Skip to main content

দত্তবাবুর রিপোর্ট


- এ'টা কী দত্ত?

- কেন স্যার?এ'বারের মান্থএন্ড রিপোর্ট। 

- মান্থএন্ড রিপোর্ট দিয়ে আমার লাইফ এন্ড করার তাল করছ ভাই দত্ত?

- ক..কেন স্যার?

- রিপোর্টটা সাবমিট করার আগে নিজে পড়ে দেখেছ?

- অবশ্যই। তিন তিনবার।

- পড়ে কী মনে হল? 

- নিজের বানানো রিপোর্ট সম্বন্ধে নিজে আর কী বলব বলুন স্যার। ওই, হিউমিলিটিতে আটকে যাই।

- তবু, কষ্টেসৃষ্টে বিনয় চেপে কিছু বলো।

- তা, এক কথায় চমৎকার। ক্যালিব্রি ফন্টটা আমার খুব প্রিয়, আর এই রিপোর্টে মানিয়েওছে ভালো৷ এরপর লাইন স্পেসিং বাড়িয়ে দেওয়ায় হলো কী; রিপোর্টটা সুদিং টু দ্যি আইজ হওয়ার পাশাপাশি আড়াই পাতার বদলে গিয়ে দাঁড়ালো সাড়ে পাঁচ পাতায়। অল্প কথা লম্বা প্রিন্ট আউটে প্রকাশ করতে পারায় যে কী অপরিসীম তৃপ্তি স্যার।

- বিনয় সত্যিই তোমায় বেঁধে রাখতে পারেনি বিনয়।

- পুরো সাড়ে পাঁচ পাতাই জাস্টিফাইড। বুলেটে সাজানো। জারগনগুলো বোল্ডে দেওয়া। আর সবচেয়ে বড় কথা, গ্রামারলিতে ফেলে ভাষাটুকু হাইক্লাস লেভেলে ঝালিয়ে নিয়েছি স্যার। আহা, এ রিপোর্ট পড়েও আরাম।

- রিপোর্টে ক্যালিব্রি, স্পেসিং, গ্রামারলি, বুলেট সবই তো আছে হে দত্ত৷ কিন্তু জুলাই মাসের হিসেবের বদলে জুনের ফিরিস্তি দিয়েছ যে।

- ওহ। জু..জুনের হিসেবই রয়ে গেছে কি? আসলে কপি পেস্ট এ'দিক ও'দিক করতে গিয়ে ওই মাইনর ইয়েটা...ইয়েটা..হয়ে গেছে বোধ হয়।

- মাইনর ইয়ে?

- ওই। বাহান্নর বদলে তিপ্পান্ন। তবে, লকডাউনের মরসুম।  সেলস,মার্কেট শেয়ার সবই ওই জুনে ডকে আর জুলাইয়ে গোল্লায়। ও নিয়ে আপনি ভাববেন না স্যার।

- আর এই রিপোর্ট তুমি সোজা বড়সাহেবকেও পাঠিয়ে দিলে? দত্ত?

- তা'তে কী স্যার? বড়সাহেব রিপোর্ট পড়বেন ভেবেছেন? তার হাতে কি এতই বাজে সময়? 

- বড়সাহেব রিপোর্ট পড়বেন না?

- বড়সাহেবরা রিপোর্টে চোখ বুলোবেন। ফন্টে তৃপ্ত হবেন, বুলেটে ঘায়েল। প্রথম প্যারার ভারিক্কি ইংরেজি পড়ে মাথা দোলাবেন, শেষ পাতার শেষ লাইনের অপটিমিজমে স্মিত হাসবেন। যে কোম্পানির বড়সাহেবরা এর বাইরে গিয়ে রিপোর্ট মন দিয়ে পড়া শুরু করেছেন, জানবেন সে কোম্পানির অবস্থা মোটে সুবিধের নয়।

- বটে? অতি-ব্যুরোক্রেসিই তবে আদত এফিশিয়েন্সি?

- এর উত্তর সোজাসুজি দেওয়াটা ঠিক হবে না স্যার।

- কেন দত্ত? হঠাৎ এই বাড়তি বিনয়?

- অভয় দিলে দু'টো কথা বলি। স্যার।

- বলে ফেলো হে ফন্টসম্রাট বুলেটরাজা, বলে ফেলো।

- সিনিয়র হয়ে আপনি আমার রিপোর্ট  এত খুঁটিয়ে পড়ছেন৷ নট আ ভেরি গুড সাইন স্যার। এরপর অফিসের আনাচেকানাচে গুজুরগুজুরফুসুরফুসুর শুরু হবে যে আপনার হাতে অঢেল সময়। গরীবের কথা বাসি হতে দেবেন না প্লীজ। জানবেন, অফিসের সিনিয়ররা সর্বক্ষণ শশব্যস্ত হয়ে ঘোরাঘুরি না করলে যে সমূহ ক্ষতি। 

- ভাগ্যিস তুমি ছিলে দত্ত। ভাগ্যিস তুমি ছিলে।

- আমি নগন্য ক্লার্ক স্যার। আপনারা রেখেছেন তাই আছি। না রাখলে বেমক্কা ভেসে যাওয়া। এ'টুকুই তো।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু