ডিসিপ্লিন।

- নেতারা, বড়বাবুরা; সবাই এই স্বপ্নই দেখেন। এলেবেলে আমজনতা বুটলিকিংকে ডিসিপ্লিন হিসেবে চিনবে, সে'টাই তাঁদের কাছে আইডিয়াল স্টেট। 

- উফ। আপনি বড্ড ঘ্যাঁতা। 

- ব্রুটাল অনেস্টিকেও দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা ঘ্যাঁতামো বলেই মনে করেন।

- দত্তবাবু, কাল আপনি আসছেন তো? চীফগেস্টকে আপনিই এসকর্ট করে আনবেন৷ প্ল্যানিংয়ে সে'টাই আছে।

- না এসে আর উপায় কী বলুন।

- বুটলিক তা'হলে আপনাকেও করতে হয়।

- অর্ধেক মাইনে তো তাই করেই পাই গাঙ্গুলিদা।

- শুনুন। আপনার ওয়েল উইশার হিসেবে বলছি৷ অমন কাঠকাঠ কথা সব জায়গায় চলেনা। 

- যাকগে। আচ্ছা, গাঙ্গুলিদা। অফিসের অনুষ্ঠান তো ন'টার মধ্যে শেষ৷ তাই না?

- লেট মি সী। ফ্ল্যাগ হয়েস্টিং, জাতীয় সঙ্গীত, বড়সাহেবের স্পীচ। বাই দি ওয়ে, স্পীচটা আমি ড্রাফট করেছি, ট্যু থাজ্যান্ড থ্রি হান্ড্রেড ওয়ার্ডস। তারপরে অফিস কয়্যারের চারটে দেশাত্মবোধক গান। দু'টো ফেলিসিটেশন৷ মিষ্টির বাক্স ডিস্ট্রিবিউশন। হ্যাঁ, ন'টার মধ্যে শেষ। তারপর আপনি আপনার ক্যাসেলে গিয়ে পতাকা তুলুন, কামান দাগুন। ইউ আর ফ্রী। 

- ন'টা নাগাদ আমার সঙ্গে নতুনপাড়ায় যাবেন? 

- নতুনপাড়া? অফিসের পাশের ওই বস্তিতে?

- অনিল মাস্টার আমার সুপরিচিত। প্রতি পনেরোই অগস্ট নতুনপাড়ার কিছু চালচুলোহীন মানুষের জন্য রান্নাবান্না করেন। সামান্য ডাল, ভাজা, মাছের ঝোল৷ কিন্তু শ'তিনেক মানুষের জন্য রান্না, একটু অ্যাসিস্টেন্স পেলে ওর উপকার হয়। একটা পতাকা সে'খানেও পতপত করে ওড়ে কিন্তু। কথা দিচ্ছি গাঙ্গুলিদা, অফিসের ফ্ল্যাগহয়েস্টিং চেয়ে অনেক উঁচু লেভেলের হুহু জেনারেট হবে বুকের মধ্যে।

- আই উড হ্যাভ লাভড টু অ্যাকম্পানি ইউ৷ কিন্তু ইয়ে দত্তবাবু, বড়সাহেব স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সমস্ত কর্মীদের একটা ইমেল পাঠাতে চান। বেলার দিকেই যাবে সে'টা৷ একটু ইমোশনে সুড়সুড়ি দিয়ে আর কী। একটা খসড়া তৈরি করে রেখেছি। কালকের সকালের ইভেন্টের পর সেইটা ওঁকে দিয়ে চেক করিয়ে তারপর সবাইকে ইমেল করতে হবে। সে'টা যে বেশ সময় সাপেক্ষ।

- স্বাধীনতা দিবসের আগাম শুভেচ্ছা রইল গাঙ্গুলিদা। কাল কা ইভেন্ট মুবারক হো। এখন আসি। কাল ঠিক সাতটায় হাজির হচ্ছি বড়সাহেবকে বরণ করতে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু