Skip to main content

আইডিয়ালিস্ট


- ঘুষ?

- অফারটাকে আপনি ঘুষ হিসেবে কেন দেখছেন মিস্টার সান্যাল। আমাদের জন্য আপনার যে'টুকু ইনকনভিনিয়েন্স হবে, এ'টা তার জন্য সামান্য একটা কম্পেনসেশন।

- দেখুন মিস্টার তালুকদার। আমি নিজের দায়িত্ব সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন। আর নিজের কাজটাকে ইনকনভিনিয়েন্স বলে আমি মোটেও মনে করিনা। আপনার ফার্মের ফাইলটা আমি দেখেছি৷ ইট উইল বি প্রসেসড ইন ডিউ কোর্স।

- ডিউ কোর্সে তো হবেই৷

- অফ কোর্স। তাছাড়া আপনাদের প্রপোজাল আমি নিজে রিভিউ করেছি৷ ইউ হ্যাভ প্রেসেন্টেড আ ভেরি কমপেলিং কেস। বড়সাহেবদের মনে ধরবে নিশ্চয়ই। কাজেই এই বিশেষ কম্পেনসেশনের চিন্তাটা বাদ দিতে পারেন।

-  মিস্টার সান্যাল৷ বড়সাহেবরা তো স্রেফ সই করবেন। ডিসিশন মেকিং তো আপনার লেভেলেই..।

- বড়সাহেবরা ভেন্ডর সিলেকশনের মত জরুরি প্রপোজালে অন্ধের মত সই করবেন, আপনার এমন ধারণা কিন্তু ভুল।

- আমরা ছাপোষা ভেন্ডর। কিন্তু আপনার গুরুত্বটা বুঝি মিস্টার সান্যাল৷ আমাদের প্রপোজালটা যে ইনফিরিয়র কোয়ালিটির নয়, সে'টা আপনি জানেন। আপনি স্পেশ্যালি রেকমেন্ড করে আমাদের ফাইলটা এগিয়ে দিলে সার্ভিসের দিক থেকে আপনাদের ফার্মের যে কোনও ক্ষতি হবে না সে আশ্বাস আমি দিতে পারি।

- আপনাদের প্রপোজাল নিশ্চয়ই ইনফিরিয়র কোয়ালিটির নয়৷ কিন্তু আমার দায়িত্ব শ্রেষ্ঠ প্রপোজালটা রেকমেন্ড করার।

- সে কাজটা সহজ করে দিতেই আমাদের এই সামান্য অফার।

- ঘুষ।

- শব্দটা কানে বড্ড ঠেকে মিস্টার সান্যাল৷ ইউ আর মাচ বিগার দ্যান সাচ চীপ ওয়ার্ডস।

- মাফ করবেন তালুকদারবাবু। এথিকস-এর ব্যাপারে আমি একটু একগুঁয়ে।

- আমি আপনাকে জোর করতে পারিনা। তবে, ব্যাপারটা যদি রিকনসিডার করতে পারেন..প্লীজ গিভ মি আ কল। 

**

- এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি, ফোন ধরছ না কেন?

- সরি মিলি। ওই তালুকদারকে মনে আছে? 

- ওই সেই ফর্সা টাকমাথা? ক্লাবে দেখা হয়েছিল গত মাসে? তোমাদের অফিসের সেই সাপ্লায়ার? ভারী গায়ে পড়া লোক কিন্তু। 

- অফিসের বড়বাবুদের গায়ে পড়ে ইম্প্রেস না করলে চলবে কেন। সে এসে গল্প জুড়েছিল, তাই আর ফোনটা ধরিনি। ঘুষ দিতে এসেছিল।

- সে কী! অফিসে এসে সামনাসামনি ঘুষ অফার করলে? কী দুঃসাহস। তা, তুমি কী বললে?

- এরা গভীর জলের মাছ। এদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়াটা বিপদজনক।  তবে পত্রপাঠ বিদেয় করেছি।

- আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ। 

- আইডিয়ালিস্ট ছেলেকে বিয়ে করেছ শুনে তোমার প্রমোটার বাবা একসময় বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন কিন্তু।

- আইডিয়ালিজম আর সাকসেসকে যে দিব্যি পাশাপাশি বসানো চলে, সে'টা তুমি প্রমাণ করে ছেড়েছ। বাবা তো আজকাল সর্বক্ষণ তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷  

- আজকের ডিনারটা ভুলে যাওনি তো?

- না রে বাবা না। সে'টা জিজ্ঞেস করতেই তো ফোন করেছিলাম। কখন পিক করছ? 

**

- হ্যালো হালদারবাবু।

- গুড ইভনিং সান্যাল সাহেব। 

- আমার জিনিসটা?

- ডায়মন্ড সেটটা আজ সকালে আমি নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছি। ওই, ম্যাডামের জন্য আপনি যে'টা পছন্দ করে দিয়েছিলেন। তা আপনারা যেখানে ডিনার করতে যাবেন, সে'খানেই ডাইরেক্টলি পাঠিয়ে দেব না হয়? 

- এই বুদ্ধি নিয়ে ব্যবসা চালান কী করে? বউয়ের সামনে এসে আপনার লোক সেই সেট হাতে ধরিয়ে দেবে? আমার মানইজ্জত ফ্র‍্যাকচার না করালেই নয়, তাই না?

- ওহ হো। সরি সান্যাল সাহেব। সরি। আমি বরং ও'টা এখুনি আপনার অফিসেই পাঠিয়ে দিচ্ছি৷ 

- আধঘণ্টার মধ্যে যেন চলে আসে। আর একটু ডিসক্রিটলি..।

- শ্যিওর। ইয়ে, সান্যালসাহেব৷ আমাদের ফাইলটা কি এগোল?

- এগোবে৷ তবে শুধু এই ডায়মন্ড সেটে চিঁড়ে ভিজবেনা হালদারবাবু।

- কিন্তু আমাদের তো তেমনই কথা হয়েছিল..।

- তালুকদার এসেছিল আজ অফিসে৷ ওদের ফার্মও কম্পিট করছে৷ 

- ওহ।

- কোয়ালিটির দিক থেকে, ওদের ফাইলটা কিন্তু নেহাৎ ফেলনা নয়।

- সান্যালসাহেব। তালুকদার যাই অফার করেছে আমি সে'টার ওপরে যাবই। ও নিয়ে আপনি ভাববেন না। শুধু আমাদের ফাইলটা যেন...।

- আধঘণ্টার মধ্যে যেন জিনিসটা আমার হাতে চলে আসে। তারপর ওয়াইফকে পিক করে ডিনারে যাওয়া। দেরী হলেই মুশকিল৷ আজকাল ট্র‍্যাফিকের যা অবস্থা..।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু