Skip to main content

আসলি ওস্তাদ


- মুক্তিপণের টাকাটা পাওয়া গেল না মিস্টার শাসমল।

- বলেছিলাম তো নাটুবাবু। ব্যবসার যা অবস্থা, ব্যাঙ্কে অত টাকা থাকারও কথা নয়।

- কালোটাকাও কিছু নেই বলছেন?

- সে'খানেই কাঁচা কাজ করে ফেলেছেন আপনি। আমার পরিবারের কাউকে সরিয়ে ফেলে আমার কাছে র‍্যানসম ডিমান্ড করলে আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করলেও করতে পারতাম। আমার কালো টাকার হদিস তো অন্য কারুর জানার কথা নয়। 

- কাজটা যে কাঁচা হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে তার মাশুল আপনাকেই গুনতে হবে।

- খুন করে লাশ পুঁতে ফেলবেন? ইয়ে, ইন দ্যাট কেস আই উড প্রেফার সায়নাইড ওভার বুলেট। তবে বন্দুক আপনার, মুলুক আপনার। তাই ডিসিশনও আপনার। আমি শুধুই রিকুয়েস্ট করতে পারি।

- খুন না করে উপায় কী বলুন।  যে লাইনে যা দস্তুর৷ মুক্তিপণ না পেয়েও যদি আপনাকে জ্যান্ত ফিরিয়ে দিই, নাটুগুণ্ডার ইজ্জৎ থাকবে ভেবেছেন? আর কোনও ব্যবসায়ী ভয়টয় পাবে? দরদাম করে মুক্তিপণ কমানোরও উপায় নেই, আমার ব্র‍্যান্ড ইকুইটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কী আর বলব মিস্টার শাসমল, কিডন্যাপিংয়ের জগতটায় আজকাল বড্ড কাটথ্রোট কম্পিটিশন। 

- কাটথ্রোট? হেহ্। ভারী চমৎকার বললেন কিন্তু।

- তবে আপনার জন্য সায়নাইডের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বুলেট হজম করতে হবেনা।

- ভেরি কাইন্ড অফ ইউ নাটুবাবু। তবে ইয়ে..।

- বলুন না, নিশ্চিন্তে বলুন। খুন, কিডন্যাপিংটা আমার ব্যবসা হতে পারে। কিন্তু তাই বলে ইমোশনে খামতি নেই। 

- সায়নাইডটা সার্ভ করবেন কী করে?

- ওই যে, একটা পুরিয়া। তা'তেই থাকবে ওই বিষ। সরবিট্রেটের মত মুখে পুরতেই..ফিনিশ।

- মুখে যদি পুরতেই হয় নাটুবাবু, তা'হলে আর সরবিট্রেট কেন। একটা ক্ষীরকদমে যদি..।

- বেশ তা'হলে পুরিয়াটা ক্ষীরকদমে পুরে..।

- আর তার সঙ্গে..।

- চাহিদা বেড়ে চলছে কিন্তু।

- বেশি নয় কিন্তু..মাইনর একটা ব্যাপার।

- বেশ। শুনি।

- ক্ষীরকদকম মুখে পোরার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে কিশোরকুমারের ওই গানটা..ওই যে..ফুলো কী রং সে। ওইটা চালিয়ে দেবেন প্লীজ। প্লীজ।

***

- আর তারপর শাসমলদা?

- তারপর আবার কী। নাটুগুণ্ডা এনে দিলে ক্ষীরকদম। তার মধ্যে মিশিয়ে দিলে ইয়াব্বড় সায়নাইডের বড়ি। আর একটা ব্লুটুথ স্পীকারে চালিয়ে দিলে কিশোরবাবুর ওই গান; ফুলো কী রং সে, দিল কী কলম সে, লা লাললা লা লা লা। 

- আর আপনি সেই সায়নাইড মেশানো ক্ষীরকদম খেলেন?

- চারপিস ভায়া। চারপিস। নাটুর তো চক্ষু চড়কগাছ।

- সায়নাইড মেশানো ক্ষীরকদম?  চারপিস? তবু মরলেন না?

- পাঁচনম্বর চাইতেই তো নাটুগুণ্ডা আমার পা জড়িয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলে। বললে; "ওস্তাদ, ক্ষমা করো। তোমায় চিনতে পারিনি"। তারপর যত্ন করে নিজের মারুতি ভ্যানে চাপিয়ে নাটু আমায় বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেল। ইনফ্যাক্ট সে'দিন থেকে সে নিয়মিত আমার বাজার করে দিয়ে যায়।

- নাটুগুণ্ডা আপনার বাজার করে? 

- নয়তো আর তোমায় বলবো কেন বলো। বাজার করে শুধু তাই নয়। সন্ধ্যেবেলা বৃষ্টি পড়লেই নাটু হাজির হবে এক ঠোঙা চপ আর দু'বাক্স ক্ষীরকদম নিয়ে। কত বলি আরে এ'সবের দরকার নেই রে নাটু৷ কিন্তু কে শোনে কার কথা। শাসমল ওস্তাদ বলতে নাটু এক্কেবারে অজ্ঞান৷ সে পাগলা বলে কী জানো? "আপনার থেকে যদি কেউ টাকা ধার নিয়ে শোধ করতে গড়িমসি করে ওস্তাদ, তবে তার চামড়া তুলে গায়ে বিছুটি ঘষব"। বড় বেয়াড়া মেজাজ আমার নাটুর।

- আহ শাসমলদা, আমায় আবার নাটুর ভয় দেখানোর কী দরকার। আপনার ধারের টাকা সুদ সমেত সময়ের আগেই পেয়ে যাবেন। কথার নড়চড় হবে না।

- এই দ্যাখো কাণ্ড। তুমি কি ভাবলে আমি থ্রেট করছি? না হে। আমি পাতি ব্যবসায়ী। মাসে একবার তারাপীঠ যাই হে।  তোমার দরকারে না হয় দু'পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছি, তা নিয়ে তো আর আমার ঘুম নষ্ট হচ্ছে না। ওই, নাটুই শুধু মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেয়, কোথাও টাকা বাকি পড়ল কিনা। এই আর কী। ও'সব টাকাপয়সার মায়া আমার নেই হে। নেই।

- ইয়ে, শাসমলদা। অতগুলো সায়নাইড ক্ষীরকদম আপনি হজম করলেন কী করে?

- গোপন কথাটা বলেই দিই। শোনো হে, প্রাণে কিশোরকণ্ঠ গ্রহন করতে পারলে সায়নাইড বিকল হয়ে যায় যে।

- কী?

- ওই যে। নাটুর ব্লুটুথ স্পীকারে কিশোরের 'ফুলো কী রং সে' শুনতে শুনতে ক্ষীরকদমে কামড় দিচ্ছিলাম! ব্যাস, গুরুর কণ্ঠ কান বেয়ে প্রাণে নামতেই জিভের সায়নাইড বাবাজী হয়ে গেল গ্লুকোজের গুঁড়ো। বুঝলে হে,আসলি ওস্তাদ একজনই; কিশোর!

- এ তো রীতিমতো গুল!

- আমি গুলবাজ? আমার থেকে এতগুলো টাকা ধার নিয়ে আমায় গুলবাজ বলা? আমি নরম মানুষ, আমি না হয় চেপে যাব। কিন্তু নাটু এ'সব গুলতানি সহ্য করেনা কিন্তু দিবাকর।

- চটবেন না শাসমলদা। চটবেন না।

- টাকা ফেরত দেওয়ায় গড়িমসি আর কিশোরে সন্দেহ, মোটে ভালো কথা নয়। কেমন?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু