Wednesday, August 5, 2020

দত্তবাবুর রিপোর্ট


- এ'টা কী দত্ত?

- কেন স্যার?এ'বারের মান্থএন্ড রিপোর্ট। 

- মান্থএন্ড রিপোর্ট দিয়ে আমার লাইফ এন্ড করার তাল করছ ভাই দত্ত?

- ক..কেন স্যার?

- রিপোর্টটা সাবমিট করার আগে নিজে পড়ে দেখেছ?

- অবশ্যই। তিন তিনবার।

- পড়ে কী মনে হল? 

- নিজের বানানো রিপোর্ট সম্বন্ধে নিজে আর কী বলব বলুন স্যার। ওই, হিউমিলিটিতে আটকে যাই।

- তবু, কষ্টেসৃষ্টে বিনয় চেপে কিছু বলো।

- তা, এক কথায় চমৎকার। ক্যালিব্রি ফন্টটা আমার খুব প্রিয়, আর এই রিপোর্টে মানিয়েওছে ভালো৷ এরপর লাইন স্পেসিং বাড়িয়ে দেওয়ায় হলো কী; রিপোর্টটা সুদিং টু দ্যি আইজ হওয়ার পাশাপাশি আড়াই পাতার বদলে গিয়ে দাঁড়ালো সাড়ে পাঁচ পাতায়। অল্প কথা লম্বা প্রিন্ট আউটে প্রকাশ করতে পারায় যে কী অপরিসীম তৃপ্তি স্যার।

- বিনয় সত্যিই তোমায় বেঁধে রাখতে পারেনি বিনয়।

- পুরো সাড়ে পাঁচ পাতাই জাস্টিফাইড। বুলেটে সাজানো। জারগনগুলো বোল্ডে দেওয়া। আর সবচেয়ে বড় কথা, গ্রামারলিতে ফেলে ভাষাটুকু হাইক্লাস লেভেলে ঝালিয়ে নিয়েছি স্যার। আহা, এ রিপোর্ট পড়েও আরাম।

- রিপোর্টে ক্যালিব্রি, স্পেসিং, গ্রামারলি, বুলেট সবই তো আছে হে দত্ত৷ কিন্তু জুলাই মাসের হিসেবের বদলে জুনের ফিরিস্তি দিয়েছ যে।

- ওহ। জু..জুনের হিসেবই রয়ে গেছে কি? আসলে কপি পেস্ট এ'দিক ও'দিক করতে গিয়ে ওই মাইনর ইয়েটা...ইয়েটা..হয়ে গেছে বোধ হয়।

- মাইনর ইয়ে?

- ওই। বাহান্নর বদলে তিপ্পান্ন। তবে, লকডাউনের মরসুম।  সেলস,মার্কেট শেয়ার সবই ওই জুনে ডকে আর জুলাইয়ে গোল্লায়। ও নিয়ে আপনি ভাববেন না স্যার।

- আর এই রিপোর্ট তুমি সোজা বড়সাহেবকেও পাঠিয়ে দিলে? দত্ত?

- তা'তে কী স্যার? বড়সাহেব রিপোর্ট পড়বেন ভেবেছেন? তার হাতে কি এতই বাজে সময়? 

- বড়সাহেব রিপোর্ট পড়বেন না?

- বড়সাহেবরা রিপোর্টে চোখ বুলোবেন। ফন্টে তৃপ্ত হবেন, বুলেটে ঘায়েল। প্রথম প্যারার ভারিক্কি ইংরেজি পড়ে মাথা দোলাবেন, শেষ পাতার শেষ লাইনের অপটিমিজমে স্মিত হাসবেন। যে কোম্পানির বড়সাহেবরা এর বাইরে গিয়ে রিপোর্ট মন দিয়ে পড়া শুরু করেছেন, জানবেন সে কোম্পানির অবস্থা মোটে সুবিধের নয়।

- বটে? অতি-ব্যুরোক্রেসিই তবে আদত এফিশিয়েন্সি?

- এর উত্তর সোজাসুজি দেওয়াটা ঠিক হবে না স্যার।

- কেন দত্ত? হঠাৎ এই বাড়তি বিনয়?

- অভয় দিলে দু'টো কথা বলি। স্যার।

- বলে ফেলো হে ফন্টসম্রাট বুলেটরাজা, বলে ফেলো।

- সিনিয়র হয়ে আপনি আমার রিপোর্ট  এত খুঁটিয়ে পড়ছেন৷ নট আ ভেরি গুড সাইন স্যার। এরপর অফিসের আনাচেকানাচে গুজুরগুজুরফুসুরফুসুর শুরু হবে যে আপনার হাতে অঢেল সময়। গরীবের কথা বাসি হতে দেবেন না প্লীজ। জানবেন, অফিসের সিনিয়ররা সর্বক্ষণ শশব্যস্ত হয়ে ঘোরাঘুরি না করলে যে সমূহ ক্ষতি। 

- ভাগ্যিস তুমি ছিলে দত্ত। ভাগ্যিস তুমি ছিলে।

- আমি নগন্য ক্লার্ক স্যার। আপনারা রেখেছেন তাই আছি। না রাখলে বেমক্কা ভেসে যাওয়া। এ'টুকুই তো।

No comments: