Skip to main content

সুভাষবাবু ও রাধামোহন

- আ...আপনি এসেছেন? 

- কী চাই?

- আ..আ..আ..আপনি সত্যিই এসেছেন?

- হাতে সময় কম।

- নমস্কার স্যার। সরি..স্যালুট স্যার.। থুড়ি..লহ প্রণাম।

- এ'সব আবার কী রাধামোহন?

- আ..আপনি আমার নামও জানেন? 

- নাম না জেনে তোমার বাড়িতে আসব ভেবেছ?

- নেতাজী অমর রহে।

- প্ল্যানচেটে ডেকে বলছ অমর রহে? তোমার সেন্স অফ হিউমর তো বেশ সরেস।

- মাফ করবেন হে মহামানব। হে স্বাধীনতার ইয়ে..মানে কাণ্ডারী..।

- এ তো মহাজ্বালায় পড়া গেল৷ বলি ক্লাস সিক্সের এস্যে লেখা কতক্ষণ চালাবে? প্ল্যানচেটের মাধ্যমে আমায় ডাকতে চেয়েছিলে কেন?

- সুভাষবাবু৷ সরি..পরমপূজনীয় নেতাজী..আপনি ফিরেছেন জানলে গোটা বাঙলা..না না..গোটা ভারতবর্ষ আনন্দে উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে উঠবে৷আমার আজ কী সৌভাগ্য... দু'হাজার কুড়ি সালে নেতাজি এসে পৌঁছলেন এই সামান্য অকাল্ট প্র‍্যাক্টিশনারের ড্রয়িংরুমে৷ আপনার সামনে আমি নতজানু স্যার।

- আত্মারা কখনও ফেরে না ভাই৷ ওই, মাঝেমধ্যে উঁকি দিয়ে যাই।

- আপনি মাঝেমধ্যে উঁকি দিলেই হবে৷ আপনার অনুপ্রেরণায় ভর দিয়ে আমরা সঘন গহন তমসা কাটিয়ে নতুন ভোরের দিকে এগিয়ে যাব।

- এই সেরছে। কী কাটাবে? 

- ওই যে স্যার। সঘন গহন তমসা। কাটিয়ে দেব। প্রতিটি সাচ্চা বাঙালি যে এদ্দিন আপনারই অপেক্ষায় বসেছিল।

- রাধামোহন।  আমি ফিরিনি৷ তোমার প্ল্যানচেটে ধরা দিয়েছি মাত্র৷ এ'বার বলো দেখি, অমন হন্যে হয়ে আমার খোঁজ করছিলে কেন?

- স্যার। আপনার অন্তর্ধানের ব্যাপারটা নিয়ে খচখচ কাটছিল না৷ অথচ ব্যাপারটা নিয়ে কেউই ঝেড়ে কাশছে না। তাই ভাবলাম এদ্দিনের প্যারানরমাল বিষয়ক পড়াশোনাটা কাজে লাগিয়ে যদি হর্সেস মাউথ থেকে কেসটা জানতে পারি। কী হয়েছিল বলুন দেখি স্যার? লেঙ্গিটেঙ্গির কেস ছিল নিশ্চয়ই কিছু? বাঙালিদের কপালেই যত ট্র‍্যাজেডি, তাই না স্যার?একটু খোলতাই করে বলুন না আদতে ঠিক কী হয়েছিল। সুযোগ পেয়েইছি যখন আসলি ব্যাপারটা না জেনে আপনাকে ছাড়ছি না কিন্তু।

- মেগাসিরিয়ালের আগামী এপিসোডে কী হবে মার্কা আগ্রহ নিয়ে ইতিহাস ঘাঁটতে নেই ভাই৷ ও প্রসঙ্গ বরং থাক৷ তা, আর কোনও প্রয়োজন আছে কী?

- আলবাত আছে স্যার৷  আপনাকে পাশে পেলেই আমরা আঁধার রজনীর তোয়াক্কা না করে দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমে পড়ব। শুধু আপনার সাপোর্টের অপেক্ষা৷ একটু গাইড করুন না, দেশের সেবাটেবা করি একটু।

- বটে? রাধামোহন? 

- হুকুম করে দেখুন না স্যার৷ আপনি চাইলেই লিটার লিটার রক্ত দিয়ে দেব। আপনি শুধু একবার বলে দেখুন৷ আপনার গাইডেন্স পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ব। রিয়েলি স্যার। আমরা আবার ধর্মে মহান হব, কর্মে মহান হব আর ওই নবদিনমণিও উদিবে। শুধু একটা চান্স দিন স্যার আমায়৷ একটা চান্স। আপনি বললেই লিটার লিটার রক্ত দিয়ে দেব৷ দেবই।

- দু'ফোঁটা রক্ত বরং হৈমবতীকে দিও।

- হৈমবতীটা কে নেতাজী?

- তোমার এই ঘরে একটা খুদে মশা ঘুরঘুর করছে৷ ভারী মিষ্টি মশাটি। খানিকক্ষণ আগেই নজরে পড়ল। আমি ওর নাম দিয়েছি হৈমবতী।  

- ইয়ে, ঠাট্টা করছেন স্যার?

- ঘাসের ওপর কাসুন্দি ছড়ালেই কি তা খাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠে ভাই? ঠাট্টা অতি মূল্যবান জিনিস, অপচয় করতে নেই। তোমার প্ল্যানচেটে সাড়া কেন দিলাম সে'টা বলি বরং। তুমি দেশের ও দশের সেবার করতে চাও, তাই না রাধামোহন? 

- ভারত আমার ভারতবর্ষ গুনগুন করতে করতে আমার চোখ ভিজে যায় স্যার। দেশের হয়ে সংগ্রাম করব৷ বিপ্লব করব।

- সে'সব হবে'খন৷ কিন্তু রাধামোহন, তোমার বাথরুমের নলটা অনেকক্ষণ খোলা রয়েছে। চৌবাচ্চা ভরে ভেসে যাচ্ছে অথচ নল জল ঢেলেই যাচ্ছে৷ তোমার বেসিনের কলও তুমি টাইট করে বন্ধ করার প্রয়োজন মনে করোনা। আগে জলের অপচয় আটকাও, কেমন? রক্ত দিয়ে সঘন গহন তমসা কাটানোর ব্যাপারটা না হয় আমরা পরে দেখব'খন৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু